সান নিউজ ডেস্ক : ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্কর দেশটির বিমান বাহিনীর একটি বিশেষ ফ্লাইটে এক দিনের সংক্ষিপ্ত সফরে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় এসে পৌঁছেছেন।
আরও পড়ুন : শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান
বৃহস্পতিবার (২৮ এপ্রিল) দুপুর ২টা ১৫ মিনিটে ঢাকার কুর্মিটোলায় বাংলাদেশ বিমান বাহিনী (বিএএফ) বঙ্গবন্ধু ঘাঁটিতে ভারতীয় বিমান বাহিনীর একটি বিশেষ ফ্লাইটে পৌঁছান তিনি।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, জয়শঙ্কর বিএএফ বঙ্গবন্ধু ঘাঁটিতে পৌঁছালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন তাকে স্বাগত জানান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে জয়শঙ্কর বিকেল ৪টায় গণভবনে সাক্ষাৎ করবেন। এরপর বিকেল ৫টায় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেনের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
আরও পড়ুন : রাশিয়া বাণিজ্যকে অস্ত্র হিসেবে বিবেচনা করে
এরপর ড. মোমেনের আমন্ত্রণে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ইফতার এবং নৈশভোজে অংশ নেবেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বৈশ্বিক রাজনৈতিক টালমাটাল পরিস্থিতির মধ্যে জয়শঙ্করের এ সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নয়া দিল্লিতে আমন্ত্রণ জানানোসহ দু’দেশের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। পাশাপাশি গুরুত্ব পাবে ভূ-রাজনৈতিক ইস্যু।
মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, পানি ইস্যুতে তিস্তার বিষয়টি অতীতের মতো তোলা হবে। তবে আলোচনাধীন কুশিয়ারা নদীর পানি উত্তোলন বিষয়টিতে সুরাহার জন্য দ্রুত সময়ের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সাক্ষরের ব্যাপারে তাগাদা দেবে ঢাকা।
আরও পড়ুন : টিকিট কালোবাজারি: সহজ কর্মকর্তা চাকরিচ্যুত
তাছাড়া কুশিয়ারা নদীর পানি রহিমপুর খাল দিয়ে কৃষিকাজে ব্যবহারের জন্য ভারতের আপত্তির বিষয়টি নিষ্পত্তিতে জোর দেওয়া হবে। অপরদিকে দেশের ৬ টি অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন ইস্যুতে আগ্রহ দেখাতে পারে নয়া দিল্লি।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পূর্ব) মাশফি বিনতে শামস ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফর নিয়ে সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, জয়শঙ্করের আমন্ত্রণপত্র নিয়ে আসার বিষয়টা আমরা জানি না। আমাদের আমন্ত্রণপত্রের কথা বলা হয়নি। বলেছে প্রধানমন্ত্রীর সফরটা নিয়ে আলোচনা করবে। এর আগে তো ভারবালি দাওয়াত ছিল।
মাশফি মোমেন-জয়শঙ্করের দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে আলোচনার বিষয়ে বলেন, আমরা সব মিটিংয়ে সবগুলো বিষয় তুলে ধরি। এবারও তুলে ধরার চেষ্টা থাকবে। বিশেষ করে পানি, সীমান্ত ইস্যু, ব্যবসা-বাণিজ্য থাকবে।
আরও পড়ুন : চালের দাম আর বাড়বে না
তাছাড়া নতুন নতুন অনেক বিষয় আলোচনায় আসতে পারে, যেখানে আমাদের একসঙ্গে কাজ করার সুযোগ আছে। এখন যেহেতু সময়টা আনস্টেবল, সার্বিক বিশ্বের পরিস্থিতি, ইউক্রেন ইস্যু, আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোর অবস্থান নিয়ে আলোচনা হতে পারে।
বুধবার (২৭ এপ্রিল) ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর ২৮-৩০ এপ্রিল বাংলাদেশ ও ভুটানে সরকারি সফর করবেন। জয়শঙ্করের এ সফরকে দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর উদযাপনসহ দুই দেশের উচ্চ পর্যায়ের সফর ও মতবিনিময়ের প্রেক্ষাপট থেকে বিবেচনা করা যায়।
এদিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন জয়শঙ্কর একটা সুখবর নিয়ে আসবেন বলে আগ্রহের সৃষ্টি করেছেন। তবে কী খবর নিয়ে আসবেন জয়শঙ্কর, সেটি স্পষ্ট করেননি তিনি।
আরও পড়ুন : ইথিওপিয়ায় সশস্ত্র হামলায় ২০ মুসল্লির মৃত্যু
মঙ্গলবার (২৬ এপ্রিল) ড. মোমেন সাংবাদিকদের জানান, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হয়ত একটা সুখবর নিয়ে আসবেন। তবে কী খবর নিয়ে আসবেন এখনও আমরা জানি না। ভারতের গণমাধ্যমের বরাতে আমরা জেনেছি, তিনি আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে ভারত সফরের আমন্ত্রণ জানাতে পারেন।
জয়শঙ্করের সফরে আলোচনার বিষয়ে জানতে চাইলে মোমেন জানান, সবকিছু নিয়ে আলোচনা হবে। এর মধ্যে তিস্তা নদীর পানি বণ্টনসহ অন্যান্য বিষয়, সীমান্ত ব্যবস্থাপনা, বাণিজ্য বিষয়ক বিভিন্ন অমীমাংসিত বিষয় রয়েছে। আমরা বাণিজ্য আরও বাড়াতে চাই। ইউক্রেন ইস্যু নিয়ে আলোচনা হবে বলেও ইঙ্গিত দেন ড. মোমেন।
চলতি বছরের ২৬ জানুয়ারি ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসে বঙ্গবন্ধু কন্যার নয়া দিল্লি সফর নিয়ে আলোচনা ছিল। কিন্তু শেষ অবদি তা হয়নি। আশা করা হচ্ছে, শেখ হাসিনা আগামী জুনে নয়া দিল্লি সফর করবেন।
আরও পড়ুন : নিউমার্কেটে সংঘর্ষের ঘটনায় ৫ ছাত্র গ্রেফতার
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গত বছর বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীতে মার্চে ঢাকা সফর করেন । একই বছরের ডিসেম্বরে ঢাকায় আসেন ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ।
প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার পর প্রথমবার ঢাকা সফর করেন জয়শঙ্কর। সবশেষ গত বছরের মার্চে শেষবারের মতো ঢাকা সফর করেছিলেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এটি জয়শঙ্করের তৃতীয় ঢাকা সফর।
সান নিউজ/এইচএন