সান নিউজ ডেস্ক: দেশের বর্তমানে ক্রান্তিকালের সুযোগ নিয়ে বিরোধী দল রাজনৈতিক অশান্ত পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা করে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আরও পড়ুন: রেকর্ড সংখ্যক ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে
তিনি বলেন, দেশ যখন এমন ক্রান্তিলগ্নে পড়ে তখন তাদের মাঝে ওই উদ্বেগ আমরা দেখিনি। বরং দেখেছি এই সুযোগ নিয়ে রাজনৈতিক অশান্ত পরিবেশ কীভাবে সৃষ্টি করা যায় সেটাই যেন তারা চেষ্টা করে যাচ্ছে। তাহলে অনুভূতিটা কোথায়? অনুভূতিটা থাকতে হবে দেশের পথে। দেশপ্রেমটা থাকতে হবে। ক্রাইসিসের সুযোগ নিয়ে রাজনৈতিক অবস্থা ঘোলাটে করা আর ঘোলাপানিতে মাছ শিকারের চেষ্ট করার প্রবণতা পরিহার করতে হবে।
বুধবার (২ নভেম্বর) জাতীয় সংসদের প্রশ্নোত্তরে জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নুর সম্পূরক প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
আরও পড়ুন: সৌদি আরবে ইরানের হামলার আশঙ্কা
চুন্নু তার প্রশ্নে বর্তমান অর্থনৈতিক মন্দায় সব রাজনৈতিক দলকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে আহ্বান জানিয়ে এ বিষয়ে উদ্যোগ নেবেন কি না- জানতে চান।
জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবাইকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার কথা বললেন? আমার প্রশ্ন এখানে। দেশ যখন এমন ক্রান্তিলগ্নে পড়ে, তখন আমাদের যারা বিরোধী দল আছে, আমি সবার কথা বলছি- তাদের মাঝে ওই উদ্বেগ আমরা দেখিনি। বরং দেখেছি এই সুযোগ নিয়ে রাজনৈতিক অশান্ত পরিবেশ কীভাবে সৃষ্টি করা যায় সেটাই যেন তারা চেষ্টা করে যাচ্ছে। এটা করা কি সমীচীন হচ্ছে? সমীচীন হচ্ছে না। তাহলে ওই অনুভূতিটা কোথায়? অনুভূতিটা থাকতে হবে দেশের পথে। দেশপ্রেমটা থাকতে হবে। আজ বিশ্বব্যাপী ক্রাইসিস- এই সুযোগ নিয়ে রাজনৈতিক অবস্থাকে ঘোলাটে করা আর ঘোলাপানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করা– এই প্রবণতাটা পরিহার করতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, ঐক্যবদ্ধ শুধু মুখে বললে হবে না। নিজের থেকে পাশে দাঁড়াতে হবে। আমরা কিন্তু সবাইকে নিয়ে কাজ করি। আমরা যখন উন্নয়ন করি কোন এলাকা আমাদের ভোট দিলো বেশি আর কোন এলাকা দিলো না- সে বিবেচনা করি না। জনমানুষের জন্য আমাদের উন্নয়ন। গণমানুষের কথা চিন্তা করে আমরা কাজ করি। ঠিক তেমনি দুর্যোগ মোকাবিলায় আমরা বসে থাকিনি। অনেকে তো সমালোচনা করে যাচ্ছেন। বক্তৃতা দিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু একমুঠো চালও দিয়ে বা হাত দিয়ে পানি থেকে কাউকে উদ্ধার করতে দেখিনি।
আরও পড়ুন: এলপিজির দাম বাড়লো
তিনি আরও বলেন, আমরা সবসময় ঐক্যে বিশ্বাস করি। যারা আসবেন, তাদের সঙ্গে আমরা কাজ করব। এতে কোনো সন্দেহ নেই।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুদ্ধের ভয়াবহতা ও পণ্যের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে আমি খোলামেলা কথা বলেছি। যদিও অনেকে আমার সমালোচনাও করেছেন। কেউ কেউ বলেছেন এভাবে কথা বললে মানুষ ভয় পেয়ে যাবে। ভয় নয়, মানুষকে সতর্ক করার জন্য এটা বলেছি। শুধু সতর্ক নয়, সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলেছি।
তিনি বলেন, আমাদের মাটি অত্যন্ত উর্বর। আমরা ফসল ফলাব। খাদ্য উৎপাদন করবো। আমরা ব্যবহার করব। এবং আমরা সেটা করতে পারি। বাংলাদেশ পারে— আমরা অনেক ক্ষেত্রে এটা বিশ্বকে বুঝিয়ে দিয়েছি। সেটা আমাদের মাথায় রাখতে হবে।
আরও পড়ুন: ধর্ষণ মামলায় দুই আসামির মৃত্যুদণ্ড
