সান নিউজ ডেস্ক: দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলায় কক্সবাজারের টেকনাফ থানার বরখাস্ত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ২০ বছর ও তার স্ত্রী চুমকি কারনের ২১ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী মাহমুদুল হক মাহমুদ। একই সঙ্গে প্রদীপের ঘুষের টাকায় চুমকির নামে নেওয়া কোটি টাকার বাড়ি, গাড়ি ও ফ্ল্যাট রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত ঘোষণা করেন আদালত।
আরও পড়ুন: রাস্তার পাশে মিলল ৫টি পাইপগান
বুধবার (২৭ জুলাই)। চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিশেষ জজ মুন্সী আবদুল মজিদের আদালতে আজ এ রায় ঘোষণা করেন। সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলার অন্যতম আসামি টেকনাফ মডেল থানার বরখাস্ত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ দেশ জুড়ে ব্যাপক আলোচিত-সমালোচিত সাবেক পুলিশ অফিসার। রায় ঘোষণার সময় প্রদীপ ও চুমকি-দুজনই আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
প্রদীপের চেয়ে তার স্ত্রী চুমকির সাজা বেশি হওয়ার বিষয়ে দুদকের আইনজীবী মাহমুদুল হক বলেন, প্রদীপ তিনটি ধারায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। তার স্ত্রী চুমকি দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন চারটি ধারায়। তিনটি ধারায় প্রদীপ ও চুমকি একই সাজা পেয়েছেন। একটি ধারায় ৮ বছর, আরেকটি ধারায় ২ বছর ও অপর ধারায় তাদের ১০ বছর করে কারাদণ্ড হয়েছে। সব কটি সাজা একসঙ্গে চলবে। একই সঙ্গে অবৈধভাবে যে সম্পদের মালিক দুজন হয়েছেন, তা রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করার আদেশ দিয়েছে আদালত। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক ও দুদককে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
দুদকের এই আইনজীবী বলেন, একটি ধারায় প্রদীপ খালাস পেয়েছেন। কিন্তু তার স্ত্রী চুমকি দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। এ কারণে প্রদীপের চেয়ে চুমকির সাজা বেশি। দুদক আইন ২০০৪-এর ২৬ (২) ধারার অপরাধ, অর্থাৎ সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগ থেকে প্রদীপকে খালাস দিয়েছেন আদালত। আর এই ধারায় চুমকিকে এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এ ছাড়া তাঁকে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে; অনাদায়ে আরও এক মাসের সশ্রম কারাদণ্ড।
এর আগে গত ২৯ মে এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষ্য-জেরা শেষ হয়। শুনানিতে আসামি প্রদীপ ও তাঁর স্ত্রী চুমকির সর্বোচ্চ শাস্তি চেয়েছে দুদক। মামলায় সাক্ষী করা হয়েছিল মোট ২৯ জনকে। তাদের মধ্যে তদন্ত কর্মকর্তা মো. রিয়াজ উদ্দিনসহ ২৪ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়। গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর প্রদীপ ও চুমকির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে এ মামলা বিচারে আসে।
আরও পড়ুন: ফিলিপাইনে ৭.১ মাত্রার ভূমিকম্প
জানা গেছে, চুমকির ৪ কোটি ৮০ লাখ ৬৪ হাজার ৬৫১ টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের বিপরীতে বৈধ ও গ্রহণযোগ্য আয় পাওয়া যায় ২ কোটি ৪৪ লাখ ৬৬ হাজার ২৩৪ টাকা। বাকি সম্পদ অর্থাৎ ২ কোটি ৩৫ লাখ ৯৮ হাজার ৪১৭ টাকার সম্পদ অবৈধভাবে অর্জনের প্রমাণ পেয়েছে দুদক। চট্টগ্রামের পাথরঘাটায় ছয়তলা বাড়ি, ষোলশহরে একটি বাড়ি, ৪৫ ভরি স্বর্ণ, একটি কার ও মাইক্রোবাস, কক্সবাজারের একটি ফ্ল্যাটের মালিক প্রদীপের স্ত্রী চুমকি। প্রদীপের ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থে স্ত্রী চুমকি এসব সম্পদ অর্জন করেন বলে দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্তে উঠে এসেছে। এছাড়া চুমকি নিজেকে মাছ ব্যবসায়ী দাবি করলেও তার কোনো প্রমাণ পায়নি দুদক।
প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ৩১ জুলাই কক্সবাজারে অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খানকে এপিবিএন চেকপোস্টে গুলি করে হত্যা করা হয়। ওই ঘটনায় টেকনাফের ওসি প্রদীপকে কারাগারে যাওয়ার পর তার অবৈধ সম্পদের খোঁজে তদন্তে নামে দুদক। ২০২০ সালের ২৩ আগস্ট দুদক চট্টগ্রাম সমন্বিত কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিন বাদী হয়ে প্রদীপ ও তার স্ত্রী চুমকির বিরুদ্ধে দুর্নীতির মাধ্যমে সম্পত্তি অর্জনের মামলা করেন।
আরও পড়ুন: দেশের জনসংখ্যা সাড়ে ১৬ কোটি
মামলায় প্রদীপ ও চুমকির বিরুদ্ধে তিন কোটি ৯৫ লাখ পাঁচ হাজার ৬৩৫ টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন, সম্পদের তথ্য গোপন ও অর্থপাচারের অভিযোগ আনা হয়। দুদক আইন ২০০৪-এর ২৬ (২) ও ২৭ (১), মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২-এর ৪ (২) ধারা, ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারা এবং দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় তাদের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করা হয়েছিল।
এর আগে ২০২০ সালের ৩১ জুলাই টেকনাফের বাহারছড়া তল্লাশিচৌকিতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান। এই হত্যা মামলায় প্রদীপসহ দুজনের মৃত্যুদণ্ড ও ছয়জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে। গত ৩১ জানুয়ারি এই রায় দেন আদালত।
আরও পড়ুন: ইমরান খানের দখলে পাঞ্জাব
মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ড পাওয়া প্রদীপ ঘটনার পর থেকেই গ্রেফতার হয়ে কারাগারে রয়েছেন। তার স্ত্রী চুমকি চলতি বছরের ২৩ মে আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। পরে আদালত শুনানি শেষে তাকে কারাগারে পাঠিয়েছেন।
সান নিউজ/কেএমএল