সান নিউজ ডেস্ক : আন্দামান দ্বীপপুঞ্জ অঞ্চলে সৃষ্ট লঘুচাপটি বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করে নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। শেষ পর্যন্ত এটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়ে বাংলাদেশের পশ্চিম উপকূলে আঘাত হানার আশঙ্কা রয়েছে।
আরও পড়ুন : বিমানের ঊর্ধ্বতনরাও প্রশ্নফাঁসে জড়িত
ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার পর আরও কিছুটা সামনে এলে সুস্পষ্টভাবে এর গতিপথ বলা সম্ভব হবে। প্রক্রিয়াটি ঘূর্ণিঝড় হলে এর নাম হবে সিত্রাং।
এই শব্দটি থাইল্যান্ডের আবহাওয়া দফতরের দেয়া। থাইভাষায় সিত্রাং শব্দটি মানুষের পদবি হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
সম্ভাব্য এই ঘূর্ণিঝড়টি বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিম উপকূল দিয়ে স্থলভাগে আঘাত হানতে পারে। স্থলভাগে ওঠার সময় এর গতিবেগ সর্বোচ্চ ১৩০ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে বলে আবহাওয়াবিদরা মডেল পূর্বাভাস থেকে জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন : ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে হয়রানি কমেছে
নিম্নচাপটি যে ঘূর্ণিঝড় হতে পারে এ সম্বন্ধে শনিবার (২২ অক্টোবর) পর্যন্ত কিছু বলেনি বাংলাদেশের আবহাওয়া দফতর। তারা শুধু বলেছে, নিম্নচাপটি ঘনীভূত হতে পারে।
কানাডা প্রবাসী আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ মোস্তফা কামাল পলাশ বলেছেন, নিম্নচাপটি গতকাল শনিবার বিকেল ৪টার সময় আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ থেকে ৪০০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিম দিকে বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছিল।
জাপানের ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র হিমাউরিকে উদ্ধৃত করে তিনি বলেছেন, আন্দামানের কাছে ইতোমধ্যে দক্ষিণ-পূর্ব ও উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে প্রবল বেগে বাতাস প্রবাহিত হয়ে পানিতে ঘূর্ণন শুরু হয়েছে। ফলে রোববার (২৩ অক্টোবর) থেকেই নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়ে যেতে পারে।
আরও পড়ুন : চার বন্দরে সতর্ক সংকেত
মার্কিন ও ইউরোপিয়ান স্যাটেলাইটের মডেল পূর্বাভাস থেকে মোস্তফা কামাল বলেন, এই মডেল পূর্বাভাসগুলো সোমবারই (২৪ অক্টোবর) বাংলাদেশের খুলনা থেকে চট্টগ্রাম উপকূল দিয়ে স্থলভাগে উঠে আসার পূর্বাভাস দিয়েছে।
ইউরোপিয়ান ও আমেরিকান আবহাওয়া পূর্বাভাসে শুরু থেকেই সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়টিকে একটি সুপার সাইক্লোন বলে অভিহিত করে এলেও এখন এটিকে তারা ‘ভেরি সিভিয়র সাইক্লোনিক স্টর্ম’ (খুবই প্রবল গতিসম্পন্ন ঘূর্ণিঝড়) বলে অভিহিত করেছে।
অর্থাৎ ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং ৮০ থেকে ১১০ কিলোমিটার গতি সম্পন্ন হবে। তবে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া আকারে ১২০ থেকে ১৩০ কিলোমিটার পর্যন্ত এর গতিবেগ উঠতে পারে।
আরও পড়ুন : নিরাপদ সড়ক গড়তে কাজ করছে সরকার
সিত্রাং সোমবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টার মধ্যে স্থলভাগে আঘাত হানতে পারে জানিয়ে মোস্তফা কামাল জানান আবহাওয়া খুবই আনপ্রেডিক্টেবল (পূর্বাভাস করা খুবই কঠিন) বলে এই সময়ের সাথে তিন ঘণ্টা যোগ করে অথবা তিন ঘণ্টা বিয়োগ করে হিসাব করতে হবে।
ইউরোপিয়ান ও আমেরিকান পূর্বাভাস বলছে, ঘূর্ণিঝড়টি বরিশাল থেকে চট্টগ্রাম উপকূলীয় এলাকা দিয়ে স্থলভাগে উঠে আসতে পারে এবং কানাডিয়ান মডেল পূর্বাভাস কেন্দ্র বলছে, ঘূর্ণিঝড়টি খুলনা থেকে বরিশাল উপকূল দিয়ে স্থলভাগে উঠে আসতে পারে।
বাংলাদেশ আবহাওয়া দফতর বলছে, নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৪৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার, যা দমকা ও ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। নিম্নচাপ কেন্দ্রের কাছের এলাকায় সাগর উত্তাল রয়েছে।
আরও পড়ুন : ইলিশ ধরার অপরাধে ৪১ জেলে আটক
শনিবার দুপুর ১২টায় নিম্নচাপটি চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর থেকে ৯২৫ কিলোমিটার দক্ষিণে, কক্সবাজার সমুদ্র বন্দর থেকে ৮৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণে, মংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ৯৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্বে এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ৮৯০ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব দিকে অবস্থান করছে।
বাংলাদেশের চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ১ নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সঙ্কেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে উপকূলের কাছাকাছি এসে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। সেই সাথে তাদেরকে গভীর সাগরে বিচরণ করতে নিষেধ করা হয়েছে।
সান নিউজ/এইচএন