খন্দকার আশরাফুল ইসলাম, টাঙ্গাইল : ফিল্মি কায়দায় চলন্ত যাত্রীবাহী নৈশবাসের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে হামলা, ডাকাতি ও দলবেঁধে ধর্ষণ করে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে রাতের আঁধারে পালিয়ে যাওয়া ডাকাত দলের মূলহোতা রাজা মিয়াকে গ্রেফতার করেছে টাঙ্গাইল জেলা গোয়েন্দা পুলিশ।
আরও পড়ুন : ফিল্মি কায়দায় চলন্ত বাসে ডাকাতি-ধর্ষণ
বৃহস্পতিবার (৪ আগস্ট) ভোরে টাঙ্গাইল শহরের নতুন বাস টার্মিনাল এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
সংবাদ মাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন টাঙ্গাইল জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) সরকার মোহাম্মদ কায়সার।
তিনি জানিয়েছেন, রাজা মিয়া কালিহাতী উপজেলার বল্লা গ্রামের হারুন অর রশিদের ছেলে। তিনি টাঙ্গাইল শহরের নতুন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতেন এবং ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে ঝটিকা বাসের চালক ছিলেন।
এসপি কায়সার এ বিষয়ে আরও জানান, মধুপুরে বাসে ডাকাতি ও দলবেঁধে ধর্ষণের ঘটনার পর থেকে বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালিত হয়। রাতে নতুন বাস টার্মিনাল এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়। অন্যদের গ্রেফতারেরও চেষ্টা অব্যাহত আছে।
আরও পড়ুন : ঢাকা আসছেন চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী
এ ঘটনায় অজ্ঞাত ১০ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
প্রসঙ্গত, ফিল্মি কায়দায় চলন্ত যাত্রীবাহী নৈশবাসের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে হামলা, ডাকাতি ও দলবেঁধে ধর্ষণের ঘটনাটি ঘটেছে মঙ্গলবার (২ আগস্ট) কুষ্টিয়া থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী ঈগল পরিবহণের নাইট কোচে।
ডাকাতদলের সদস্যরা কুষ্টিয়া থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী নৈশবাসে যাত্রীবেশে ওঠে প্রথমে গাড়ির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে যাত্রীদের হাত-পা ও চোখ বেঁধে মারধর ও সম্পদ লুট শেষে এক নারীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করে।
অবশেষে বাসের গতিপথ পরিবর্তন করে টাঙ্গাইল জেলার মধুপুরের রাস্তার পাশের বালির ঢিবিতে ঈগল পরিবহনটিকে উল্টিয়ে দিয়ে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে রাতের আঁধারে পালিয়ে যায়। ডাকাত দলের ওই সদস্যরা টানা তিন ঘণ্টা যাত্রীদের ওপর এমন ভয়াবহ অত্যাচার ও পৈশাচিক চালায় বলে জানা যায়।
মঙ্গলবার দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে মধুপুর উপজেলার রক্তিপাড়া জামে মসজিদের উল্টো পাশে মজিবরের বাড়ির সামনের বালির ঢিবিতে বাস উঠিয়ে দিয়ে পালিয়ে যায় ডাকাত দল।
কুষ্টিয়া জেলার বড়াইগ্রাম থেকে ঈগল পরিবহণের বাসটি ৩০-৩৫ জন যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে মঙ্গলবার ছেড়ে আসার পথে এমন লোমহর্ষক ভয়বহ ঘটনা ঘটে।
আরও পড়ুন : করোনায় মৃত্যু ও শনাক্ত বেড়েছে
নাটোর জেলার বড়াইগ্রামের বাসিন্দা ফল ব্যবসায়ী হাবিবুর রহমান হাবিব ওই বাসের নিয়মিত যাত্রী। বাসের সুপার ভাইজার রাব্বি ও হেলপার দুলাল তার পূর্বপরিচিত। কিন্তু এই বাসের চালক নতুন ছিলেন।
তিনি বড়াইগ্রামের তরমুজ চত্বর থেকে আমড়া, কাঁঠাল ও তালসহ বিভিন্ন ফল ঢাকার গুলশানে নিয়ে যেতে বাসে উঠেন।
ব্যবসায়ী হাবিবুর রহমান জানান, ঈগল পরিবহণের বাসটি সিরাজগঞ্জের কাছাকাছি দিবারাত্রি হোটেলে নৈশভোজের জন্য যাত্রা বিরতি দেয়। পরে রাত দেড়টার দিকে পুনরায় যাত্রা শুরু করে। পথে কাঁধে ব্যাগ বহন করা ১০-১২ জন তরুণ যাত্রী বাসে ওঠেন। এ সময় বাসের সবাই প্রায় ঘুমন্ত অবস্থায় ছিল।
বাসটি বঙ্গবন্ধু সেতু পার হওয়ার পর যাত্রীবেশে থাকা ওই ডাকাতদল অস্ত্রের মুখে একে একে ঘুমন্ত যাত্রীদের বেঁধে ফেলেন। প্রত্যেক যাত্রীর চোখ ও মুখ বেঁধে চালককেও জিম্মি করে তারা বাসের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। পাঁচ মিনিটের মধ্যে সব যাত্রীর কাছ থেকে মোবাইল, টাকা, গহনা লুট করে নেয়। তারপর এক নারী যাত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করে ডাকাতদলের সদস্যরা।
আরও পড়ুন : বৃহস্পতিবার ঢাকায় যেসব মার্কেট বন্ধ
তিনি আরও জানান, পরে বাস বিভিন্ন রাস্তায় ঘুরিয়ে দীর্ঘ ৩ ঘণ্টার মতো নিয়ন্ত্রণে রাখে। শেষে পথ পরিবর্তন করে টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ মহাসড়কের মধুপুর উপজেলার রক্তিপাড়া জামে মসজিদের পাশে বালির ঢিবিতে বাস উঠিয়ে ডাকাত দল নেমে যায়।
হাবিবুর রহমান বলেন, বুধবার (৩ আগস্ট) সকালে স্থানীয় বাসিন্দারা আমাদের উদ্ধার করেছে।
কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর থানার তারাগুনিয়া গ্রামের শিল্পী বেগম অসুস্থ মেয়ে জেসমিনকে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিয়ে যাচ্ছিলেন। বুধবার তার কানের অপারেশন হওয়ার কথা ছিল।
তিনি জানান, তার কাছে থাকা ৩০ হাজার টাকা ও মোবাইল ছিনিয়ে নিয়েছে ডাকাতরা। এ সময় তার স্বামী পিয়ার আলীকে ছুরি দিয়ে আঘাত করে আহত করা হয়েছে।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত নারায়ণগঞ্জের বাসিন্দা আব্দুর রশিদ। তিনি নাটোর থেকে বাড়ি যাচ্ছিলেন অসুস্থ মাকে দেখার জন্য। বেতনের ২২ হাজার ৮০০ টাকা ডাকাতরা নিয়ে গেছে।
সংবাদ পেয়ে বুধবার (৩ আগস্ট) সকালে মধুপুর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের উদ্ধার করে।
মধুপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) এনামুল হক গাড়িতে থাকা দেশীয় অস্ত্র উদ্ধারের কথা স্বীকার করেছেন।
সান নিউজ/এইচএন