নিজস্ব প্রতিবেদক:
মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে দেশের অধিকাংশ এলাকায় ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি হচ্ছে। কোথাও মাঝারি আবার কোথাও কোথাও ভারি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এ অবস্থায় ঢাকা জেলার আশেপাশের নদীগুলোর পানি বাড়ছে। বিশেষ করে বালু, লাক্ষ্যা, তুরাগ ও টঙ্গী খালের কয়েকটি পয়েণ্টে পানি এখন বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছে। যা আগামী ২৪ ঘন্টা অব্যাহত থাকতে পারে।
একই কারণে ঢাকা সিটি করপোরেশনের একেবারে কাছাকাছি এলাকাগুলোর নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির সামান্য অবনতি হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে আবহাওয়া ও বন্যা সংশ্লিষ্টরা।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, ঢাকার আশেপাশের নদীগুলোর পানি বাড়ছে। বাড়ছে তিস্তা ও ধরলা নদীর পানি। উত্তর পূবাঞ্চলের আপার মেঘনা অববাহিকার প্রধান নদ নদীরগুলোর পানি গত কয়েকদিন কমে এলেও আবার বাড়তে শুরু করেছে। ফলে এসব নদীর আশেপাশের এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হতে পারে।
তবে ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। আগামী ২৪ ঘন্টা পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকতে পারে। এছাড়া পদ্মা ও গঙ্গা নদীর পানি এখন স্থিতিশীল আছে। যা আগামী ৪৮ ঘন্টা অব্যাহত থাকতে পারে।
অপর দিকে কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, বগুড়া, জামালপুর, নাটোর, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও নওগা জেলার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।
অন্যদিকে মানিকগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারিপুর, চাদপুর, রাজবাড়ি, শরীয়তপুর ও নারায়নগঞ্জ জেলার বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকতে পারে।
আজ দেশের ১৭টি নদীর ২৭টি পয়েন্টের পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, ঢাকার আশেপাশের নদীগুলোর মধ্যে বালু নদীর ডেমরা পয়েন্ট পানি গতকাল মঙ্গলবার বিপদসীমার ৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও আজ তা বেড়ে হয়েছে ৯ সেন্টিমিটার। একইভাবে তুরাগ নদীর মিরপুর পয়েন্টে ৮ থেকে বেড়ে ২৩, টঙ্গী খালের টঙ্গী পয়েন্টে ৫ থেকে বেড়ে ১৬ এবং লাক্ষ্যা নদীর নারায়ণগঞ্জ পয়েন্টে ২ থেকে বেড়ে ৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এছাড়া ধরলা নদীর কুড়িগ্রাম পয়েন্টে পানি একই ৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। একইভাবে ব্রহ্মপুত্র নদের চিলমারী পয়েন্টে ৪৭ থেকে কমে ২৮, ঘাঘট নদীর গাইবান্ধা পয়েন্টের পানি বিপদসীমার ৫৪ থেকে কমে ৩৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এদিকে যমুনা নদীর ফুলছড়ি পয়েন্টে ৭৯ থেকে কমে ৬১, বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে ৮৯ থেকে ৭২, সারিয়াকান্দি পয়েন্টে ১০০ থেকে কমে ৮২, কাজিপুর পয়েন্টে ৮৪ থেকে কমে ৬২ , সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে ৭৩ থেকে কমে ৬০, আরিচা পয়েন্টে ৮৬ থেকে কমে ৬৮ হয়েছে। অন্যদিকে আত্রাই নদীর বাঘাবাড়ি পয়েন্টে ১১২ ,থেকে কমে ১০৭, আত্রাই পয়েন্টে ১৮ থেকে কমে ১১, গুড় নদীর সিংড়া পয়েন্টে ৯১ থেকে কমে ৯০ , ধলেশ্বরী নদীর জাগির পয়েন্টে ৯৮ থেকে বেড়ে ১০৪, এলাসিন পয়েন্টে ১১২ থেক বেড়ে ১১১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে এখন প্রবাহিত হচ্ছে। পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদীর জামালপুর পয়েন্টে ১৮ থেকে কমে ৯, কালিগঙ্গা নদীর তারাঘাট পয়েন্টে ১১৬, থেকে বেড়ে ১১৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে পদ্মা নদীর গোয়ালন্দ পয়েন্টে ১১৯ থেকে কমে ১১৪, ভাগ্যকূল পয়েন্ট ৭৪ থেকে কমে ৭১, মাওয়া পয়েন্টে ৬৮ থেকে কমে ৬৫ এবং সুরেশ্বর পয়েন্টে ৮ থেকে বেড়ে ৯ সেন্টিমিটার বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে পুরাতন সুরমা নদীর দিরাই পয়েন্টে ৫, তিতাস নদীর ব্রাহ্মণবাড়িয়া পয়েন্টের ৩০ থেকে কমে ২৮, মেঘনা নদীর চাঁদপুর পয়েন্টের পানি বিপৎসীমার ২৩ থেকে বেড়ে ২৫, আড়িয়াল খা নদীর মাদারিপুর পয়েন্টে ১৪ থেকে বেড়ে ১৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এদিকে ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের প্রতিদিনের প্রতিবেদনে জানানো হয়, বন্যাকবলিত ৩১টি জেলার ১৫০টি উপজেলার ৯৩৬ ইউনিয়নের ১০ লাখ ৪০ হাজার ২৬৬ পরিবার এখন পানি বন্দী অবস্থায় আছে। পানিতে ডুবে মারা গেছে ৪১ জন।
আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়, রংপুর, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগের অধিকাংশ জায়গায়, ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রাম বিভাগের অনেক জায়গায় এবং খুলনা ও বরিশাল বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি বৃষ্টি হতে পারে।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত, দেশে সবোর্চ্চ বৃষ্টি হয়েছে ফেনীতে ৮৯ মিলিমিটার। এছাড়া ঢাকা বিভাগের মধ্যে ফরিদপুরে ৪৬, ময়মনসিংহে ৫৪, সিলেটে ৫২, রাজশাহী বিভাগের মধ্যে তাড়াশে ৭৪, রংপুর বিভাগের মধ্যে তেতুলিয়ায় ১৪, খুলনা বিভাগের মধ্যে চুয়াডাঙ্গায় ৪৬ এবং বরিশালে ৩১ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে।
সান নিউজ/ এআর