নিজস্ব প্রতিবেদক:
করোনা টেস্টের নামে ভূঁয়া ফলাফল দেয়া, লাইসেন্সের মেয়াদ না থাকাসহ অন্তহীন অনিয়মের অভিযোগে রাজধানীর রিজেন্ট হাসপাতাল বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ফলে হাসপাতালটির উত্তরা ও মিরপুরের দুটি শাখার সকল কার্যক্রমই বন্ধ করা হচ্ছে।
মঙ্গলবার (৭ জুলাই) সন্ধ্যায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহ) ডা. আমিনুল হাসান স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রিজেন্ট হাসপাতাল লিমিটেড, উত্তরা এবং রিজেন্ট হাসপাতাল লিমিটেড, মিরপুর ঢাকা (উভয় বেসরকারি হাসপাতাল), মার্চ-২০২০ থেকে কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিয়ে আসছিল। কিন্তু গত ৬ জুলাই র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) অভিযানে (মোবাইল কোর্ট পরিচালনাকালে) রিজেন্ট হাসপাতাল লি., উত্তরা শাখায় (মূল শাখা) বিভিন্ন অনিয়ম ধরা পড়ে, যা বিভিন্ন ইলেকট্রিক মিডিয়া এবং দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।
ওই হাসপাতাল দুটি রোগীদের কাছ থেকে অন্যায়ভাবে বিরাট অংকের টাকা আদায় করছে। অনুমোদন না থাকা সত্ত্বেও RT-PCR পরীক্ষার নামে ভূয়া রিপোর্ট দিয়ে টাকা হাতিয়ে নেওয়া, তাগিদ দেওয়া সত্ত্বেও লাইসেন্স নবায়ন না করাসহ আরও অনিয়ম করেছে বলে প্রমাণিত হয়। এসব অনিয়মের কারণে এবং “The Medical Pactice & Private Clinic & Laboratories Regalation Ordinance-1982’’ অনুযায়ী হাসপাতালের কার্যক্রম অবিলম্বে বন্ধের নির্দেশ দেয়া হলো।
এর আগে বেশ কয়েকটি অভিযোগে মঙ্গলবার রিজেন্ট হাসপাতাল ও রিজেন্ট গ্রুপের প্রধান কার্যালয় সিলগালা করেছে র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। সোমবার সকাল থেকে চলা অভিযানে বাহিনীটি একাধিক অভিযোগ পায় প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম সাংবাদিকদের বলেন, 'রিজেন্ট গ্রুপের প্রধান কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে সেখানেও অনুমোদনহীন টেস্ট কিট ও বেশ কিছু ভুয়া রিপোর্ট পাওয়া গেছে। এজন্য রিজেন্ট হাসপাতাল ও রিজেন্ট গ্রুপের প্রধান কার্যালয় সিলগালা করা হয়েছে। এ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীদের কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। এসব অপরাধ ও টাকার নিয়ন্ত্রণ চেয়ারম্যান সাহেব (রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহেদ) নিজে করতেন অফিসে বসে। এই অপকর্মগুলো রিজেন্টের প্রধান কার্যালয় থেকেই হতো বিধায়, এটি সিলগালা করা হয়েছে। পাশাপাশি রোগীদের স্থানান্তর করে হাসপাতাল দুটিও সিলগালা করা হয়েছে।'
এর আগে সোমবার অভিযান শেষে র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম বলেন, ‘রিজেন্ট হাসপাতাল ও প্রধান কার্যালয় সিলগালা করে দিয়েছি। হেড অফিসে বসেই মিথ্যা রিপোর্ট তারা তৈরি করতো। হেড অফিসে ৫/৭ দিনের স্যাম্পল এক সাথে করে ফেলে দিতো। ভুয়া রিপোর্টও পেয়েছি। অনুমোদনহীন র্যাপিড কিট আমরা পেয়েছি।’
সেদিন বিকালে রিজেন্ট হাসপাতালে অভিযানের পর র্যাবের ম্যাজিস্ট্রেট বলেছিলেন, ‘এসব অনিয়মের সাথে হাসপাতালটির চেয়ারম্যানই জড়িত এবং তিনি নিজেই এসব ডিল করেছেন।’
হাসপাতালটির মালিক মো. শাহেদ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের একজন নেতা। সোমবার হাসপাতালটির আটজন কর্মকর্তাকে র্যাব আটক করলেও মালিককে খুঁজে পাচ্ছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
দেশে করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা নিয়ে এটি দ্বিতীয় কোনো প্রতিষ্ঠান যার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হলো। এর আগে জেকেজি নামক একটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ ওঠার পর আইন প্রয়োগকারী সংস্থা তার প্রমাণ পেয়ে সেটি বন্ধ করে দিয়েছিল। আটকও করা হয়েছিল কয়েকজনকে।
গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্তের পর যখন কোনো হাসপাতাল করোনা রোগীদের চিকিৎসা দিতে রাজি হচ্ছিল না তেমন পরিপ্রেক্ষিতে রিজেন্টসহ তিনটি হাসপাতালের সাথে চুক্তি করে স্বাস্থ্য বিভাগ। চুক্তির আওতায় সরকার সেখানে ডাক্তার, নার্সসহ কিছু জনবলও নিয়োগ দেয়। হাসপাতালটির করোনা রোগীদের বিনামূল্যে চিকিৎসা দেয়ার কথা ও পরে সরকারের সেই টাকা পরিশোধ করার কথা ছিল।