নিজস্ব প্রতিবেদক:
জাতিসংঘের মিয়ানমার বিষয়ক বিশেষ দূত অধ্যাপক ইয়াং হি লি বলেছেন, আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতের (আইসিজে) সিদ্ধান্ত মিয়ানমার যাতে এড়িয়ে না যেতে পারে, সে জন্য সতর্ক থাকতে হবে।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। এসময় তিনি জোর দিয়ে বলেন, এ জন্য মিয়ানমারকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে।
২১ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার আইসিজেতে উল্লিখিত বিচারের রায় ঘোষণা হয়। সংবাদ সম্মেলনে রায়ের বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে জাতিসংঘের দূত বলেন, এ বিষয়ে কী হবে, তা নিয়ে কোনো ধারণা করতে চাই না। তবে আমি এতটুকু বলতে পারি, যে সিদ্ধান্তই হোক, মিয়ানমারের উচিত হবে তা মেনে নেয়া। পাশাপাশি সংকট নিরসনে মিয়ানমার যাতে দায়িত্বে অবহেলা না করে, তা নিশ্চিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে কাজ করতে হবে।
রোহিঙ্গা পরিস্থিতি দেখতে ইয়াং হি লি ১৫ থেকে ২৩ জানুয়ারি বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ড সফর করেছেন। তিনি থাইল্যান্ড থেকে বাংলাদেশ সফরে আসেন। বাংলাদেশ সফরকালে তিনি রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেন।
এছাড়া সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। জাতিসংঘের এ বিশেষ দূত গত বছরের জানুয়ারি মাসে কক্সবাজার রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেছেন। সে সময় তিনি থাইল্যান্ডও সফর করেন। তবে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি দেখতে বেশ কয়েকবার মিয়ানমার সফরে যেতে চাইলেও সে দেশের সরকার তাকে প্রবেশে অনুমতি দেয়নি।
সংবাদ সম্মেলনে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে রোহিঙ্গা ইস্যুতে চীন-রাশিয়ার ভূমিকা নিয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, নিরাপত্তা পরিষদে রাশিয়া ও চীনের ভূমিকা লজ্জাজনক। নিরাপত্তা পরিষদে তাদের প্রতি যে দায়িত্ব ছিল, তা পালনে তারা ব্যর্থ হয়েছে।
তিনি বলেন, চীন এখন বিশ্ব নেতৃত্বের জায়গায় যেতে চলেছে। বিশ্ব নেতৃত্ব দিতে হলে মানবাধিকারকে সম্মান দিতে হবে।
জাতিসংঘের এ বিশেষ দূত আরো বলেন, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে পরিচালিত নির্যাতনের দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করতে নতুন একটি অ্যাডহক আন্তর্জাতিক আদালত স্থাপন করা দরকার। আগামী মার্চে জেনেভাতে জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলে আমি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন পেশ করব। সেখানে আমি এ বিষয়ে বিস্তারিত লিখব।
তিনি আরো বলেন, সিয়েরালিওন, রুয়ান্ডা বা বসনিয়া হার্জেগোভিনায় যেভাবে গণহত্যার বিচার হয়েছে, এ ক্ষেত্রেও একই ধরনের সুপারিশ করব আমি।
গত ৬ বছর ধরে মিয়ানমারের বিষয়ে র্যাপোটিয়ার হিসেবে কাজ করছেন ইয়াং হি লি। এ বছরের মার্চে তার চুক্তি শেষ হচ্ছে। মার্চেই জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদে তিনি রোহিঙ্গাদের নিয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেবেন।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর পূর্ব-পরিকল্পিত ও কাঠামোগত সহিংসতা জোরদার করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। হত্যাকাণ্ড, সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগের বাস্তবতায় জীবন বাঁচাতে নতুন করে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে সাড়ে সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা।
এই নৃশংসতাকে ‘গণহত্যা’ আখ্যা দিয়ে ২০১৯ সালের ১১ নভেম্বর জাতিসংঘের আদালত ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস (আইসিজে)-এ মামলা করে গাম্বিয়া। মামলায় প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে রোহিঙ্গাদের সুরক্ষা ও সংঘাত আরো তীব্রতর না হওয়ার জন্য জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দিতে আদালতের প্রতি আহ্বান জানায় দেশটি।
আজ অন্তর্বর্তী রায়ে রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতে (আইসিজে) দোষী সাব্যস্ত হয়েছে মিয়ানমার। নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগে অবস্থিত এই আদালতে মামলার অন্তর্বর্তী রায় পড়ে শোনান আইসিজে’র প্রধান বিচারপতি আব্দুলকোয়াই আহমেদ ইউসুফ।
রায়ে রোহিঙ্গা গণহত্যা বন্ধে মিয়ানমারকে চারটি অন্তবর্তী আদেশ দেয়া হয়েছে। আইসিজে’র ১৭ জন বিচারকের সমন্বয়ে গঠিত বিচারিক দল এই আদেশ জারি করেন।
আদেশগুলো হলো:
১.জেনোসাইড কনভেনশন ২ অনুযায়ী রোহিঙ্গাদের হত্যা, শারীরিক বা মানসিক নিপীড়ন কিংবা ইচ্ছাকৃতভাবে আঘাত করা যাবে না।
২.গণহত্যা কিংবা গণহত্যার প্রচেষ্টা বা ষড়যন্ত্র না করার জন্য আইন শৃঙ্খলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশ।
৩.মিয়ানমারকে অবশ্যই ৪ মাসের মধ্যে লিখিত জমা দিতে হবে যেন তারা সেখানে পরিস্থিতি উন্নয়নে কী ব্যবস্থা নিয়েছে। এরপর প্রতি ৬ মাসের মধ্যে আবার প্রতিবেদন দেবে।
৪.গাম্বিয়া এই প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে তার পরিপ্রেক্ষিতে আদালতের কাছে আবেদন করতে পারবে।
সান নিউজ/সালি