সান নিউজ ডেস্ক: নীলফামারীর কিশোরগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) থাকার সময় অমিত চক্রবর্ত্তীর বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। তবে তাকে শাস্তি হিসেবে লঘুদণ্ড ‘তিরস্কার’ করা হয়েছে! তিনি বর্তমানে কুড়িগ্রামের চর রাজিবপুরের ইউএনও হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।
আরও পড়ুন: নিম্নাঞ্চল প্লাবিত, আশ্রয়ণ কেন্দ্রে মানুষ
গত বৃহস্পতিবার (১৩ অক্টোবর) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কে এম আলী আজম স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ শাস্তির কথা জানানো হয়। অভিযুক্ত অমিত চক্রবর্ত্তী তিনি কিশোরগঞ্জ উপজেলায় কর্মরত থাকার সময় উপজেলার নারী এসিল্যান্ডের মেসেঞ্জারে অশোভনীয় চ্যাটিং করাসহ নানাভাবে তাকে যৌন হয়রানি করেন।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮’ এর ৪(২) (ক) বিধি অনুযায়ী ‘তিরস্কার’ সূচক লঘুদণ্ড দেওয়া হলো।
আরও পড়ুন: দানবাক্সে মিলল প্রায় ৪ কোটি টাকা
প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়, কুড়িগ্রামের চররাজিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অমিত চক্রবর্ত্তী ২০২১ সালের ২৫ জুলাই থেকে ৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলায় নির্বাহী অফিসার হিসেবে কর্মরত থাকাকালে তার অধীন কর্মরত একজন সহকারী কমিশনারের (ভূমি) সঙ্গে অশোভন আচরণ করা, তার সঙ্গে ফেসবুক মেসেঞ্জারে অশোভন কথোপকথন, তার স্বামী যেন বদলি হয়ে নীলফামারী জেলায় না আসেন সে বিষয়ে চাপ প্রয়োগসহ তার বাচ্চা যেন রংপুরে থাকে, তিনি স্টেশনে থেকে চাকরি করেন সে বিষয়ে চাপ প্রয়োগ, তার অনিচ্ছা সত্ত্বেও বডি স্প্রে কিনে দেওয়া, রেস্টুরেন্টে নিয়ে গিয়ে কুরুচিপূর্ণ ও অশালীন কথাবার্তা বলা, ফোন দিয়ে ভারসাম্যহীন ও অসঙ্গতিপূর্ণ কথা বলা, রাত ৮টা থেকে ৯টার সময় অফিসে কোন কাজ না থাকলেও অফিসে বসিয়ে রাখা, তাকে মাস্ক পরে তার সামনে বসতে নিষেধ করা, বন্ধের দিনে ফোন ওয়েটিংয়ে থাকা নিয়ে চাপ প্রয়োগ করার মত শিষ্টাচার বহির্ভূত আচরণ এবং একজন নারী সহকর্মীর সঙ্গে খুবই অশোভন আচরণ করার অভিযোগে ওঠে। এরপর তার বিরুদ্ধে এ মন্ত্রণালয়ের বিভাগীয় মামলা করা হয়।
আরও পড়ুন: সমুদ্রবন্দরে ৭ নম্বর সংকেত
আরও বলা হয়, চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি তার ব্যক্তিগত শুনানি গ্রহণ করা হয়। ব্যক্তিগত শুনানিকালে সরকার পক্ষের নথি উপস্থাপনকারী কর্মকর্তা নীলফামারী জেলা প্রশাসনের উপ-পরিচালক (স্থানীয় সরকার) মো. আব্দুর রহমান ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) অভিযোগ বিবরণীর বক্তব্য সমর্থন করে বলেন, একজন নারী জুনিয়র সহকর্মীর সঙ্গে এমন অশালীন ও দৃষ্টিকটু আচরণ কাঙ্ক্ষিত নয়।
গত ২৭ সেপ্টেম্বর তদন্ত কর্মকর্তা প্রতিবেদন দাখিল করেন। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, অভিযোগকারীর সঙ্গে ফেসবুক মেসেঞ্জারে অশোভনীয় কথোপকথন/চ্যাটিং করা এবং তার অনিচ্ছা সত্ত্বেও তাকে বডি স্প্রে কিনে দেওয়ার মাধ্যমে অভিযুক্ত কর্মকর্তা কর্তৃক অসদাচরণ সংঘটনের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে।
অন্যদিকে অভিযুক্ত কর্মকর্তা অমিত চক্রবর্ত্তী (পরিচিতি নং ১৭৪৯৪) তার নিজের দাখিলকৃত লিখিত জবাব সমর্থন করে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে বিভাগীয় মামলার দায় থেকে অব্যাহতির অনুরোধ জানান।
আরও পড়ুন: নৌ চলাচল বন্ধ ঘোষণা
অমিতের শাস্তির বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে ভুক্তভোগী নারী কর্মকর্তাকে ফোন করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
এমনকি এ প্রসঙ্গে জানার চেষ্টা করেও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
তবে তাকে শুধু তিরস্কার করায় জনপ্রশাসনের কর্মকর্তারাও উষ্মা প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন, এত অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার পরও শুধু তিরস্কার করা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। আরও বড় শাস্তি হওয়া উচিত ছিল।
সান নিউজ/কেএমএল