‘প্রযুক্তি খাতে নানাবিধ সমস্যার মধ্যে সাইবার ক্রাইম বর্তমানে একটি জটিল আন্তর্জাতিক সমস্যা। প্রতিনিয়ত এই সাইবার ক্রাইমের শিকার হচ্ছে সরকার, করপোরেট প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে ছোট বড় সব আর্থিক ও বাণিজ্যিক সংস্থাও। এ জন্য বর্তমান বিশ্বে প্রযুক্তি ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো সাইবার ক্রাইম মোকাবিলা। আর বিশ্বব্যাপী সামাজিক ও অর্থনৈতিক অগ্রগতির ক্ষেত্রে সাইবার ক্রাইম মোকাবেলা করাটাই এখন বড় চ্যালঞ্জ। প্রযুক্তি যত দ্রুত এগোচ্ছে, সাইবার ক্রাইম অপরাধীরা তার চেয়ে বেশি দ্রুত গতিতে এগোচ্ছে’।
‘চতুর্থ শিল্পবিপ্লব ও সাইবার নিরাপত্তার ঝুঁকি মোকাবিলায় তথ্যপ্রযুক্তিবিদদের প্রস্তুতি’ স্লোগান নিয়ে সিটিও টেক সামিট- ২০২০’ এ এসব কথা বলেন বিভিন্ন দেশ থেকে আগত প্রযুক্তিবিদ এবং প্রযুক্তি কর্মকর্তারা। মুজিববর্ষকে সামনে রেখে শনিবার ঢাকায় অনুষ্ঠিত এই সন্মেলনে যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশের ৪০ জন অতিথি অংশ নেন। তারা বলেন, ‘হ্যাকাররা আমাদের দুর্বল এবং অনিরাপদ সিস্টেমগুলি হ্যাক করে ব্যক্তিগত ও রাষ্ট্রীয় গোপনীয় তথ্য বা নথি চুরি করছে যা ব্যক্তি বা রাষ্ট্রের জন্য হুমকি। এখনই সাইবার ক্রাইম প্রতিরোধ না করতে পারলে পরবর্তীতে তা আরও কঠিন হয়ে পড়বে আমাদের নিরাপদ ইন্টারনেট ব্যবস্থাপনা। তথ্য প্রযুক্তির নানাবিধ ক্ষেত্রের মধ্যে শুধু সাইবার সিকিউরিটিতেই ২০২১ সালের মধ্যে ৩৫ লাখ কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। কিন্তু এই সেক্টরে ক্রমাগত যে হারে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাচ্ছে তার তুলনায় দক্ষ, অভিজ্ঞ ও পেশাদার লোকের সংখ্যা খুবই কম বলে উল্লেখ করেন তারা’।
সকালে উদ্বোধন সেশনে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার রিভা গাঙ্গুলী দাস বলেন, ‘বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ক্রমেই বাড়ছে, ডিজিটালের পথেও খুব দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে’। জনসংখ্যাবহুল এই দেশের তরুণরাই প্রযুক্তিতে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন রিভা গাঙ্গুলি। তিনি নিজ দেশের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘তথ্য প্রযুক্তিতে ভারত বিশ্বের বুকে একটি শক্ত অবস্থান তৈরি করে নিতে সমর্থ হয়েছে আর সেই ভারত চায় সামনের দিনগুলোতে এক্ষেত্রে বাংলাদেশকে তার অংশীদার করতে। আর এ জন্যই ভারত সরকার বাংলাদেশে ১২টি হাইটেক পার্ক নির্মাণের জন্য ১৯৩ মিলিয়ন ডলারের সহায়তা দিচ্ছে। এগুলোতে ভারত এবং বাংলাদেশের সমন্বয়ে ৩০ হাজার যুবককে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ আইটি জনশক্তি হিসেবে তৈরি করা হবে।’
প্রধানমন্ত্রীর অর্থ উপদেষ্টা মশিউর রহমান বলেন, ‘শুধু সেমিনার সিম্পোজিয়ামের মাধ্যমে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষকে তথ্য-প্রযুক্তি খাতে সম্পৃক্ত করা যাবে না। এজন্য সরকারকে মুখ্য ভূমিকা পালন করতে হবে। পাশাপাশি চতূর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ আমাদের সবাইকেই গ্রহণ করতে হবে’।
সন্মেলনে ৮টি সেমিনার ও প্যানেল আলোচনায় অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিরা সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ও সেবা সম্পর্কে বিভিন্ন বিষয় জানার চেষ্টা করেন।
সিটিও ফোরামের সভাপতি তপন কান্তি সরকার বলেন, ‘ব্লক চেইন বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের মতো বিষয়গুলো নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে। আধুনিক প্রযুক্তি খাতের নানা বিষয় নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামত তুলে ধরতে এটি হতে যাচ্ছে অনন্য একটি আয়োজন।’
সম্মেলনে দেশের প্রযুক্তি খাতের সরকারি এবং বেসরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নীতিনির্ধারণী ব্যক্তিরা অংশ নিয়ে তাদের মতামতও তুলে ধরেন। সম্মেলনে ডিজিটাল রূপান্তর, চতুর্থ শিল্পবিপ্লব, ডিজিটাল বাংলাদেশ, সাইবার চ্যালেঞ্জসহ আধুনিক প্রযুক্তির নানা বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।