নিজস্ব প্রতিবেদক:
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান বলেছেন, সরকারি ত্রাণ-সহায়তা হিসেবে বন্যাদুর্গতের এ পর্যন্ত নগদ ৩ কোটি ৩৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা প্রদান করা হয়েছে।
শনিবার (২৫ জুলাই) ডা: এনামুর রহমান রাজধানীর সচিবালয়ে তার কার্যালয়ে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, এছাড়াও খাদ্য-সহায়তা হিসেবে দেওয়া হয়েছে ১২ হাজার ১০ মেট্রিক টন চাল ও ১ লাখ ২১ হাজার শুকনো খাবারের প্যাকেট।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, এর পাশাপাশি বন্যা-কবলিত এলাকার ক্ষতিগ্রস্তদের প্রাণী-সম্পদ বাঁচাতে গো-খাদ্য ক্রয়ের জন্য নগদ ১ কোটি ৪৮ লাখ টাকা ও শিশু খাদ্য ক্রয়ের জন্য আরো নগদ ৭০ লাখ টাকা প্রদান করা হয়েছে। এছাড়াও বন্যা-কবলিত অঞ্চলে ১ হাজার ৫শ’ ১৯টি আশ্রয়-কেন্দ্র খোলা হয়েছে এবং এসব আশ্রয়-কেন্দ্রে নারী-পুরুষ-শিশু মিলিয়ে ৮৮ হাজার ৬২ জন দিনাতিপাত করছেন।
নদ-নদীর পানির তোড়ে বন্যা-কবলিত কতিপয় স্থানে ঘরবাড়ি ভেঙ্গে নদীতে ভেসে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এসব এলাকায় ঘর নির্মাণের জন্যও এ পর্যন্ত ৩শ’ বান্ডিল ঢেউটিন ও গৃহমঞ্জুরি বাবদ নগদ ৯ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিব মো: মোহসীন এসময় উপস্থিত ছিলেন।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, ‘উজানে পানির চাপ বেড়ে যাওয়ায় নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে গত ২৬ জুন থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে বন্যা শুরু হয়। চলতি জুলাই মাসের প্রথম-সপ্তাহের শেষ দিকে পানি কমতে শুরু করলে ১১ জুলাই থেকে পুনরায় নদ-নদীর পানি বাড়তে থাকায় দেখা দেয়, দ্বিতীয় দফা বন্যা। ২১ জুলাই থেকে তৃতীয় দফা পানি বাড়তে শুরু করেছে।’
তিনি উল্লেখ করেন, তিন দফায় দেশের ৩১টি জেলা বন্যা কবলিত হয়েছে এবং দফায়-দফায় বন্যায় এসব জেলার ১ শ’ ৪৭টি উপজেলার মোট ৮ লাখ ৬৫ হাজার ৮শ’ পরিবারের ৩৯ লাখ ৭৫ হাজার ৯৩৭ জন বন্যার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ডা: এনামুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্রের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন বলেন, চলতি মৌসুমের তৃতীয় দফা বন্যায় দেশের ১৬ জেলায় আরও দু’দিন পানি বাড়তে পারে। তবে, সাগরে জোয়ারের কারণে দেশের মধ্যাঞ্চলে বন্যার পানি কমতে কিছুটা দেরি হতে পারে। আর জোয়ারের সমস্যা না হলে, অগাস্টের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে দেশের সব জায়গা থেকে বন্যার পানি নেমে যেতে পারে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, বন্যায় ত্রাণ সহায়তা তদারকি করতে ছয়টি কমিটি করা হয়েছে। এসব কমিটি উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে ত্রাণ কার্যক্রমের দেখভাল করবে। আগামী ২১ দিন কমিটিগুলো এ দায়িত্ব পালন করবে।
তিনি উল্লেখ করেন, কমিটি মাঠ-পর্যায়ে বন্যা-কবলিত মানুষের জন্য যা প্রয়োজন, তা জানালে সরকার প্রয়োজন-অনুযায়ী বরাদ্দ দিবে।
প্রতিমন্ত্রী দেশের বন্যা-কবলিত মানুষের উদ্দেশে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আপনাদের পাশে সব সময় আছেন। তিনি (প্রধানমন্ত্রী) সব-সময় আমাদের কার্যক্রম তদারকি করছেন, আমাদের নির্দেশনা দিচ্ছেন। আমরা তার নেতৃত্ব ও নির্দেশনায় ত্রাণ-সহায়তা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। ত্রাণের কোথাও কোনো সঙ্কট নেই। আমাদের কাছে যেমন পর্যাপ্ত ত্রাণ মজুদ আছে, তেমনি জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়েও পর্যাপ্ত ত্রাণ মজুদ রয়েছে।’
ডা: এনামুর আরো উল্লেখ করেন, ৩৩৩ হেল্প লাইনের সাথে সকল দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটিকে যুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। কোথাও কেউ খাবারের কষ্টে থাকলে ৩৩৩ নম্বরে যোগাযোগ করা হলে ত্রাণ-সহায়তা পৌঁছে দেওয়া হবে। এ ব্যাপারে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। বাসস
সান নিউজ/ আরএইচ