শেখ হাসিনা বলেন, আমরাই শুধু নই, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ কষ্টে ভুগছে। পণ্য পরিবহনও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। যেখান থেকে খাদ্য বা তেল কিনতাম, যুদ্ধের কারণে সেখান থেকে কিনতে পারছি না। বিকল্প জায়গা খুঁজে বের করছি। সেখান থেকে যাতে আমরা খাদ্য, ডিজেল, তেল, সার আনতে পারি সেই ব্যবস্থা করছি। এমনকি এলএনজি আমদানির জন্য পদক্ষেপ নিচ্ছি এবং নিয়েছি।
গণফোরামের সুলতান মোহাম্মদ মনসুরের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ সেই সঙ্গে স্যাঙ্কশন। এর ফলে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিয়েছে। সারা বিশ্বের অবস্থাই খুব টালমাটাল। বাংলাদেশ অনেক উন্নত দেশ থেকে এখনো পর্যন্ত ভালো অবস্থায় আছে বলে মনে করি। ইউরোপ আমেরিকা গ্রেট ব্রিটেনসহ বিভিন্ন দেশের অবস্থা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় প্রতিটি জায়গায় জ্বালানি তেলের অভাব, বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য সব জায়গায় লোডশেডিং। গ্রেট ব্রিটেনে বিদ্যুতের দাম ৮০ ভাগ বেড়েছে। তারা সব কিছু রেশন করে দিচ্ছে। সেই পরিস্থিতিতে আমাদের দেশে যাতে প্রভাবটা না পড়ে তার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করছি। সবার কাছে আহ্বান জানাচ্ছি, আমাদের খাদ্য উৎপাদন অব্যাহত রাখতে হবে। বার বার বলছি এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদী না থাকে। যখন বিশ্বব্যাপী খাদ্যের অভাব ও মূল্যস্ফীতি তখন আমাদের দেশে নিজেদের মাটি ও মানুষ নিয়ে চলার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছি।
আরও পড়ুন:পুলিশ স্থাপনায় বিস্ফোরণে নিহত ৫
প্রধানমন্ত্রী বলেন, হেডলাইন দিয়েছে সব দেশের থেকে বাংলাদেশে পণ্যমূল্য বেশি। কিন্তু ভেতরে যে ডাটা দিয়েছে, সেখানে বাংলাদেশ হিসাবে আসে না। বাংলাদেশ কয়েকটি দেশ থেকে ভালো অবস্থায় আছে। এরা কারসাজিটা এভাবেই করে। প্রত্যেক ক্ষেত্রে কিছু কিছু পত্রিকা এখন এমনভাবে একটা হেডলাইন করে যা বিভ্রান্তিকর। সঠিক তথ্য তারা দেয় না। বিভ্রান্তিমূলক তথ্য দেয়।
শেখ হাসিনা বলেন, যে পত্রিকা আর যে প্রতিষ্ঠান, ওই প্রতিষ্ঠানের সবাইকে আমার খুব ভালো চেনা আছে। আমাদের মতিয়া আপার ভাষায় বলতে হয়, একটা প্রতিষ্ঠান আছে, এর প্রধানকে মতিয়া আপা আসল নাম বাদ দিয়ে বলেছেন সেনাপ্রিয়। অর্থাৎ অস্বাভাবিক একটা পরিস্থিতিতে তাদের একটু দাম বাড়ে, মূল্য বাড়ে। এটাই বাস্তবতা। আমরা জনগণের পাশে আছি, জনগণের সঙ্গে থাকব। তারা যেটা বলছে বলতে দিন। আমার যা কাজ করার, তা আমি করে যাব।
সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য রুমানা আলীর প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নের চিত্র সংসদে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, উন্নত বাংলাদেশের অভিযাত্রায় প্রথম ধাপ হিসেবে ইতোমধ্যে আমরা স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদায় আসীন হয়েছি।
আরও পড়ুন: প্রতারণা মামলায় এরতেজা রিমান্ডে
২০১৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারের অনেক অঙ্গীকার ইতিমধ্যে বাস্তবায়ন করা হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। সময়ের প্রয়োজনে সাড়া দিয়ে নির্বাচনী ইশতেহার বহির্ভূত অনেক কাজ সরকার করেছে বলে জানান তিনি। এ সময় করোনাকালীন আর্থিক সহায়তা প্রদান ও ৩১ কোটি ৭০ লাখ করোনা টিকা দেওয়ার কথা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।
সান নিউজ/এমআর