সান নিউজ ডেস্ক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, উন্নয়নের অদম্য গতি অব্যাহত রাখতে চাই। সেজন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করে একটি সমন্বিত যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় কাজ করে যাচ্ছে সরকার।
আরও পড়ুন: স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটি ঘোষণা
তিনি বলেন, আমরা জানি যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি একটি দেশের অগ্রগতির জন্য অপরিহার্য। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে আমরা এই বিষয়গুলো মাথায় রেখে কাজ করে যাচ্ছি।
রোববার (৪ সেপ্টেম্বর) সকালে পিরোজপুরের বেকুটিয়ায় কচা নদীর ওপর বহুল আলোচিত ১ হাজার ৪৯৩ মিটার দীর্ঘ ‘বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব ৮ম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের চামেলি হল থেকে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানে যুক্ত হন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি নিশ্চিত করতে এবং জনসাধারণের বিশেষ করে তৃণমূলের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে কাজ করে যাচ্ছে।
আরও পড়ুন: মিয়ানমার রাষ্ট্রদূতকে ডেকে কড়া প্রতিবাদ
দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে বর্তমান সরকারের উদ্যোগের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা চাই দেশের উন্নয়নের গতি অব্যাহত থাকুক।
সরকারপ্রধান বলেন, দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে বঞ্চিত ছিল। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে, অনেক খরস্রোতা নদী পাড়ি দিয়ে, জীবিকা ও চিকিৎসার জন্য রাজধানীতে আসতে হতো তাদের। আমি ’৯৬ সালে বরিশালের সঙ্গে ঢাকার যোগাযোগের জন্য শিকারপুর-দোয়ারিকা সেতু নির্মাণ করে দিই এবং কীর্ত্তনখোলার ওপর ব্রিজ নির্মাণের কাজ শুরু করি।
শেখ হাসিনা জানান, গাবখান ব্রিজও তার সরকারেরই করা। পাশাপাশি উত্তরবঙ্গের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নেও একের পর এক সেতু তার সরকার করে দিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কচা নদীর ওপর এই সেতু নির্মাণের ফলে ঢাকার সঙ্গে পিরোজপুরের সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছে।
আরও পড়ুন: প্রেমিককে আসামি করে চার্জশিট!
তিনি বলেন, জনগণ পিরোজপুরের তাজা পেয়ারা ও আমড়া রাজধানীতে বসেই পাবে। এই অঞ্চলের শীতল পাটিও বিখ্যাত। জেলার বাসিন্দারা অন্যান্যদের পাশাপাশি খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প স্থাপন করতে পারে যা জেলা ও অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক অবস্থার পরিবর্তনে ব্যাপক অবদান রাখবে।
২০১৮ সালের ১ নভেম্বর সেতুটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়। সড়ক ও জনপথ বিভাগ ৮৯৪.০৮ কোটি টাকা ব্যয়ে এটি নির্মাণ করে। চীন সরকার সেতুটির জন্য প্রকল্প সহায়তা হিসেবে ৬৫৪ দশমিক ৮০ কোটি টাকা দিয়েছে। বাংলাদেশ সরকার ব্যয় করেছে ২৩৯ দশমিক ৮০ কোটি টাকা।
সেতুটি কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত, পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর, মোংলা সমুদ্র বন্দর এবং দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর বেনাপোলের মধ্যে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপনে সহায়তা করবে।
আরও পড়ুন: তিস্তার পানি বণ্টন ভারতের ওপর নির্ভর
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং বক্তব্য রাখেন। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নূরী অনুষ্ঠানে একটি পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন করেন। প্রকল্পের ওপর একটি ভিডিও চিত্রও অনুষ্ঠানে প্রদর্শিত হয়। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।
এ উপলক্ষে বঙ্গমাতা সেতু এলাকায় পশ্চিম ও পূর্ব পাড়ে দুটি সমাবেশের আয়োজন করা হয়। পশ্চিম পাড়ে পিরোজপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম এবং পূর্ব পাড়ে সাবেক যোগাযোগ মন্ত্রী পিরোজপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ার হোসেন মঞ্জু উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী পরে প্রকল্প এলাকার জনগণের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার জন্য সরকারের পদক্ষেপের অংশ হিসেবে পায়রা বন্দরের উন্নয়ন করা হবে।
তিনি বলেন, দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ত্বরান্বিত করতে আমরা আধুনিক পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন করছি।
আরও পড়ুন: দুর্নীতিবাজদের শাস্তি চান উপাচার্যরা
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার ৭১৮ কিলোমিটার মহাসড়ককে ৪-লেন বা তার ওপরে উন্নীত করার মাধ্যমে সারা দেশে মহাসড়কের মোট দৈর্ঘ্য ২২ হাজার কিলোমিটারে উন্নীত করেছে। পাশাপাশি ৬শ’ কিলোমিটার মহাসড়ককে ৪-লেন বা তার বেশি লেনে পরিণত করার কাজ চলছে।
তিনি বলেন, সরকার ঢাকায় মেট্রোরেল ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প, গাজীপুর থেকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার র্যাপিড বাস ট্রানজিট, চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে বঙ্গবন্ধু টানেল এবং ১০ লেনের টঙ্গী সেতু নির্মাণসহ বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এ প্রকল্পগুলো শেষ হলে আমাদের অর্থনীতি আরও গতি পাবে।
সান নিউজ/এনকে