খন্দকার আশরাফুল ইসলাম, টাঙ্গাইল : ফিল্মি কায়দায় চলন্ত যাত্রীবাহী নৈশবাসের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে হামলা, ডাকাতি ও সংঘবদ্ধ ধর্ষণ শেষে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে রাতের আঁধারে পালিয়েছে একদল ডাকাত। হ্যাঁ এমনই এক ভয়াবহ লোমহর্ষক ঘটনা ঘটেছে বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব পাশের মহাসড়কে।
আরও পড়ুন : আমাকে সরিয়ে দিতে চায়
ঘটনাটি ঘটেছে মঙ্গলবার (২ আগস্ট) কুষ্টিয়া থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী ঈগল পরিবহণের নাইট কোচে।
ডাকাতদলের সদস্যরা কুষ্টিয়া থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী নৈশবাসে যাত্রীবেশে ওঠে প্রথমে গাড়ির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে যাত্রীদের হাত-পা ও চোখ বেঁধে মারধর ও সম্পদ লুট শেষে এক নারীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করে।
অবশেষে বাসের গতিপথ পরিবর্তন করে টাঙ্গাইল জেলার মধুপুরের রাস্তার পাশের বালির ঢিবিতে ঈগল পরিবহনটিকে উল্টিয়ে দিয়ে শাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে রাতের আঁধারে পালিয়ে যায়। ডাকাত দলের ওই সদস্যরা টানা তিন ঘণ্টা যাত্রীদের ওপর এমন ভয়াবহ অত্যাচার ও পৈশাচিক চালায় বলে জানা যায়।
আরও পড়ুন : করোনায় মৃত্যু ও শনাক্ত বেড়েছে
মঙ্গলবার দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে মধুপুর উপজেলার রক্তিপাড়া জামে মসজিদের উল্টো পাশে মজিবরের বাড়ির সামনের বালির ঢিবিতে বাস উঠিয়ে দিয়ে পালিয়ে যায় ডাকাত দল।
কুষ্টিয়া জেলার বড়াইগ্রাম থেকে ঈগল পরিবহণের বাসটি ৩০-৩৫ জন যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে মঙ্গলবার ছেড়ে আসার পথে এমন লোমহর্ষক ভয়বহ ঘটনা ঘটে।
নাটোর জেলার বড়াইগ্রামের বাসিন্দা ফল ব্যবসায়ী হাবিবুর রহমান হাবিব ওই বাসের নিয়মিত যাত্রী। বাসের সুপার ভাইজার রাব্বি ও হেলপার দুলাল তার পূর্বপরিচিত। কিন্তু এই বাসের চালক নতুন ছিলেন।
তিনি বড়াইগ্রামের তরমুজ চত্বর থেকে আমড়া, কাঁঠাল ও তালসহ বিভিন্ন ফল ঢাকার গুলশানে নিয়ে যেতে বাসে উঠেন।
আরও পড়ুন : এবার সতর্কতা বাড়াল তাইওয়ান
ব্যবসায়ী হাবিবুর রহমান জানান, ঈগল পরিবহণের বাসটি সিরাজগঞ্জের কাছাকাছি দিবারাত্রি হোটেলে নৈশভোজের জন্য যাত্রা বিরতি দেয়। পরে রাত দেড়টার দিকে পুনরায় যাত্রা শুরু করে। পথে কাঁধে ব্যাগ বহন করা ১০-১২ জন তরুণ যাত্রী বাসে ওঠেন। এ সময় বাসের সবাই প্রায় ঘুমন্ত অবস্থায় ছিল।
বাসটি বঙ্গবন্ধু সেতু পার হওয়ার পর যাত্রীবেশে থাকা ওই ডাকাতদল অস্ত্রের মুখে একে একে ঘুমন্ত যাত্রীদের বেঁধে ফেলেন। প্রত্যেক যাত্রীর চোখ ও মুখ বেঁধে চালককেও জিম্মি করে তারা বাসের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। পাঁচ মিনিটের মধ্যে সব যাত্রীর কাছ থেকে মোবাইল, টাকা, গহনা লুট করে নেয়। তারপর এক নারী যাত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করে ডাকাতদলের সদস্যরা।
তিনি আরও জানান, পরে বাস বিভিন্ন রাস্তায় ঘুরিয়ে দীর্ঘ ৩ ঘণ্টার মতো নিয়ন্ত্রণে রাখে। শেষে পথ পরিবর্তন করে টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ মহাসড়কের মধুপুর উপজেলার রক্তিপাড়া জামে মসজিদের পাশে বালির ঢিবিতে বাস উঠিয়ে ডাকাত দল নেমে যায়।
আরও পড়ুন : ভোলায় সকাল-সন্ধ্যা হরতাল
হাবিবুর রহমান বলেন, বুধবার (৩ আগস্ট) সকালে স্থানীয় বাসিন্দারা আমাদের উদ্ধার করেছে।
কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর থানার তারাগুনিয়া গ্রামের শিল্পী বেগম অসুস্থ মেয়ে জেসমিনকে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিয়ে যাচ্ছিলেন। বুধবার তার কানের অপারেশন হওয়ার কথা ছিল।
তিনি জানান, তার কাছে থাকা ৩০ হাজার টাকা ও মোবাইল ছিনিয়ে নিয়েছে ডাকাতরা। এ সময় তার স্বামী পিয়ার আলীকে ছুরি দিয়ে আঘাত করে আহত করা হয়েছে।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত নারায়ণগঞ্জের বাসিন্দা আব্দুর রশিদ। তিনি নাটোর থেকে বাড়ি যাচ্ছিলেন অসুস্থ মাকে দেখার জন্য। বেতনের ২২ হাজার ৮০০ টাকা ডাকাতরা নিয়ে গেছে।
সংবাদ পেয়ে বুধবার (৩ আগস্ট) সকালে মধুপুর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের উদ্ধার করে।
মধুপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) এনামুল হক গাড়িতে থাকা দেশীয় অস্ত্র উদ্ধারের কথা স্বীকার করেছেন।
আরও পড়ুন : দেশে আরও ৩ জনের মৃত্যু
ঘটনাস্থলে বিকেল ৫টায় গিয়ে দেখা যায়, ডিবি পুলিশের একটি দল তদন্ত কাজ চালাচ্ছে। পুলিশের সহযোগিতায় একদল উদ্ধারকর্মী বাসটি উদ্ধার করছেন।
টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে থানায় এসে বাসযাত্রী ও সংশ্লিষ্টদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। এ সময় ময়মনসিংহ থেকে আসা ডিএনএ পরীক্ষাগারের কর্মীদের থানায় অবস্থান করতে দেখা যায়।
এ বিষয়ে মধুপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মাজহারুল আমিন বলেন, ঘটনার রহস্য উদঘাটনে তদন্ত কাজ চলছে। বাসের এক যাত্রীকে বাদী করে মামলার প্রক্রিয়া চলছে।
কাউকে আটক বা জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে কি না জানতে চাইলে তিনি জানান, সবদিক বিবেচনায় তদন্ত চলছে। তথ্য বলার মতো সময় এখনো আসেনি।
টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার এ বিষয়ে জানান, কুষ্টিয়ার এক যাত্রী বাদী হয়ে অজ্ঞাত ১০-১২ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। তদন্তের ভালো অগ্রসর আছে। এ পর্যন্ত কাউকে আটক করা হয়নি। সময় হলে গণমাধ্যমকে সব জানানো হবে।
সান নিউজ/এইচএন