সান নিউজ ডেস্ক : উপমহাদেশের ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ। এ দলের হাত ধরেই স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র বাংলাদেশের সৃষ্টি। দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় রয়েছে দলটি। এ দেশের সবচেয়ে বেশি উন্নয়ন-অগ্রযাত্রাও আওয়ামী লীগের হাত ধরে।
আরও পড়ুন : চলচ্চিত্র শিল্প ঘুরে দাঁড়াচ্ছে
টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা দলটির চোখ এখন আগামী জাতীয় নির্বাচনে। তার ঠিক এক বছর আগে ২২তম জাতীয় সম্মেলন করতে যাচ্ছে দলটি। স্বাভাবিকভাবেই ক্ষমতাসীন দলটির নেতৃত্ব নিয়ে কৌতূহল সবার মধ্যে। কারা আসছেন দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে?
১৯৮১ সালের পর থেকে আওয়ামী লীগের সভাপতি পদ নিয়ে কৌতূহল নেই। কারন, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে ‘অবিকল্প’ মনে করেন দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা। ফলে সম্মেলনে নজর থাকে শুধুই সাধারণ সম্পাদক পদের দিকে। তবে এবার সেটিও নেই।
বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এ পদে যে ‘হ্যাট্রিক’ করতে যাচ্ছেন, তা মোটামুটি নিশ্চিত বলে জানিয়েছ সংশ্লিষ্টরা। ফলে এবার আওয়ামী লীগের সম্মেলনে সবার দৃষ্টি ‘প্রথম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক’ পদে। যদিও নেতৃত্ব চূড়ান্ত হবে সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে।
আওয়ামী লীগের শীর্ষ-পর্যায়ের নেতারা বলছেন, চ্যালেঞ্জিং সময়ের এ সম্মেলনের মাধ্যমে গঠিত কমিটিতে তেমন কোনো বড় পরিবর্তন আসবে না। কিছু পদোন্নতি, দায়িত্বে রদবদল ও খুব অল্পসংখ্যক নেতাকে বাদ এবং নতুন কয়েকজনকে অন্তর্ভুক্ত করা হতে পারে।
পূর্বের ২১ বারের সম্মেলনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ছয়জন নতুন সভাপতি ও ৯ সাধারণ সম্পাদক পেয়েছে। এবারও সেই সংখ্যা অপরিবর্তিত থাকতে পারে বলেই ধারণা দলের নেতৃবৃন্দের।
আরও পড়ুন : শনিবার বন্ধ থাকবে যেসব সড়ক
সভাপতি হিসেবে শেখ হাসিনা দশম বারের মতো এবং ওবায়দুল কাদের টানা তৃতীয় মেয়াদ অর্থাৎ হ্যাট্রিক করতে যাচ্ছেন।
প্রস্তুতি শেষ, মঞ্চে চেয়ার থাকবে ১২০টি :
আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন উপলক্ষে ১১টি উপ-কমিটি কাজ করছে। প্রথা অনুযায়ী- সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির চেয়ারম্যান দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা ও সদস্যসচিব সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
সম্মেলন সফল করতে রাত-দিন পরিশ্রম করছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। দফায় দফায় বৈঠক, দাওয়াতপত্র বিতরণ, গঠনতন্ত্র সংযোজন, বিয়োজন, ঘোষণাপত্র পরিমার্জন, মঞ্চ সাজসজ্জাসহ আনুষঙ্গিক সব কাজ প্রায় শেষ করেছেন। এবারের সম্মেলনের স্লোগান ‘উন্নয়ন অভিযাত্রায় দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়’।
ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সম্মেলনের মূল মঞ্চ তৈরির কাজ শেষ। পাশাপাশি সাংস্কৃতিক পর্বের জন্য তৈরি হচ্ছে আলাদা মঞ্চ। মূল মঞ্চে চারটি সারিতে চেয়ার সাজানো হবে। প্রথম সারিতে দলের সভাপতি শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বসবেন।
দ্বিতীয় সারিতে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, সিনিয়র নেতা ও প্রেসিডিয়াম সদস্য, বাকি দুটিতে বসবেন কেন্দ্রীয় নেতারা। সবমিলিয়ে মঞ্চে ১২০টি চেয়ার রাখা হবে।
আওয়ামী লীগের মঞ্চ ও সাজসজ্জা উপকমিটির সদস্যসচিব ও দলের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বলেন, পদ্মা সেতুর ওপরে নৌকার আদলে তৈরি ৮০ ফুট বনাম ৪৪ ফুট মঞ্চ তৈরির কাজ শেষপর্যায়ে। মূল মঞ্চের উচ্চতা হবে সাত ফুট। মূল মঞ্চে চার ভাগে চেয়ার সাজানো হবে। এছাড়াও পর্যাপ্ত পরিমাণ এলইডি মনিটর থাকবে। তাতে সম্মেলনের কার্যক্রম দেখা যাবে।
আরও পড়ুন : সম্মেলনে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা রেখেছি
বাজেট কমেছে, দাওয়াত পাননি বিদেশিরা :
বিশ্বের চলমান অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাব বাংলাদেশেও সমভাবে পড়েছে। অর্থনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে এবারের সম্মেলন সাদামাটাভাবে করছে আওয়ামী লীগ। প্রথম থেকেই খরচ কমানোর তাগিদ দিয়ে আসছেন দলের সভাপতি শেখ হাসিনা। মঞ্চ তৈরিসহ সার্বিক প্রস্তুতি সেভাবেই সম্পন্ন করছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতৃবৃন্দ।
২০১৯ সালের সর্বশেষ সম্মেলনে বাজেট ছিল তিন কোটি ৪৩ লাখ। এবারের সম্মেলনে বাজেট তিন কোটি ১৩ লাখ। এ বাজেট অনুমোদন করেছে দলের জাতীয় কমিটি।
সম্মেলনে বিদেশিদেরও দাওয়াত দেওয়া হয়নি। তবে কেন্দ্রীয় ১৪ দল, জাতীয় সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি (জাপা), বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলসহ (বিএনপি) নির্বাচন কমিশনে (ইসি) নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোকে সম্মেলনে দাওয়াত দিয়েছে আওয়ামী লীগ।
আরও পড়ুন : রাজশাহী নগর পুলিশ পেল নতুন কমিশনার
ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রথম অধিবেশন :
শনিবার (২৪ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টায় ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শান্তির প্রতীক পায়রা উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের পর কেন্দ্রীয় নেতারা মঞ্চে আসবেন।
আধা ঘণ্টাব্যাপী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করা হবে। পরে শোক প্রস্তাব উত্থাপন করবেন দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া।
সাধারণ সম্পাদকের প্রতিবেদন উপস্থাপন করবেন ওবায়দুল কাদের। স্বাগত বক্তব্য রাখবেন অভ্যর্থনা কমিটির আহ্বায়ক শেখ ফজলুল করিম সেলিম। সভাপতি শেখ হাসিনার বক্তব্যের মধ্য দিয়ে সম্মেলনের প্রথম অধিবেশন শেষ হবে।
আরও পড়ুন : নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তা ঝুঁকি নেই
কাউন্সিল অধিবেশন ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে হবে :
প্রথম অধিবেশন শেষে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে শুরু হবে সম্মেলনের কাউন্সিল অধিবেশন। এ অধিবেশনে দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন করা হবে। দলের নেতৃত্ব নির্বাচনের জন্য গঠন করা হয়েছে তিন সদস্যের নির্বাচন কমিশন।
সান নিউজ/এইচএন