নিজস্ব প্রতিনিধি:
করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ পরিস্থিতিতে সচিবালয়ের দফতরে অফিস করার থেকে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে কাজ করার আগ্রহ দেখাচ্ছেন অধিকাংশ মন্ত্রী। করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে মন্ত্রীরা ভার্চুয়াল অফিসের দিকে ঝুঁকছেন। তারা ই-ফাইলিং পদ্ধতিতে ফাইল ছাড়ার প্রতি আগ্রহ দেখাচ্ছেন বলে জানা গেছে। তবে যেসব ফাইল ই-ফাইলিংয়ে ছাড় করা সম্ভব নয়, সেসব ফাইল নিজ বাসভবনে নিয়ে যাচ্ছেন মন্ত্রীদের ব্যক্তিগত স্টাফরা। মন্ত্রীরা বাসায় বসে সেসব ফাইল দেখে ছাড় করছেন।
অপরদিকে মন্ত্রণালয়ের মিটিং বা কোনও নির্দেশনাও দিচ্ছেন ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে। ভার্চুয়াল মিটিংয়ের মাধ্যমে যেকোনও নির্দেশনা বা মিটিংয়ের সিদ্ধান্ত পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার কাছে।
জানা গেছে, গত ৩১ মে রবিবার থেকে ২৮ জুন পর্যন্ত এই ২৯ দিনে সরকারের কোনও মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী বা উপমন্ত্রী সাপ্তাহিক ছুটি বাদ দিয়ে বাকি কর্মদিবসগুলোয় মন্ত্রণালয়ের দফতরে শতভাগ উপস্থিত হননি। জরুরি কোনও মিটিংয়ে অংশ নিতে বা জরুরি কোনও ফাইল দেখতে কেউ সপ্তাহে তিন দিন, কেউ এসেছেন এক দিন, আবার কেউ এসেছেন সপ্তাহে দুই দিন। বেশিরভাগ মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী বা উপমন্ত্রী বাসায় বসে মন্ত্রণালয়ে উপস্থিত কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে দাফতরিক কাজকর্ম সেরেছেন।
প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী, মন্ত্রীর একান্ত সচিব, সহকারী একান্ত সচিব, মন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা আবার কোনও কোনও ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সবচেয়ে বেশিদিন সচিবালয়ের দফতরে এসে অফিস করেছেন স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। তিনি সপ্তাহে প্রায় প্রতিদিনই সচিবালয়ে নিজ দফতরে এসেছেন।
যেদিন মন্ত্রণালয়ে আসেননি, সেদিন হয়তো তিনি অফিসের বাইরে কোথাও কোনও মিটিং বা পরিদর্শনে গেছেন। এই করোনা পরিস্থিতিতে তিনি পূর্বরাজারের লকডাউন পরিস্থিতি দেখতে স্বশরীরে গেছেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলেছেন।
অপরদিকে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানও সপ্তাহে প্রায় প্রতিদিনই পরিকল্পনা কমিশনের নিজ দফতরে অফিস করেছেন। বাজেট, এনইসি, এডিপি চূড়ান্তকরণ এবং একনেক মিটিংয়ে অংশ নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে গণভবনে থেকে। মিটিং শেষ করে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে এসে সাংবাদিকদের ব্রিফিংও করেছেন।
এদিকে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ. ম. রেজাউল করিম, সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাবউদ্দিন, রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন, টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তফা জব্বার, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান, প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমেদ—তারা প্রায় সবাই অনিয়মিতভাবে সচিবালয়ে বা সচিবালয়ের বাইরে অবস্থিত সরকারি দফতরে এসেছেন এই করোনাকালে। তবে তারা সবাই বাসায় অনলাইনে যুক্ত থেকেই দাফতরিক কাজ করেছেন বলে জানিয়েছেন এসব মন্ত্রীর দফতরে কমরত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এদের মধ্যে কেউ কেউ নিজ নিজ মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ বিভিন্ন কর্মকাণ্ড পরিদর্শনেও গেছেন বলে জানা গেছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম জানিয়েছেন, এই সময় নিজেকে নিরাপদ রাখার জন্য এমনিতেই সবার প্রতি নির্দেশনা ছিল। আমরা আমাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও প্রয়োজন না হলে কর্মস্থলে না আসার পরামর্শ দিয়েছি। শিডিউল করে ২৫ শতাংশ কর্মচারী নিয়ে অফিস করছি। সংসদও চলেছে একই নিয়মে। মন্ত্রিপরিষদ মিটিংয়েও সবাইকে হাজির হতে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। এছাড়া মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীরা চাইলে যেকোনও স্থানে বসেই দায়িত্ব পালন করতে পারেন। দফতরে আসতেই হবে, এমন কোনও শর্ত নাই।