সান নিউজ ডেস্ক : না ফেরার দেশে চলে গেলেন আলোচিত সাবেক নির্বাচন কমিশনার (ইসি) ও লেখক মাহবুব তালুকদার (৮০)। রাজধানীর ইউনাউটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুপুরে মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজেউন)।
আরও পড়ুন : বিদ্যুৎ সাশ্রয় করতে পারছি
বুধবার (২৪ আগস্ট) দুপুর ১২: ৪৯ মিনিটের সময় মারা যান তিনি।
সংবাদ মাধ্যমকে মাহবুব তালুকদারের বড় মেয়ে ডা. আইরিন মাহবুব বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, বেশ কয়েক বছর ধরে মাহবুব তালুকদার প্রস্টেট ক্যানসারসহ বার্ধক্যজনিত বেশকিছু রোগে ভুগছিলেন।
তিনি আরও বলেন, কিছুদিন আগে তিনি এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছিলেন। শারীরিক অবস্থা ভালো হওয়ায় সেখান থেকে বাসায় নিয়ে এসেছিলাম। আজ হঠাৎ অক্সিজেন স্যাচুরেশন কমে যাওয়ায় সকাল সাড়ে ১১টায় তাকে ইউনাইটেড হাসপাতালে নেওয়া হয়।
কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, তার ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
আরও পড়ুন : চলে গেলেন সাবেক ইসি মাহবুব তালুকদার
মাহবুব তালুকদার ব্যক্তিগত জীবনে নীলুফার বেগমের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ আবদ্ধ হন। তাদের ৩ সন্তানের মধ্যে বড় মেয়ে ডা. আইরিন মাহবুব বাবা-মায়ের সঙ্গেই থাকেন। আর ২ সন্তানের মধ্যে ১ জন কানাডায় ও ১ জন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করেন।
প্রসঙ্গত, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সময় সহকারী প্রেসসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। ১৯৯৯ সালে অতিরিক্ত সচিব হিসেবে অবসরে যান।
মাহবুব তালুকদার তার চাকরি জীবনের অভিজ্ঞতা নিয়ে বই লিখেছেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়েও লিখেছেন গুরুত্বপূর্ণ বই। তার পরিচিতি শুধু সাবেক সরকারি কর্মকর্তা ও নির্বাচন কমিশনারই নয়, তিনি বাংলা ভাষার একজন গুরুত্বপূর্ণ লেখকও।
তার উল্লেখযোগ্য কয়েকটি বই হচ্ছে : বঙ্গভবনে পাঁচ বছর, আমলার আমলনামা, বধ্যভূমি, চার রাজাকার, কবিতাসমগ্র। ২০১২ সালে বাংলা একাডেমি পুরষ্কার লাভ করেন তিনি।
আরও পড়ুন : পাকিস্তানে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ায় ভারতে বরখাস্ত ৩
১৯৪২ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি নেত্রকোণা জেলার পূর্বধলা উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন মাহবুব তালুকদার। নবাবপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক, ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি।
কর্মজীবনের প্রারম্ভে দৈনিক ইত্তেফাকে সাংবাদিকতা ও শিক্ষকতায় নিয়োজিত ছিলেন মাহবুব তালুকদার। তৎকালীন জগন্নাথ কলেজ, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপত্য বিভাগে ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে শিক্ষকতা করেন তিনি।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন এবং মুজিবনগর সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়ে চাকুরিতে যোগ দেন মাহবুব তালুকদার। পরবর্তীতে সরকারি চাকুরির ধারাবাহিকতায় বঙ্গবভনে ৫ বছর অবস্থানকালে বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
আরও পড়ুন : পিকে হালদারের দুই নারী সহযোগী আটক
১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর বিশেষ কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পান। এরপর রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদউল্লাহর জনসংযোগ কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আমলে তার সহকারী প্রেস সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন সাবেক এই ইসি। শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
১৯৯৯ সালে অতিরিক্ত সচিব হিসেবে চাকুরি থেকে অবসর গ্রহণের পূর্ব পর্যন্ত বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থায় অধিষ্ঠিত ছিলেন তিনি।
২০১৭ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি মাহবুব তালুকদার, কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বে গঠিত পাঁচ সদস্যের বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের সদস্য হিসেবে রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ কর্তৃক নিয়োগ প্রাপ্ত হন।
আরও পড়ুন : সুখ-কষ্ট সব আল্লাহর হাতে!
সাবেক নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদারের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন সান নিউজের ইনচার্জ ও মুক্তিযুদ্ধের শহীদ স্মৃতি পুরস্কারপ্রাপ্ত সাংবাদিক মোঃ কামাল হোসেন।
তিনি বলেন, জাতি হারাল একজন বিবেকবান মানুষ। বাংলার ইতিহাসে নষ্ট যুগে সবাই যখন তেল মেরে সত্য লুকাতে ব্যস্ত, তখন তিনি প্রমাণ করেছেন, সবাই বিবেক বিক্রি করে না, সময়ের সবচেয়ে সাহসী দেশপ্রেমিক বাংলাদেশি মাহবুব তালুকদারের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করছি।
সান নিউজ/এইচএন