নিজস্ব সংবাদদাতা: মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের ২৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে জানান, বিরোধী দলে থেকেও আওয়ামী লীগ সর্বদা পার্লামেন্ট প্র্যাকটিসে আন্তরিক ছিলো
আজ ১৫ ফেব্রুয়ারি (মঙ্গলবার) বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের ২৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও পদক প্রদান অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে গুরুত্বপূর্ণেএই বাহিনী তৈরির ইতিহাস তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
রাজধানী ঢাকার আগারগাঁওয়ের কোস্টগার্ড সদর দপ্তর আয়োজিত অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানান, বাংলাদেশ কোস্টগার্ড সৃষ্টির পেছনে চমৎকার বিষয় রয়েছে। সেটি হলো ১৯৯৪ সাল, তখন আমরা বিরোধী দলে। এত বেশি সংসদ সদস্য ছিল না। কিন্তু আমরা যখন এই বিলটা নিয়ে এলাম, জানতাম সরকার পক্ষ কখনোই এই বিল পাস করবে না।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যরা, আমরা সবসময় পার্লামেন্ট প্র্যাকটিসে আন্তরিক ছিলাম। আমরা নিয়মিত হাউজে উপস্থিত থাকতাম। আর বিএনপির যারা সদস্য- জামায়াত ও বিএনপি মিলে সরকার গঠন করেছিল, তারা সংসদে খুব একটা উপস্থিত থাকত না।
সরকারপ্রধান বলেন, বিলটি যখন উঠে, তখন কণ্ঠভোট আসে। আমরা নিজেরা গুনে দেখি যে আমরা সংখ্যায় বেশি। সঙ্গে সঙ্গে আমাদের এক সংসদ সদস্য ডিভিশন ভোটের দাবি করেন। এই ভোটে বিরোধী দল জয়লাভ করে। ১৯৯৪ সালে তখন এই আইনটি পাস হয়। এটা একটি ঐতিহাসিক ব্যাপার।
তিনি বলেন, কোস্টগার্ড বিল জাতীয় সংসদে ১৯৯৪ সালে পাস হয় এবং ১৯৯৫ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি এ বাহিনীর যাত্রা শুরু হয়।
বিগত ১৩ বছরে কোস্টগার্ডের জন্য ৭৭টি জলযান নির্মাণ ও সংযোজন করা হয়েছে। আরও জাহাজ নির্মাণ করা হবে। ভবিষ্যতে এই বাহিনীকে আরও আধুনিক যুগপোযোগী করা হবে। এই বাহিনীর সার্বিক কল্যাণে যা যা করার দরকার, তা করবে সরকার।
প্রধানমন্ত্রী জানান, ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর ধারাবাহিকভাবে কোস্টগার্ডের জনবল বাড়িয়েছি। সুনীল অর্থনীতি ও গভীর সমুদ্রের নিরাপত্তার জন্য এই বাহিনীর জনবল ও জাহাজ বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে।
গভীর সমুদ্রনির্ভর অর্থনীতিকে গতিশীল ও নিরাপদ রাখা এবং সুনীল অর্থনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রকল্প ও ব্যক্তিদের জানমালের নিরাপত্তা বিধানে এই বাহিনী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন তিনি।
তিনি বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা জলবায়ুর অভিঘাত থেকে বাংলাদেশকে রক্ষা করে, এ ব-দ্বীপে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যেন যুগ যুগ ধরে সুন্দরভাবে বাঁচতে পারে এবং তাদের জীবনমান উন্নত হতে পারে, সে লক্ষ্য নিয়ে আমরা ডেল্টা প্ল্যান ২০৪১ প্রণয়ন করে বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি।
শুধু আজকের জন্য আমরা কাজ করছি সেটা না। ভবিষ্যতের বাংলাদেশ কেমন হবে সেটা সামনে রেখেই পরিকল্পনা কাঠামো তৈরি করে যাচ্ছি। যার ভিত্তিতে পরবর্তীতে প্রজন্মের পর প্রজন্ম, তারা এ দেশের উন্নয়নের কার্যধারা অব্যাহত রাখতে সক্ষম হবে।
