নিজস্ব প্রতিবেদক:
১৯ বছর আগে আজকের এই দিনেই পল্টন ময়দানে বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি- সিপিব’র এক ছাত্র-শ্রমিক সমাবেশে বোমা হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা।
সেদিনের সে ঘটনায় ঘটনাস্থলে চারজন এবং পরে হাসপাতালে একজনসহ মোট পাঁচজন নিহত হন। ২০ জন আহত অবস্থায় বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নেন।
আজ সেই ২০ জানুয়ারিতেই নিম্ন আদালতের রায় এলো সেই হত্যাকান্ডের। । মামলার মোট ১২ জন আসামির মধ্যে ১০জনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আদালত। বাকি ২ জনকে খালাস দেয়া হয়েছে।।
সোমবার ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক রবিউল আলম এই রায় দেন।
গত ১ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপক্ষ এবং আসামি পক্ষের যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে ২০ জানুয়ারি রায়ের দিন নির্ধারণ করেন আদালত। মামলায় মোট ৩৮ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়।
বিচারক তার ১০৪ পৃষ্ঠার রায়ের পর্যবেক্ষণে বলেন, এই জঙ্গিরা সিপিবিকে কাফের মনে করত। তাদের নস্যাত করার জন্য তারা ওই হামলা চালায়।
কোরানের সুরা আল মায়েদার ৩২ নম্বর আয়াত থেকে উদ্ধৃত করে বিচারক বলেন, নরহত্যা অথবা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করা ছাড়া অন্য কোনো কারণে যে ব্যক্তি কাউকে হত্যা করল, সে যেন দুনিয়ার সমস্ত মানুষকে হত্যা করল।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দশ আসামির মধ্যে মুফতি মঈন উদ্দিন শেখ, আরিফ হাসান সুমন, সাব্বির আহমেদ, শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ রায়ের সময় কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন।
আর জাহাঙ্গীর আলম বদর, মহিবুল মুত্তাকিন, আমিনুল মুরসালিন, মুফতি আব্দুল হাই, মুফতি শফিকুর রহমান ও নুর ইসলাম পলাতক রয়েছেন।
পল্টন ময়দানের সেদিনের মহাসমাবেশে বোমা হামলায় নিহত হন খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার সিপিবি নেতা কমরেড হিমাংশু মণ্ডল, রূপসা উপজেলার সিপিবি নেতা ও দাদা ম্যাচ ফ্যাক্টরির শ্রমিক নেতা কমরেড আবদুল মজিদ, ঢাকার ডেমরার লতিফ বাওয়ানি জুট মিলের শ্রমিক নেতা কমরেড আবুল হাসেম ও মাদারীপুরের কমরেড মোক্তার হোসেন মারা যান। ঐ বছরের ২ ফেব্রুয়ারি চিকিৎসাধীন অবস্থায় খুলনা বিএল কলেজের ছাত্র ইউনিয়ন নেতা কমরেড বিপ্রদাস রায়ও ঢাকার বক্ষব্যাধি হাসপাতালে মারা যান। এ ছাড়া এই হামলায় সিপিবির ২০ নেতাকর্মী আহত হন।
ঐ ঘটনার পর সিপিবির তৎকালীন সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান খান বাদী হয়ে মতিঝিল থানায় মামলা দায়ের করেছিলেন। ২০০৩ সালে আসামিদের বিরুদ্ধে নির্ভরযোগ্য তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়নি উল্লেখ করে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে ১৯৯৯ সালে যশোরে উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর সম্মেলনে বোমা হামলা এবং খুলনার আহমদীয়া মসজিদে বোমা হামলা করা হয়।
২০০০ সালে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় শেখ হাসিনার জনসভায় বোমা পেতে রাখা হয়।
এরপর ২০০১ সালের ২০শে জানুয়ারি সিপিবি সমাবেশে বোমা হামলা, ১৪ই এপ্রিল রমনা বটমূলে বোমা হামলা হয়।
বাংলাদেশে এরপর গির্জা এবং সিনেমা হলসহ বিভিন্ন স্থাপনায় ধারাবাহিকভাবে অনেকগুলো বোমা হামলার ঘটনা ঘটে।
একের পর এক বোমা হামলার কারণে সেসময় সিপিবির সমাবেশে বোমা হামলার ঘটনাটি সারাদেশে ব্যাপক আলোচিত হয়।
এরপর ২০০৪ সালে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা ও ২০০৫ সালের আগস্টে দেশব্যাপী সিরিজ বোমা হামলা হয়।
পরবর্তীতে এসব ঘটনায় জঙ্গিরা জড়িত, এমন অভিযোগের প্রেক্ষাপটে ২০০৫ সালে সিপিবি সমাবেশে বোমা হামলার মামলাটি পুনঃতদন্তের আদেশ দেন আদালত।
তদন্তের পর ২০১৩ সালের ২৭ নভেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেন সিআইডি পুলিশের ইন্সপেক্টর মৃনাল কান্তি সাহা।
মামলাটি পুনঃতদন্তের পর ২০১৪ সালের ২১ অগাস্ট আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ গঠন করা হয়। আর আজ সে অভিযোগের চূড়ান্ত রায় আসে। যেখানে ১০ জনতে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়।
সান নিউজ/সালি