নিজস্ব প্রতিনিধি:
দেশের বিচার ব্যবস্থা স্বাধীন নয় বলে মনে করেন বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ। স্বাধীনতার আগে পাকিস্তান আমলে যে লক্ষ্য নিয়ে আইন প্রণয়ন করা হয়েছিল সেই লক্ষ্য পূরণ করার দাবি জানিয়েছেন তিনি।
মঙ্গলবার (৩০ জুন) জাতীয় সংসদে আইন মন্ত্রণালয়ের মঞ্জুরী দাবির ওপর ছাঁটাই প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে একথা বলেন তিনি। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে শুরু হওয়া সংসদের বৈঠকে এসময় প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা উপস্থিত ছিলেন।
ছাঁটাই প্রস্তাবের ওপর আলেচনায় হারুনুর রশিদ বলেন, ‘সরকারের সদিচ্ছা থাকতে হবে, আমি বিচার বিভাগকে স্বাধীন করবো কিনা। বিচার বিভাগ স্বাধীন নয়। বিচার বিভাগ এখনও নির্বাহী বিভাগের অধীন। বিচার বিভাগ, উচ্চ আদালতে বিভিন্ন নির্দেশে বিচারকার্য পরিচালিত হচ্ছে। এটি আমাদের সত্যিকার অর্থে ন্যায় ও সঠিক বিচারের অন্তরায়। দেশের স্বাধীনতার প্রায় ৫০ বছর পার হয়েছে, কিন্তু এখনও আমাদের দেশে বিচার ব্যবস্থাকে স্বাধীন করতে পারিনি। আজ বলতে দ্বিধা নাই, সারা বাংলাদেশে চিহ্নিত মাদকসম্রাট, চিহ্নিত মাদকপাচারকারী, চিহ্নিত সরকারি সম্পদ আত্মসাৎকারীরা বিচারের আওতার বাইরে। আজ বিচার ব্যবস্থার যে দুরবস্থা, এই দুরবস্থা থেকে কেউ রেহাই পাচ্ছেন না। মিথ্যা মামলায় হাজার হাজার নেতাকর্মী রাস্তায় ঘুরছেন। পুলিশ বাদী ও সাক্ষী হয়ে যেসব মামলা দিচ্ছে, সেই সব মামলায় বিরোধীদলীয় হাজার হাজার নেতাকর্মী রাস্তা রাস্তায় ঘুরছেন, আদালতে ঘুরছেন, সুপ্রিমকোর্টে ঘুরছেন। এই অবস্থা থেকে আমাদের মুক্তির একমাত্র উপায় বিচার ব্যবস্থাকে স্বাধীন করতে হবে।’
আইনমন্ত্রীর উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘সরকারি দলের বিপক্ষে রায় দেওয়ায় অনেক অধঃস্তন বিচারককে স্ট্যান্ড রিলিজ করা হয়েছে। আমি মনে করি বিচার ব্যবস্থাকে স্বাধীন করতে আমাদের স্বাধীনতার আগে যে লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ছিল, সেই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে আমরা পূরণ করার জন্য আইন প্রণয়ন করবো। সেই হিসেবে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’
এই সময় সরকারি দলের এমপিরা প্রতিবাদ করলে হারুন আরও জোর দিয়ে বলেন, ‘হ্যাঁ পাকিস্তান আমলে। স্বাধীনতার পূর্বের কথা বলছি।’
এর জবাবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘আজ তার (হারুনর রশীদ) আসল চেহারা বেরিয়ে গেছে। তিনি শুধু পাকিস্তান যেতে চান না। সব কিছু নিয়ে পাকিস্তান যেতে চান। আমরা সেখানে যাব না। সেখানে ন্যায়বিচার ছিল না। আমরা ন্যায় বিচার দিয়েছি।’
আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা কী দেখেছি সেটা তাকে জবাব দেওয়া দরকার। ১৯৭৫ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করার পর ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছিল। আজ উনি সংসদে বলছেন ন্যায়বিচারের কথা! শেখ হাসিনার সরকার বঙ্গবন্ধু হত্যার মামলা শেষ করেছে। এর মাধ্যমে ন্যায়বিচার হয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মাধ্যমে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা হয়েছে।’
এর আগে জাতীয় পার্টির পীর ফজলুর রহমান তার ছাঁটাই প্রস্তাবের বক্তব্যে বিচার বিভাগের বিষয়ে স্বাধীনতার আগের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বিএনপির এমপি হারুনের প্রস্তাবের কঠোর সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা স্বাধীন দেশ। যাদের সঙ্গে যুদ্ধ করে স্বাধীনতা অর্জন করেছি, আমরা স্বাধীন দেশের নাগরিক তাদের বিচারে পরিচালিত হতে চাই না। পাকিস্তানি বিচার আমরা চাই না। স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে নিজেদের বিচার ব্যবস্থায় পরিচালিত হতে চাই।’
বিএনপির সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘জাতির পিতাকে হত্যার পর ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে এদেশে বিচার বন্ধ করা হয়েছিল।’