নিজস্ব প্রতিবেদক:
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ গেল এক মাসে যে হারে ছড়িয়েছে তার বেশির ভাগই ঈদুল ফিতরে মানুষের বেপরোয়া চলাচলের ফল।
একইভাবে আসন্ন কোরবানি ঈদেও যদি সেই চিত্র দেখা যায়, তাহলে আগস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহের পর সংক্রমণের আরেকটি বড় ধাক্কা আসবে; যার পরিণতিতে সংক্রমণের এখন যে ধীরগতি রয়েছে বা নিচের দিকে নামার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, সেটা তীব্র হয়ে দীর্ঘমেয়াদি হতে পারে।
তাই দেরি না করে এখনই কোরবানির পশুর হাট ব্যবস্থাপনা, অফিস, গার্মেন্ট ও অন্যান্য শিল্প-কারখানায় ছুটির ক্ষেত্রে পরিকল্পনা গ্রহণ এবং তা দ্রুত বাস্তবায়ন জরুরি। করোনাভাইরাস মোকাবেলায় কাজ করা সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ের কয়েকজন বিশেষজ্ঞ এমন অভিমত তুলে ধরেন। এমনকি সরকার গঠিত কারিগরি বিশেষজ্ঞ কমিটির সদস্যরাও এ বিষয়ে জোর দিয়েছেন।
বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ বলছেন, কোরবানির সঙ্গে শুধু ধর্মীয় অনুভূতিই নয়, দেশে বড় একটি শিল্প ও অর্থনৈতিক খাতও যুক্ত। তাই ঈদকেন্দ্রিক হাট বা পশু কেনাবেচা বন্ধ রাখা যাবে না। তাই পশুর হাটে কিভাবে স্বাস্থ্যবিধি কার্যকর করা যায় সেদিকে এখনই নজর দিতে হবে। আবার কেউ কেউ প্রয়োজনে ধর্মীয় অনুশাসনের মধ্যে থেকেই কোরবানির পশু কেনাবেচার পরিবর্তে ওই টাকা অভীষ্ট জনগোষ্ঠীর মধ্যে বিশেষ ব্যবস্থায় বিতরণের উপায় বের করার তাগিদ দিয়েছেন। এ ছাড়া ছুটি ভাগ করে দেওয়ার বিষয়ে বলছেন কেউ কেউ।
গত ২৫ মে ঈদুল ফিতর উদ্যাপিত হয়। ওই সময় সাধারণ ছুটি বলবৎ ছিল। জরুরি সেবা ছাড়া গণপরিবহনসহ অন্য সব কিছুই ছিল বন্ধ। ঈদের আগে ঢাকা ছাড়ার ব্যাপারে সরকার কঠোর অবস্থান নেওয়ার কথা বললেও শেষ পর্যন্ত ব্যক্তিগত গাড়িতে করে ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়ি ঈদ করতে যাওয়ার অনুমতি দেয়। এ সুযোগে দলে দলে মানুষ ঢাকা ছাড়ে এবং একইভাবে ঈদের পর ঢাকায় ফিরে আসে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, ঈদুল ফিতরের আগে ২০ মে পর্যন্ত দেশে মোট শনাক্তকৃত করোনা রোগী ছিল ২৬ হাজার ৭৩৮ জন। ঈদের পর ১০ দিন পর্যন্ত প্রতি ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত আড়াই হাজারের কাছাকাছি ছিল। ঈদের আগের পাঁচ দিন ও পরের পাঁচ দিনে শনাক্তসংখ্যা ২০ হাজার বেড়ে ১ জুন দাঁড়ায় ৪৭ হাজার ১৫৩। এর পর থেকে অনেকটা দ্রুত বাড়তে থাকে শনাক্তসংখ্যা। দেশে প্রথম ৫০ হাজার করোনা রোগী শনাক্ত হয় ৮৭ দিনে (৮ মার্চ থেকে ২ জুন—৫২,৪৪৫), পরের ৫০ হাজার ছাড়ায় মাত্র ১৬ দিনে (১৮ জুন—১০২,২৯২) এবং এর পরের ৫০ হাজার পার হতে সময় লেগেছে ১৪ দিন (গতকাল পর্যন্ত ১৫৩,২৭৭)। ঈদের এক সপ্তাহ পর থেকে এক মাসে শনাক্ত হয় এক লাখের বেশি। এ জন্য ঈদুল ফিতর কেন্দ্রিক অনিয়ন্ত্রিত চলাচলকেই বিশেষজ্ঞরা দায়ী করেছেন।
সান নিউজ/ আরএইচ