সান নিউজ ডেস্ক: সরকার পতনের আন্দোলনের ডাক দেওয়া বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, সরকার পতন এত সোজা না।
আরও পড়ুন: পিটার হাসের নিরাপত্তায় যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ
রোববার (১৮ ডিসেম্বর) রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় এ কথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিজয় আমরা এনেছি বিজয়ের পতাকা সমুন্নত রাখতে হবে। যুদ্ধাপরাধীরা যাদের বিচার হয়েছে, তারা যাতে ক্ষমতায় এসে দেশ ধ্বংস করতে না পারে, সেদিকে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।
এ সময় বিজয়ের মাসে বিএনপির আন্দোলনের ডাক দেওয়ার সমালোচনা করে তিনি বলেন, বিএনপি বিজয়ের মাসে বিজয় অনুষ্ঠান করবে, সেটি না করে তারা সরকার উৎখাত করবে। এতই সোজা?
আরও পড়ুন: ৩৩ শতাংশ নারী কোটা মানেনি কোনো রাজনৈতিক দল
আওয়ামী লীগ পারে, আইয়ুব খানকে আমরা উৎখাত করেছি, যুদ্ধে পরাজিত করেছি। জিয়াকে পারি নাই হাতে, কিন্তু যেখানে গিয়েছে আন্দোলন তার বিরুদ্ধে হয়েছে, এরশাদকে উৎখাত করেছি, খালেদা জিয়া ৫ ফেব্রুয়ারি ভোট চুরি তাকে উৎখাত করা হয়েছে। আবার ২০০৬ সালে ভোট চুরি করতে চেয়েছিলো ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার দিয়ে সেটাও বাতিল করেছি।
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে চক্রান্ত ষড়যন্ত্র করতে পারবে...এটা করে ২০০১ সালে আমাদের ক্ষমতায় আসতে দেয়নি, তবে সেজন্য ভোগান্তি এদেশের মানুষের হয়েছে। এখন মানুষের সজাগ থাকতে হবে আবার ভোগান্তিতে পড়তে হবে নাকি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিজয়ের পতাকা সমুন্নত রেখে আমরা এগিয়ে যাবো উন্নয়নের পথে অপ্রতিরোধ্য গতিতে গড়ে তুলবো স্মার্ট বাংলাদেশ।
বিএনপির আন্দোলনে বামদের সমর্থনে বিস্ময় প্রকাশ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, বিএনপি জামায়াত জোট মিলে এবং তাদের সাথে আরও কিছু পার্টি দাঁড়ালো...আরেকটা জিনিস খুব অবাক লাগে, কোথায় লেফটিস (বামপন্থি) আর কোথায় রাইটিস (ডানপন্থি)। যারা লেফটিস তারা মনে হলো ৯০ ডিগ্রি ঘুরে গেছে। অর্থাৎ সেই জামায়াত বিএনপি তাদের সাথে আমাদের বাম, অতিবাম, স্বল্প বাম, তীব্র বাম, কঠিন বাম; সব যেন এক হয়ে এক প্ল্যাটফর্মে। ওই যে বলেছিলো না, বিচিত্র এই দেশ সেলুকাস। সেই কথাই মনে হয়, কোথায় তাদের আদর্শ, আর কোথায় তাদের নীতি আর কোথায় কি?
আরও পড়ুন: ষড়যন্ত্র করলে তার প্রতিবাদও করতে জানি
এ সময় প্রশ্ন তুলে শেখ হাসিনা বলেন, কি কারণে? যারা হত্যাকারী, দশ ট্রাক অস্ত্র চোরাকারবারিতে সাজাপ্রাপ্ত আসামি, গ্রেনেড হামলায় আইভী রহমনাসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হত্যায় যার বিচার হয়েছে এবং সাজাপ্রাপ্ত আসামি, দেশের টাকা পাচার করে সাজাপ্রাপ্ত আসামি, সব ধরনের অপকর্ম, এতিমের অর্থ আত্মসাৎ করা, এই সমস্ত সাজাপ্রাপ্ত আসামি তাদের নেতৃত্বে এত বড় বড় তাত্ত্বিক এত বড় বড় কথা বলে এত কিছু করে; তাহলে এরা এক হয়ে যায় কিভাবে? সেটাই আমাদের প্রশ্ন।
বামপন্থিদের স্বাধীনতা বিরোধীদের সাথে যুক্ত হয়ে আওয়ামী লীগকে কেন হটাতে হবে সেই প্রশ্ন রেখে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আলবদর রাজাকারকের ক্ষমতায় বসিয়েছিলো জিয়াউর রহমান। আর সেই দলে যুক্ত হলে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় থেকে হটাতে হবে?