উপকূলীয় অঞ্চলে নিয়মিত চারারোপণ করায় কোস্টগার্ডকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, এটা আমাদের দেশকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা করতে সহায়তা ও পরিবেশ রক্ষায় সহায়ক হবে।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আমাদের সমুদ্রসীমা রক্ষা এবং নদীমাতৃক দেশকেও নিরাপদ করার জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান একান্তভাবে প্রয়োজন। সেই দায়িত্ব কোস্টগার্ড যথাযথভাবে পালন করে যাচ্ছে।
কারণ, এই অঞ্চল (বঙ্গোপসাগর) আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই অঞ্চলের সব নিরাপত্তা রক্ষা করা প্রয়োজন এবং সেই দিকে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। আমরা তা যথাযথভাবে করে যাচ্ছি।
প্রসঙ্গত, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা পরবর্তী মাত্র সাড়ে ৩ বছরে শূন্য বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশে রূপান্তর করেছিলেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আর্থসমাজিক উন্নয়নের জন্য যখন জাতীয় ঐক্যের ডাক দেন এবং দেশকে এগিয়ে নিয়ে যান, সেই সময় ঘটে ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড।
আমরা হারিয়েছিলাম আমাদের আপনজন। কিন্তু বাংলাদেশ হারিয়েছিল উন্নত জীবনযাপনের সবধরনের অধিকার। বাঙালি জাতি আবার শোষণ ও বঞ্চনার শিকার হয়। ইতিহাস বিকৃতি হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমান সরকার চায় সমুদ্রের সম্ভাবনা আর্থসামাজিক উন্নয়নে কাজ লাগাতে।
শিগগিরই কোস্টগার্ডে যুক্ত হবে হোভারক্রাফটসহ অত্যাধুনিক নৌযান। একবিংশ শতাব্দির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার উপযুক্ত করে গড়ে তোলা হচ্ছে এ বাহিনীকে।
তিনি বলেন, বাহিনীটিতে ১৫ হাজার জনবল অর্জনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এ বাহিনীর সদস্যদের প্রশিক্ষিত করে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কাজ করার সুযোগ তৈরি করেছে সরকার।
আরও পড়ুন: সাংবাদিকদের সঙ্গে বসছে সার্চ কমিটি
বাংলাদেশ কোস্টগার্ডকে আধুনিক ও শক্তিশালী করার লক্ষ্যে খুব শিগগিরই এ বাহিনীতে উন্নত প্রযুক্তির জাহাজ, হোভ্যারক্র্যাফট ও দ্রুতগতিসম্পন্ন বোট যুক্ত হতে যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, বাহিনীটির সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য গজারিয়ায় একটি ডকইয়ার্ড নির্মাণ করা হচ্ছে।
ডাকাত দমন, চোরাচালান প্রতিরোধ এবং সমুদ্রসীমা রক্ষায় ও মৎস্য সম্পদ আহরণের জন্য কোস্ট গার্ড দায়িত্বশীল। সুনীল অর্থনীতি ও গভীর সমুদ্রে নিরাপত্তার জন্য এ বাহিনীর উন্নয়নের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে সরকারের সহযোগিতা চলমান থাকবে।
আরও পড়ুন: সীমান্তে বসবে অত্যাধুনিক সেন্সর: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
সরকার প্রধান বলেন, বিশাল সমুদ্রসীমা ও নদীমাতৃক বাংলাদেশের সম্পদ কাজে লাগিয়ে দেশেই তৈরি হচ্ছে বিশ্বমানের জাহাজ। গভীর সমুদ্র থেকেও স্যাটেলাইটের মাধ্যমে তথ্য আদান-প্রদান করা যাবে।
একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশ কোস্টগার্ড প্রস্তুত। এই ব-দ্বীপের সব সম্পদ কাজে লাগিয়ে আগামী প্রজন্ম দেশের চলমান উন্নয়নের গতি অক্ষুণ্ন রাখবে।
আরও পড়ুন: বিশ্বজুড়ে বেড়েছে মৃত্যু, কমেছে শনাক্ত
এ বাহিনীর সদস্যদের সততা, নিষ্ঠা ও মানবসেবার ব্রত নিয়ে কাজ করার আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।
সান নিউজ/ এইচএন