নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আজকের দিনটি বাঙালি জাতির জীবনে অবিস্মরণীয়। বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের এ দিনে তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে দাঁড়িয়ে বজ্রকণ্ঠে রচনা করেন ১৮ মিনিটের এক মহাকাব্য। জাতির পিতার ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের বিশ্বস্বীকৃতি বাঙালি জাতির জন্য এক বিরল সম্মান এবং গৌরবের স্মারক।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বেওং বাংলাদেশ সমার্থক শব্দ। পূর্ব বাংলার মানুষের ন্যায্য অধিকার আদায় ও বিশ্বের মানচিত্রে তাদের জন্য একটি স্বাধীন ভূ-খণ্ড প্রতিষ্ঠা করতে জাতির পিতা পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে দীর্ঘ ২৪ বছর লড়াই-সংগ্রাম করেন। জেল-জুলুম, অত্যাচার-নির্যাতন ও লাঞ্ছনা সহ্য করে সব আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। একমাত্র তিনিই ছিলেন হাজার বছরের শোষিত ও বঞ্চিত বাঙালির মধ্যে সবচেয়ে বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর।
সোমবার (৭ মার্চ) ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উপলক্ষে দেওয়া বাণীতে এসব কথা বলেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, গত বছর আমরা এ মহাভাষণের সুবর্ণজয়ন্তী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করেছি। এবার আমরা ভাষা-আন্দোলনের ৭০ বছর ও মুজিববর্ষ উদযাপন করছি। এমনই এক মাহেন্দ্রক্ষণে আমি গভীর শ্রদ্ধায় প্রথমেই স্মরণ করছি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করছি— জাতীয় চার নেতা, ৩০ লাখ শহীদ, সম্ভ্রমহারা দুই লাখ মা-বোন ও জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের, যাদের মহান আত্মত্যাগের মাধ্যমে আমরা পেয়েছি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ৭০-এর নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়। কিন্তু পাকিস্তানিরা আওয়ামী লীগের হাতে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব না দিয়ে নানা টালবাহানা শুরু করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষকে নিয়ে পাকিস্তানি শাসকদের বিরুদ্ধে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছিলেন। ৭ মার্চের ভাষণের মাধ্যমে তিনি আমাদের ‘স্বাধীনতা’ নামের এক অমর বাণী শোনান। সংগ্রামের মাধ্যমে শৃঙ্খলমুক্তির পথ দেখিয়েছেন। শুধু তাই নয়, তিনি বীর বাঙালিদের অবশ্যম্ভাবী বিজয়কে উৎকীর্ণ করেন ভাষণের শেষ দু’টি শব্দে- ‘জয় বাংলা’ স্লোগানে।
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, সেই রাতে পাকিস্তানি শাসক তাকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। গ্রেফতার হওয়ার আগেই তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। বাংলার দামাল ছেলেরা ৯ মাস যুদ্ধ করে পাকিস্তানিদের বাংলার মাটিতে পরাস্ত করে ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীনতার লাল সূর্য ছিনিয়ে আনে। বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব পাকিস্তানে বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেয়ে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি দেশে ফিরে স্বপ্নের স্বাধীন বাংলাদেশ পুনর্গঠনে আত্মনিয়োগ করেন। মাত্র সাড়ে তিন বছরেই তিনি যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে একটি উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তরিত করেন। দুর্ভাগ্য, ৭৫-এর ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করে পরাজিত শত্রুদের এ দেশীয় দোসররা।
তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বগ্রহণ করে খুনি মোস্তাক-জিয়ার আনীত দায়মুক্তি অধ্যাদেশ বাতিল করে একইসঙ্গে জাতির জনকের হত্যাকাণ্ডের বিচার শুরু করে। পরবর্তীতে ২০০৯ সাল থেকে পরপর তিন দফা সরকার গঠন করে জাতির জনকের আদর্শে দেশের সার্বিক উন্নয়নে আত্মনিয়োগ করে বাংলাদেশ। জাতির জনক হত্যার বিচারের রায় কার্যকরের মধ্যমে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা হয়।
আরও পড়ুন: আজ ঐতিহাসিক ৭ মার্চ
তিনি আরও বলেন, আমরা সংবিধান (পঞ্চদশ সংশোধন) আইন, ২০১১ প্রণয়ন করে ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণকে সংবিধানের ১৫০ (২) অনুচ্ছেদের পঞ্চম তফসিলে অন্তর্ভুক্ত করেছি। ২০১৩ সালে জ্যাকব এফ ফাইল্ড প্রকাশিত ২৫০০ বছরের বিশ্বসেরা যুদ্ধকালীন ভাষণের সংকলন উই স্যাল ফাইট অন দ্যা বিচেস, দ্যা স্পিচ দ্যাট ইনস্পায়ার্ড হিস্টোরি -এ এই ভাষণ অন্যতম হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। জাতিসংঘের ইউনেস্কো ২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর এ ভাষণকে ‘বিশ্ব-ঐতিহ্য দলিল’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
সাননিউজ/এমএসএ