সান নিউজ ডেস্ক: একদিকে ইউক্রেনে চলছে রুশ সামরিক আগ্রাসন। অপরদিকে দেশটির বন্দর অলভিয়াতে ২৯ জন নাবিক নিয়ে আটকা পড়ে রয়েছে বাংলাদেশি জাহাজ ‘বাংলার সমৃদ্ধি’।
ইউক্রেনে মস্কোর সরকার হামলা চালানোর পর থেকে যে যুদ্ধ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, তাতে জাহাজটি বের হতে পারছে না বলে বিবিসিকে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। ফলে এই নাবিকরা কতদিনে দেশে ফিরতে পারবেন তা এখন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
‘বাংলার সমৃদ্ধি’ জাহাজটি বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের মালিকানাধীন একটি জাহাজ। তবে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন জাহাজটি ফিরিয়ে আনার জন্য আলোচনা চলছে, এবং জাহাজটির সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।
ভারতের মুম্বাই বন্দর থেকে গত ২৬ জানুয়ারি যাত্রা শুরু করে এবং তুরস্কের ইরেগলি হয়ে ২২ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরের বহির্নোঙ্গরে পৌঁছায়। জাহাজটি বন্দরে পৌঁছানোর পরদিন ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা চালায়।
জাহাজটি ইউক্রেন থেকে সিরামিক ক্লে নিয়ে ইতালির রেভেনা বন্দরে যাবার কথা ছিল। বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের নির্বাহী পরিচালক পীযূষ দত্ত জানান, সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত জাহাজ এবং এর নাবিকেরা নিরাপদ আছেন।
তিনি বলেন, ‘জাহাজটি ২৩ ফেব্রুয়ারি অলভিয়া বন্দর ছেড়ে আসার কথা ছিল। কিন্তু এর মধ্যে যুদ্ধাবস্থা শুরু হয়ে যায়, তখন আমরা জাহাজটিকে কোনো পণ্য না নিয়েই বন্দর ছেড়ে চলে আসতে বলি। কিন্তু যেখানে জাহাজটি নোঙ্গর করেছে সেখান থেকে মূল সাগরে আসতে অন্তত ৬০ নটিক্যাল মাইল পথ অতিক্রম করতে হবে, এবং স্থানীয় পাইলট ( পথনির্দেশক ) ছাড়া সেটি করা সম্ভব নয়।’
তিনি জানান, জাহাজটির অন্তত ৭ ঘণ্টা সময় লাগবে ৬০ নটিক্যাল মাইল সাগর পাড়ি দিতে । একদিকে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চলছে, অন্যদিকে সাগরে মাইন পাতা রয়েছে বলে সেখানকার বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
পীযূষ দত্ত আরও বলেন, ‘এরকম পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বড় সংকট হয় খাদ্য-পানীয়ের । কিন্তু জাহাজে এই মূহুর্তে ৩০-৪০ দিনের খাবার এবং বিশুদ্ধ পানির মজুদ আছে। আরেকটি বড় সংকট হচ্ছে কখন কী হয় সে অনিশ্চয়তা।
কৃষ্ণসাগরের উপকূলে রুশ-ইউক্রেন দুইটি দেশই অবস্থিত। এখন ইউক্রেনের ওপর রাশিয়ার জল, স্থল ও আকাশপথে সামরিক অভিযানের কারণে কৃষ্ণসাগর দিয়ে জাহাজ চলাচলে স্থবিরতা সৃষ্টি হয়েছে।
গত বুধবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুর পর্যন্ত হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পেরেছেন নাবিকেরা। এরপর সেখানে ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এখন স্যাটেলাইট ফোনের মাধ্যমে শিপিং কর্পোরেশনের কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।
বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের নির্বাহী পরিচালক পীযূষ দত্ত জানান, বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পোল্যান্ডে বাংলাদেশ দূতাবাসসহ সংশ্লিষ্ট সব সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি আমরা। এ ছাড়া নাবিকদের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছি আমরা।
বালাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ আনাম চৌধুরী বলছেন, ‘নাবিকদের ফিরিয়ে আনার জন্য কূটনৈতিক পদক্ষেপ এবং রাষ্ট্রের উচ্চ পর্যায়ের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।’
আরও পড়ুন: শান্তি আলোচনায় মস্কোর ৪ শর্ত
তিনি আরও বলেন, ‘রাশিয়ার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ভালো। তাদের সাথে যোগাযোগ করে এক ধরণের আয়োজন করা যে, যে সময়ে জাহাজটি মুভ করবে সে সময় কোনও অভিযান চালানো হবে না।’
আরও পড়ুন: ১৪ বছরের আগে শিশুশ্রম নয়
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের কর্মকর্তাদের বরাতে জানা যায়, অলভিয়া বন্দরের কাছে এই মূহুর্তে আরও ১৩টি জাহাজ আটকে আছে। সমুদ্রপথে পণ্য পরিবহনকারী একমাত্র রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের বহরে মোট ৮ টি জাহাজ রয়েছে। বাংলার সমৃদ্ধি জাহাজে মোট ২৯ জন বাংলাদেশি নাবিক রয়েছেন, এর মধ্যে ২ জন নারী ক্যাডেটও রয়েছেন।
সান নিউজ/ এইচএন