সান নিউজ ডেস্ক: হঠাৎ করে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই ঢাকা আসছেন। শনিবার (৬ আগস্ট) বিকেল ৫টার দিকে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবেন ওয়াং ই। বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানাবেন কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক। এ সফরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে বৈঠক ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ হবে চীনা মন্ত্রীর।
আরও পড়ুন: মংলা-চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারের প্রস্তাব
জানা গেছে, চলমান উন্নয়ন সহযোগিতায় বেইজিংকে পাশে চাওয়ার পাশাপাশি বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে খাদ্য ও জ্বালানি সহযোগিতার বিষয়ে ঢাকা-বেইজিং একসঙ্গে কাজ করতে পারে কিনা- সেটি এজেন্ডায় রাখবে ঢাকা। এছাড়া চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এ সফরে বেইজিংয়ের সঙ্গে বেশ কয়েকটি সমঝোতা স্মারক সই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, সফরের বেশ কয়েকটি চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যেগুলোর চূড়ান্ত কাজ শেষ সেগুলো হয়তো সই হবে। বাকিগুলো নিয়েও আলোচনা হবে। আমাদের দিক থেকে উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে তাদের পাশে চাওয়ার বিষয়টি থাকবে। খাদ্য ও জ্বালানি ইস্যু আসবে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে খুব জোর দেওয়া হবে। তাদের দিক থেকে তাইওয়ান ইস্যুটি তোলার সম্ভাবনাই বেশি। এ বিষয়ে আমরা ইতোমধ্যে নিজেদের অবস্থান বিবৃতিতে স্পষ্ট করেছি।
আরও পড়ুন: যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সামরিক যোগাযোগ স্থগিত
জানা গেছে, পিরোজপুরে অষ্টম বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ সেতুর হস্তান্তর সনদ, দুর্যোগ মোকাবিলা সহায়তার জন্য পাঁচ বছর মেয়াদি সমঝোতা স্মারকের নবায়ন, ২০২২-২৭ মেয়াদে সাংস্কৃতিক সহযোগিতা সমঝোতা স্মারকের নবায়ন, দুই দেশের মধ্যে টেলিভিশন অনুষ্ঠান বিনিময় সহযোগিতা সমঝোতা স্মারক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও চীনের ফার্স্ট ইনস্টিটিউট অব ওশেনোগ্রাফির মধ্যে মেরিন সায়েন্স নিয়ে সমঝোতা স্মারক।
এদিকে, কূটনৈতিক সূত্র বলছে, বেইজিংয়ের আগ্রহে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এ সফরে দু’দেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় ছাড়াও আঞ্চলিক ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে বৈশ্বিক রাজনীতির আলোচনা গুরুত্ব পাবে। তবে সবকিছু ছাপিয়ে তাইওয়ান ইস্যুকেই প্রাধান্য দেবে বেইজিং।
আরও পড়ুন: জাপান-যুক্তরাষ্ট্রে মহামারি
চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঢাকা সফরের খবর চাউর হওয়ার পর থেকে কূটনৈতিক মহলে বিভিন্ন ধরনের আলোচনা চলমান রয়েছে। কেউ কেউ বলছেন, বৈশ্বিক উদ্যোগে সবসময় ঢাকাকে পাশে চায় বেইজিং। আবার কেউ কেউ বলছে, ভারত–প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে অর্থনৈতিক কাঠামো (আইপিইএফ) নামে মার্কিন নেতৃত্বাধীন নতুন অর্থনৈতিক জোট এবং নিরাপত্তা জোট কোয়াডে ঢাকা যেন যুক্ত না হয়, সে বিষয়ে বেইজিং আবার বার্তা দেবে।
তবে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বলেছিলেন, চীনের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক অনেক গভীর এবং বিস্তৃত। সে জায়গা থেকে আসন্ন সফরে একাধিক সমঝোতা স্মারক ও চুক্তি সই হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এর মধ্যে নবায়ন, নতুন সহযোগিতা, বিশেষ করে দুর্যোগ ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিষয়ক চুক্তি হওয়ার কথা রয়েছে।
আরও পড়ুন: পেলোসির ওপর চীনের নিষেধাজ্ঞা
চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার সাম্প্রতিক উত্তেজনা নিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেছিলেন, আমরা সবসময়ই ‘এক চীন’ নীতিতে বিশ্বাস করি। আমরা চাই যে, এ ইস্যুতে পরিস্থিতির যাতে অবনতি না হয়। কেননা বিশ্ব যথেষ্ট সমস্যার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। তাই আমাদের আহ্বান হচ্ছে যে, সব পক্ষ যাতে এ ইস্যুতে সংযত আচরণ করে এবং জাতিসংঘের এ সংক্রান্ত নিয়ম মেনে চলে। আমরা আশা করি যে, এই পরিস্থিতির আর অবনতি হবে না। কেননা বিশ্ব এখন নতুন সঙ্কট বইতে পারবে না। অন্য বলয়গুলোর সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক কী হবে— তা আমাদের ইস্যু। আমরা চাই না আমাদের অভ্যন্তরীণ ইস্যুতে কেউ পরামর্শ বা নির্দেশনা দিক। এ বিষয়ে বাংলাদেশের জনগণ সিদ্ধান্ত নেবে। তবে চীন বাংলাদেশের একটি বন্ধু রাষ্ট্র এবং তাদের অনেক পরিকল্পনার সঙ্গে আমাদের সম্মতি আছে।
সান নিউজ/কেএমএল