নিজস্ব প্রতিবেদক:
কোরবানির পশুর চামড়া যেন নষ্ট না হয়, সে কাজটি তদারকি করতে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) নির্দেশ দিয়েছে সরকার। শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারি নির্দেশনা অনুসারে বেশিরভাগ জেলায় চামড়া সংরক্ষণ তদারকি করছে জেলা প্রশাসকের নেতৃত্ব জেলা প্রশাসন। তারপরেও দেশের বিভিন্ন জেলায় চামড়া যথাযথ সংরক্ষণ পদ্ধতি অনুসরণ না করায় পচে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। দাম না পেয়ে রাস্তার পাশে ফেলে রাখার ঘটনাও ঘটেছে। দেশের বিভিন্ন জেলার দায়িত্বে নিয়োজিত জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
এদিকে চামড়া নষ্ট হয়ে যাওয়া বা পচে যাওয়ার জন্য সচেতনতার অভাবকে দায়ী করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, সামান্য দায়িত্ববোধ নিয়ে কাজ করলে জাতীয় এই সম্পদটি হয়তো নষ্ট হতো না। যিনি লাখ টাকা দিয়ে পশু কোরবানি দিচ্ছেন তিনি যদি মাত্র ৭০ টাকার লবণ চামড়ায় লাগানোর দায়িত্বটি নিতেন তাহলে এভাবে হয়তো জাতীয় সম্পদ নষ্ট হতো না। একইভাবে মাদ্রাসা মসজিদ বা এতিমখানা কর্তৃপক্ষ বিনামূল্যে লাখ টাকা বা তার বেশি দামের চামড়াটি পাচ্ছেন, কিন্তু তিনিও দামি চামড়াটিতে ৭০ টাকার লবণ লাগানোর দায়িত্বটি নিতে চান না। ফলে জাতীয় সম্পদ নষ্ট হওয়ার বা পচে যাওয়ার বা রাস্তার পাশে ফেলে রাখার দুঃসংবাদ শুনতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ শফিকুজ্জামান।
তিনি বলেন, নিয়ন্ত্রণ সেলে অসংখ্য কল এসেছে। সবাই লবণ লাগিয়ে চামড়া নিজেদের বাড়িতে বা প্রতিষ্ঠানে সংরক্ষণ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।
রবিবার (২ আগস্ট) বিকেলে সারা দেশের চামড়ার পরিস্থিতি বিষয়ে জানতে চাইলে গণমাধ্যমকে এসব ঘটনা জানান কোরবানির পশুর চামড়া সংরক্ষণ, ক্রয়-বিক্রয় ও পরিবহন সংক্রান্ত যেকোনও সমস্যা সমাধানে চালু করা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণ সেল-এর দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা যুগ্ম সচিব শফিকুজ্জামান নিজে।
তিনি জানান, চামড়া বাংলাদেশের অপার সম্ভাবনাময় সম্পদ। এ সম্পদ রক্ষায় সরকার তথা জনসাধারণ সবারই কমবেশি দায়িত্ব রয়েছে। যেভাবেই হোক এ সম্পদ রক্ষা করতেই হবে।
এদিকে সারা দেশ থেকেই এ বছর কোরবানির চামড়া রাস্তার পাশে পড়ে থাকা, ফেলে দেওয়ার সংবাদ পাওয়া যাচ্ছে। এ অবস্থা নিরসনে বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে প্রত্যেক জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ শফিকুজ্জামান আরও জানান, রাজধানীর বাইরে চামড়ার সবচেয়ে বড় হাট হচ্ছে নাটোর। সেখানে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দুজন কর্মকর্তাকে স্ট্যান্ডবাই রাখা হয়েছে। সেখানে তারা সারা দেশ থেকে আসা চামড়া সংরক্ষণ কাজ মনিটর করছেন। এর বাইরে জেলা প্রশাসক তো রয়েছেনই। তিনি জানিয়েছেন, পাচার ঠেকাতে কোরবানির পরবর্তী ৭২ ঘণ্টা রাজধানী থেকে রাজধানীর বাইরে চামড়াবাহী ট্রাক চলাচল নিষিদ্ধ রয়েছে। একইভাবে জেলাগুলো থেকেও চামড়াবাহী ট্রাক জেলার বাইরে চলাচল বন্ধ রয়েছে। রাজধানীর চামড়ার বড় বাজার হচ্ছে লালবাগের পোস্তা। সেখানেও যাতে চামড়া ঠিকমতো সংরক্ষণ করা হয় সে কাজটি মনিটর করার দায়িত্বে সরকারি কর্মকর্তারা রয়েছেন বলে জানা গেছে।
এদিকে নির্ধারিত মূল্যে চামড়া বিক্রি ও যথাযথ প্রক্রিয়ায় সংরক্ষণ করা হচ্ছে কি না তা তদারকি করতে অভিযান শুরু করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। কোরবানির পর থেকেই রাজধানীর মিরপুর, পল্লবী, ধানমন্ডি, গুলশান, বাড্ডা, হাজারীবাগসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালানো হয়।
মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার জানান, রাজধানী ঢাকায় দুটি টিমসহ দেশের ৬১ জেলায় সরকার নির্ধারিত মূল্যে চামড়া বিক্রি হচ্ছে কি না এবং যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে সংরক্ষণ করা হচ্ছে কি না তা তদারকি করা হচ্ছে।
এর আগে ‘জাতীয় সম্পদ চামড়া, রক্ষা করবো আমরা’ স্লোগানে কাঁচা চামড়া সংরক্ষণ পদ্ধতি বিষয়ক লিফলেট বিলি করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
সান নিউজ/ এআর