সান নিউজ ডেস্ক : ১৩ জানুয়ারি, হিলি ট্রেন ট্র্যাজেডি দিবস। আজ থেকে ২৮ বছর আগে উত্তরাঞ্চলের জেলা দিনাজপুরের হিলি রেলস্টেশনে দুটি ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষে বহু হতাহতের ঘটনা ঘটে। ভয়াবহ দিনটির কথা এখনো ভুলতে পারেনি স্থানীয়রা। তাই দিনটি উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন।
আরও পড়ুন : কণ্ঠশিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা’র জন্ম
১৯৯৫ সালের ১৩ জানুয়ারি, দিনটি ছিল শুক্রবার। রাত সোয়া ৯টার দিকে গোয়ালন্দ থেকে পার্বতীপুরগামী ৫১১ নম্বর লোকাল ট্রেনটি হিলি রেলস্টেশনের ১ নম্বর লাইনে এসে দাঁড়ায়।
সৈয়দপুর থেকে খুলনাগামী ৭৪৮ নম্বর আন্তঃনগর সীমান্ত এক্সপ্রেস ট্রেনটি এর কিছুসময় পর একই লাইনে প্রবেশ করে। এ সময়ই ঘটে ভয়াবহ সংঘর্ষ। এতে বিকট শব্দে গোয়ালন্দ লোকাল ট্রেনের ইঞ্জিনসহ দুটি বগি দুমড়েমুচড়ে আন্তঃনগর ট্রেনের ওপর উঠে যায়।
ভয়াবহ এই ট্রেন দুর্ঘটনায় দুটি ট্রেনের অর্ধশতাধিক যাত্রী নিহত হয়। আহত হয় দুই শতাধিক। নিহতদের অনেকের দেহ ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে থাকে।
আরও পড়ুন : স্বাধীন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বঙ্গবন্ধুর শপথ গ্রহণ
স্থানীয় জনগণ, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের লোকজনের সহায়তায় লাশ উদ্ধারসহ আহতদের দ্রুত উপজেলা হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠায়। সে সময় সরকারিভাবে নিহতের সংখ্যা ২৭ জন ঘোষণা করা হয়। আর আহতের সংখ্যা বলা হয় শতাধিক।
তৎকালীন বিএনপি সরকারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া সংবাদ পেয়ে ছুটে আসেন। ঘোষণা দেন নিহত ও আহতদের আর্থিক ক্ষতিপূরণের। এদের মধ্যে অনেকে ক্ষতিপূরণ পেলেও কয়েকজন তাদের ক্ষতিপূরণের টাকা আজও পায়নি।
সেদিনের কথা আজও মনে পড়লে শরীর শিউরে উঠে জানিয়ে হাকিমপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি জাহিদুল ইসলাম জাহিদ বলেন, সে রাতে দুর্ঘটনার সময়ে আমরা হিলি বাজারে প্রেসক্লাবে বসে ছিলাম।
আরও পড়ুন : নোবেল জয়ী অধ্যাপক হর গোবিন্দ খোরানা'র জন্ম
এমন সময় একটি বিকট শব্দ শুনতে পাই। এতো বিকট শব্দ ছিলো যে আমরা স্থির করতে পারছিলাম না, কোথায় কি হচ্ছে। ছুটে যাই রেলস্টেশনের দিকে। গিয়ে দেখি এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা, শত শত মানুষের আহাজারি।
তিনি আরও বলেন, ক্ষতবিক্ষত মানুষের দেহের বিভিন্ন অংশ পড়ে আছে। আহতরা বাঁচার জন্য আহাজারি করছে, অনেকের শরীর ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। বুঝে উঠতে পারছিলাম না আমার কি করা উচিত।
অবশেষে স্থানীয়দের সহযোগিতায় আহতদের উদ্ধার করে হিলি হাসপাতালে নিয়ে যাই। এতো লাশ, এতো রক্তমাখা ক্ষতবিক্ষত দেহ আগে কখনও দেখিনি। সেই দিনের ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনাটি আজও হিলির মানুষকে আতঙ্কে রাখে।
আরও পড়ুন : ‘বিদ্রোহী’ কবিতা প্রকাশের ১০১ বছর
ক্ষতিগ্রস্ত কয়েকটি পরিবার ও এলাকার লোকজন জানান, তাৎক্ষণিক ট্রেন দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে স্থানীয় প্রশাসন ও রেল কর্তৃপক্ষ তাদের প্রাথমিক তদন্তে হিলি রেলস্টেশনের কর্তব্যরত স্টেশন মাস্টার ও পয়েন্টসম্যানের দায়িত্বহীনতাকেই দায়ী করেছেন।
হিলি রেলওয়ে একতা ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন বুলু জানান, প্রতি বছরের ন্যায় এবছরও হিলি রেলস্টেশন প্লাটফর্মে ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহতদের রুহের মাগফিরাত কামনায় দোয়া মাহফিল হবে। পাশাপাশি আলোচনা সভা ও কালো ব্যাজ ধারণের কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, হিলি রেলওয়ে স্টেশন হচ্ছে বাংলাদেশের রংপুর বিভাগের দিনাজপুর জেলার হাকিমপুর উপজেলার হিলিতে অবস্থিত একটি রেলওয়ে স্টেশন।
আরও পড়ুন : মাদারীপুরের পিঠা উৎসবে দর্শনার্থীদের ঢল
এটি বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের ডানদিকে অবস্থিত এবং সীমান্ত পেরোনোর আয়োজন সংবলিত স্থান। স্টেশনের অন্যদিকে ভারতের দক্ষিণ দিনাজপুরের হিলি অবস্থিত।
বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে হিলি সীমান্ত দিয়ে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ব্যবসা-বাণিজ্য হয়ে থাকে। এখানে তুলনামূলক হারে চোরাকারবারির সংখ্যা বেশি।
হিলি রেলওয়ে স্টেশন দিয়ে যেসব ট্রেন চলাচল করে নিম্নে তা উল্লেখ করা হলো :
আরও পড়ুন : জনপ্রিয় সঙ্গীত শিল্পী এ আর রহমান ‘র জন্ম
একতা এক্সপ্রেস, দ্রুতযান এক্সপ্রেস, পঞ্চগড় এক্সপ্রেস, রূপসা এক্সপ্রেস, সীমান্ত এক্সপ্রেস, বরেন্দ্র এক্সপ্রেস, তিতুমীর এক্সপ্রেস, নীলসাগর এক্সপ্রেস, কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস, রকেট এক্সপ্রেস, উত্তরা এক্সপ্রেস এবং কিছু মালবাহী ও লোকাল ট্রেন।
সান নিউজ/এইচএন