আর ১০ ডিসেম্বর, যেদিন থেকে আমাদের বুদ্ধিজীবী হত্যা শুরু হলো ইতিহাসের সেইদিনে তাদের সাথে হাত মিলিয়ে, সমর্থন দেয় কিভাবে? আমার অবাক লাগে! এরা তো ইতিহাস জানে, জানে না তা তো না।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের অপরাধটা কি? আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে দেশের মানুষকে খাবার দিচ্ছে। দেশের গৃহহীন-ভূমিহীনদের ঘর দিচ্ছে। রোগে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দিচ্ছে। শিক্ষার ব্যবস্থা করে দিচ্ছে সংবিধানে মানুষের যে মৌলিক চাহিদাগুলো বর্ণিত প্রতিটি চাহিদা আমরা পূরণ করে যাচ্ছি।
দেশের জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সারাজীবনের সংগ্রাম করার কথা তুলে ধরে তার কন্যা শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতার ডাকে সমস্ত জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়েছে এবং যুদ্ধের মাধ্যমে দেশ স্বাধীন করেছে। মানুষের জীবন মান উন্নত করার জন্য তিনি জীবনটাই উৎসর্গ করেছেন। বছরের পর বছর কারাগারে কাটিয়েছে। তার যে দৃঢ় চেতনা আদর্শ লক্ষ্য থেকে এতটুকু সরে যাননি। সংগ্রামে মাধ্যমে তিনি সাফল্যে পৌঁছাতে পেরেছিলেন। একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ, যেখানে টাকা পয়সা সম্পদ, বিদেশি কারেন্সি কিছুই ছিলো না। ক্ষেতে ফসল ছিলো না, তারপর সড়ক, সেতু, রাস্তা ধ্বংস, রেলসেতু, স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা সব ধ্বংসপ্রাপ্ত। সেখান থেকে তিনি দেশকে গড়ে তুলেছিলেন।
আরও পড়ুন: ১ ফেব্রুয়ারি, ৫ আসনে উপ-নির্বাচন
পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে দেশকে বিপথে নেওয়া হয়েছিলো উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, জিয়া ক্ষমতা দখল করে খুনিদের ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জাতি করে বিচারের পথ রুদ্ধ করে তাদের পুরস্কৃত করেছিলো। বাংলাদেশের জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়ে কুক্ষিগত করে রেখেছিলো। ২১ বছর এদেশের মানুষ বঞ্চনা সহ্য করেছে। ’৭৫ এর পর শুধু শোষণ-বঞ্চনার শিকার হয়েছে এদেশের মানুষ। বঙ্গবন্ধু যতটুকু দেশ এগিয়ে নিয়েছিলেন ততটুকুই পিছিয়ে দিয়েছিলো। আবার খালেদা জিয়া যখন ক্ষমতায় আসে সেই শোষণ-বঞ্চনা, খুন-নির্যাতন-ধর্ষণের মতো ঘটনা শুরু হয়। সেখান থেকে আওয়ামী লীগ দেশকে সঠিক পথে ফিরিয়ে এনেছে।
তিনি বলেন, পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে যারাই ক্ষমতায় এসেছে, তারা কখনোই চায়নি এই বাংলাদেশ স্বাধীন দেশ হিসেবে সারাবিশ্বে একটা মর্যাদা নিয়ে চলুক। তাদের লক্ষ্যটাই ছিলো বাংলাদেশ যেন একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হয়। আমাদের মুক্তিযুদ্ধে বিজয় যেন অর্থহীন হয়ে পড়ে। আর এই দেশ যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকে সম্পূর্ণ বিপথে চলে যায়।
‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরই এদেশের মানুষ উপলব্ধি করতে পেরেছিলো যে, সরকার মানুষের সেবক। মানুষের শক্তি নিয়েই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে। ৯৬ থেকে ২০০১ একটা স্বর্ণযুগ ছিলো। তারপর আমরা ক্ষমতায় আসতে পারিনি। ২০০১ সালে খুন, সন্ত্রাস অগ্নি-সন্ত্রাস, নির্যাতন, হত্যা কি না হয়েছে এদেশে।
করোনা ও যুদ্ধের কারণে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হোচট খাওয়ার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা যে গতিতে এগিয়ে যাচ্ছিলাম সারাবিশ্বের মতো অর্থনৈতিক ধাক্কা আমাদের ওপরও পড়েছে। যেসব পণ্য আমরা আমদানি করি সব পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে।
আরও পড়ুন: ২০৪১ সালে হবে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’
প্রত্যেককে সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করে তিনি বলেন, সারা বিশ্বব্যাপী মন্দা। এক ইঞ্চি জমিও যাতে অনাবাদী না থাকে। সবাইকে কিছু না কিছু উৎপাদন করতে হবে। আজকে উন্নত দেশ নিজেদের অর্থনৈতিক মন্দা ঘোষণা করেছে। আমরা এখনও অর্থনীতি ধরে রেখেছি। এজন্য আমাদের আগাম সতর্ক থাকতে হবে।
আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ দলের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
সান নিউজ/এনকে