সান নিউজ ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিচারহীনতার একটি সংস্কৃতি দেশে চালু করা হয়েছিল। সে অবস্থার একমাত্র পরিবর্তন করতে পেরেছি যখন জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে সরকারে এসেছি তখন। সেখানে অনেক বাধা অনেক কিছুই আমাদের মোকাবিলা করতে হয়েছে। কিন্তু আমি ধন্যবাদ জানাই বিচারকের সাহসী পদক্ষেপের জন্য।
আরও পড়ুন: মারিউপোলে এক দিনের যুদ্ধবিরতি
বৃহস্পতিবার (৩১ মার্চ) বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের নবনির্মিত ১২তলা ভবন বিজয়-৭১ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে ফিরে আসার পর পর আমাদের যে সংগ্রাম সেটা ছিল, বাংলাদেশে ৭৫ এর পর বারবার যে মিলিটারি ডিকটেটররা অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেছে, আমি কৃতজ্ঞতা জানাই আমাদের হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্টের প্রতি। উচ্চ আদালতই রায় দিয়ে এ দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার সুরক্ষিত করে দিয়েছেন। সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতা দখল যে অবৈধ সেই নির্দেশ তারা দিয়েছেন।
৭৫ এর পরবর্তী সময়ে ইতিহার তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে ন্যায় বিচারের পথ বন্ধ করে দিয়ে খুনী যারা জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে, শিশু-নারীদের হত্যা করেছে, সেই হত্যাকারীদের বিচার না করে ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স জারি করা হয়েছিল। যার মাধ্যমে খুনীদের পুরস্কৃত করে দূতাবাসে চাকরি দেওয়া হয়েছিল। তাদের নির্বাচন করার অধিকার দেওয়া হয়েছিল। যুদ্ধাপরাধী, যাদের বিচার জাতির পিতা শুরু করেছিলেন। সেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করে দিয়ে যারা কারাগারে বন্দি বা সাজাপ্রাপ্ত-এমনকি ৭ খুনের মামলায় সাজাপ্রাপ্তদের মুক্তি দিয়ে এ দেশে রাজনীতি করার সুযোগ করে দিয়েছিল জিয়াউর রহমান। তারপর তার স্ত্রী খালেদা জিয়াও একই কাজ করেছিল।
যে আদর্শ, যে চেতনা নিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল, সেই চেতনা ভূলুণ্ঠিত হয়ে গিয়েছিল। আমি মনে করি, এই একটি রায়ের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার সুরক্ষিত হয়েছে। আমরা যারা ১৫ আগস্ট আপনজন হারিয়েছিলাম, আমাদের কোনো অধিকার ছিল না বিচার চাওয়ার। আমি বাংলাদেশে ফিরে এসে মামলা করার চেষ্টা করেছি কিন্তু মামলা করতে দেওয়া হয়নি। কারণ ইনডেমনিটি দেওয়া হয়েছে। বিচারহীনতার যে সংস্কৃতি এ দেশে চালু করা হয়েছিল, সেটা পরিবর্তন করতে পেরেছি যখন জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে আমি সরকার গঠন করতে পেরেছি। সেখানেও অনেক বাধা আমাদের মোকাবিলা করতে হয়েছে। বিচারকদের ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, বিচারকদের সাহসী পদক্ষেপে আমরা ন্যায় বিচার পেয়েছি। বিচারহীনতার কালচার থেকে বাংলাদেশ মুক্তি পেয়েছে, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
আরও পড়ুন: রোজায় আদালতের সময়সূচি নির্ধারণ
তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশে রায় সব সময় ইংরেজিতে দেওয়া হয়। যদিও দেশে এখন স্বাক্ষরতার হার আমরা সরকার গঠন করার পর প্রায় ৭৫ ভাগে উন্নীত করেছি এটা ঠিক কিন্তু রায় ইংরেজিতে সবার পক্ষে বোঝা সম্ভব না। এটা একটা বহু দিনের দাবি ছিল রায়গুলো বাংলায় যেন দেওয়া হয়। আমি আনন্দিত, ভার্চুয়ালি এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বাংলায় অনুবাদ করে ওয়েবসাইটে প্রচার করা হয়। যারা বিচার পায় তারা যেন সঠিকভাবে জানতে পারে রায়ে কী বলা হলো। সম্পূর্ণ ডিজিটালাইজড করার জন্য ইতোমধ্যে প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। আমাদের তথ্য বিষয়ক উপদেষ্টা নিজে ভালোভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে যাতে যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা যায় সে ব্যবস্থা নিয়েছে। আমাদের তথ্য উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার সময় অনেক টাকা সাশ্রয়ও করে দিয়েছে। আমাদের ভার্চুয়াল আদালত সর্ব মহলে প্রশংসিত। প্রথমে অনেকে দ্বিধাগ্রস্ত ছিলেন কিন্তু এখন সবাই এটার সুফলটা পাচ্ছে এবং সবাই সুরক্ষিত থেকে কাজ করতে পারছেন।
সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের বিচারপতিদের শুধু বাসস্থানের সমস্যার সমাধান করিনি, সবার বেতন-ভাতা বৃদ্ধি করেছি। বাসা চালানোর জন্য যা যা প্রয়োজন বাবুর্চিসহ বিভিন্ন ব্যবস্থা আমরা করে দিয়েছি। জেলা আদালতগুলোকে উন্নত করা হয়েছে। জজ সাহেবদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কারণ এই বাংলাদেশে এ ধরনের ঘটনাও ঘটেছে, বোমা মেরে কোর্টে জজদের হত্যা করা হয়েছে। আমরা মনে করি, আমাদের গৃহীত পদক্ষেপের ফলে জনসাধারণ ন্যায় বিচার পাবে এবং বিচারকাজ আরও ভালোভাবে চলবে। নতুন ভবনে আমরা আরও বিচারক নিয়োগ দিতে পারবো। প্রথমবার এনেক্স ভবনে আমরা ৪০টি কক্ষ করেছিলাম, সেখানে ৩৫টি আদালত বসার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিল। এবার এখানে ৩২টি বসার সুযোগ হবে।
আরও পড়ুন: বিশ্বে করোনায় আরও চার হাজার মৃত্যু
সরকার রেকর্ড রুম চালুর উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, আসলে রেকর্ড রুম খুবই প্রয়োজন। রেকর্ড যেন নষ্ট না হয় সেটার ব্যবস্থা করা, ডিসেন্ট্রালাইজড করে ফেলা এবং হার্ড কপিও রাখতে হবে, ডিজিটালাইজডও করতে হবে। ইতোমধ্যে রেকর্ড রুম করার জন্য আমি অর্থ সচিবকে অর্থ বরাদ্দ দেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়ে দিয়েছি। পাশাপাশি ক্লায়েন্ট শেড নির্মাণের ব্যবস্থা আমরা নেব এবং হাইকোর্ট মাজার প্রাঙ্গণে যে মসজিদটি আছে, যে মসজিদে বেশির ভাগই আমাদের জজ সাহেব-আইনজীবীরা নামাজ পড়তে যান; সেটাকেও একটা উন্নত মানের মসজিদ নির্মাণ করে দেওয়ার আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি। ইতোমধ্যে প্রাইম মিনিস্টার অফিসের সচিব নিজে গেছেন, দেখেছেন এবং যথাযথ পদক্ষেপ নিচ্ছেন।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আইন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কথা এসেছে। আপনারা জানেন, বাংলাদেশে মাত্র কয়েকটা বিশ্ববিদ্যালয় ছিল। এখন তো আমরা বহুমুখী জ্ঞান সম্পন্ন বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করে দিচ্ছি। সেই সঙ্গে ট্রেনিং ইনস্টিটিউটও করেছি। একাডেমি তৈরি করে দিয়েছি। আইন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা আমরা নেব। এ বিষয়ে আপনাদের কাছ থেকে আমাদের পরামর্শ নিতে হবে। কারিকুলাম কী হবে সেটা আপনাদের ঠিক করে দিতে হবে। আইনজীবীদের সুবিধাগুলো আমরা দেখবো। বার কাউন্সিল ভবন আমরা নির্মাণ করে দিয়েছি কিন্তু আইনজীবীর সংখ্যা বেশি, তা ছাড়া আমাদের বিভিন্ন জেলা পর্যায় পর্যন্ত আমরা যেমন আদালত ভবন করে দিয়েছি, আইনজীবীরা যাতে সুষ্ঠুভাবে বসে কাজ করতে পারে আর আমরা যারা ক্লায়েন্ট থাকি, আমাদের তো মামলা-টামলা অনেক খেতে হয় রাজনীতি করলে, আমি নিজেই প্রায় ১২-১৪টা মামলার আসামি ছিলাম। কোর্টে যেতে হয়েছে। সেখানে যাতে ন্যায় বিচারটা পায়, সবাই যদি ঠান্ডা মাথায় কাজ করতে পারেন তাহলে ন্যায় বিচার পাওয়া সহজ হবে। আমরা সেটা করবো।
আসলে আমরা করে যাচ্ছি। আপনারা জানেন করোনার কারণে সমস্যা দেখা দিয়েছে। ভ্যাকসিন কিনে বিনা পয়সায় দিচ্ছি। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হচ্ছে, চিকিৎসা সেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছাতে হচ্ছে। বিভিন্ন কাজ আমাদের করতে হচ্ছে। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি, সর্ব মহলের মানুষ যাতে ন্যায় বিচার পায়। আমরা চাই বাংলাদেশ সঠিকভাবে এগিয়ে যাক। বাংলাদেশের মানুষ ন্যায় বিচার পাক, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হোক এবং একটি গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত ছিল পরপর ৩ বার ২০০৯ থেকে ২০২২ সাল। সে কারণে আমরা বাংলাদেশের অনেক উন্নতি করতে পেরেছি। বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। কাজে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আমাদের আরও সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। বাংলাদেশকে আমরা উন্নত-সমৃদ্ধ-সোনার বাংলা হিসেবে ইনশাল্লাহ আমরা গড়ে তুলবো। জাতির পিতার স্বপ্ন আমরা বাস্তবায়ন করবো, বলেন তিনি।
আরও পড়ুন: সাত বিভাগে ঝড়ের আভাস
শেখ হাসিনা বলেন, অর্থনৈতিকভাবেই আমরা আরও শক্তিশালী হতে চাই। আমাদের যেন কারো কাছে হাত পেতে চলতে না হয়। আমরা যেন নিজেরাই নিজেদের উন্নয়নের কাজ এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি। বর্তমানে ৯০ ভাগ উন্নয়ন আমরা নিজেদের অর্থায়নে করতে পারি। সে যোগ্যতা আমরা অর্জন করেছি। পদ্মা সেতুর মতো একটা বড় প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করেছি। এটা করার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বিশ্বে অনেক উজ্জ্বল হয়েছে।
সাননিউজ/এমআরএস