নিজস্ব প্রতিবেদক: পা দিয়ে লিখে টানা চতুর্থবার জিপিএ-৫ পাওয়া অদম্য মেধাবী তামান্না আক্তার নূরার সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সাথে বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানাও কথা বলেছেন এই অদম্য মেধাবীর সঙ্গে।
সোমবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় পৃথক হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর থেকে দুই বোন কথা বলে তামান্নার স্বপ্ন পূরণে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন। টানা চার মিনিটের কথোপকথনে প্রধানমন্ত্রী তামান্নাকে সাহস হারাতে মানা করেন। সাহস আর মনোবল থাকলে তামান্না অনন্য উচ্চতায় পৌঁছাতে পারবে বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার বাঁকড়া আলীপুরের রওশন আলী ও খাদিজা পারভীন শিল্পী দম্পতির তিন সন্তানের মধ্যে বড় তামান্না আক্তার নূরা। তিনি ঝিকরগাছার বাঁকড়া ডিগ্রি কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এবার এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছিলেন। রোববার প্রকাশ হওয়া ফলাফলে জিপিএ ফাইভ পেয়েছেন তিনি। এর আগে তামান্না ২০১৯ সালে বাঁকড়া জনাব আলী খান মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ ফাইভ ফল লাভ করেন।
তামান্নার বাবা রওশন আলী ঝিকরগাছা উপজেলার ছোট পৌদাউলিয়া মহিলা দাখিল মাদরাসার (নন-এমপিও) শিক্ষক। মা খাদিজা পারভীন গৃহিণী। তামান্নার ছোট বোন মুমতাহিনা রশ্মি ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। ভাই মুহিবুল্লাহ তাজ পড়ে প্রথম শ্রেণিতে।
সোমবার ঘড়ির কাটায় তখন সন্ধ্যা ৬টা ৫৬ মিনিট। পড়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তামান্না। হঠাৎ হোয়াটস্অ্যাপে ফোন। ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে শোনা গেলো- ‘আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলছিলাম। আমি কি তামান্নার সঙ্গে কথা বলছি?’ কণ্ঠস্বর শুনে ঘাবড়ে যান তামান্না আক্তার নূরা। সম্মতি দিতেই তাকে অভিনন্দন জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ক্ষণিকের জন্য তামান্না বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে কেঁদেই ফেললেন। তাকে কান্না থামাতে বললেন প্রধানমন্ত্রী।
আরও পড়ুন: কিয়েভ থেকে সরানো হচ্ছে মার্কিন দূতাবাস
কান্না থামিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সালাম দেন তামান্না। এ সময় তামান্না তার (প্রধানমন্ত্রী) সঙ্গে দেখা করার ইচ্ছা এবং তার স্বপ্ন পূরণে প্রধানমন্ত্রীকে পাশে চান। প্রধানমন্ত্রীও তার স্বপ্ন পূরণে পাশে থাকার আশ্বাস দেন। আর তামান্নাকে ‘বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টে’ একটা আবেদন করার পরামর্শ দেন। ওই ট্রাস্টের মাধ্যমে তাকে সকল সহযোগিতা দিবেন বলে জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এর আগে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে তামান্নার হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে ফোন দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানা। ফোন রিসিভ করতেই তামান্নার ফোনের ওপাশের নারী কণ্ঠ বলেন, ‘আমি লন্ডন থেকে শেখ রেহানা বলছি। আমি কি তামান্না নূরার সঙ্গে কথা বলছি?’
আরও পড়ুন: পাঁচ হাজার ভিসা দেবে রোমানিয়া
শেখ রেহানার ফোন পেয়ে তখনও কেঁদে ফেলেন তামান্না। কান্না থামাতে বলে শেখ রেহানা বলেন, ‘কেঁদো না। টানা ভালো ফল করায় তোমাকে অভিনন্দন। তোমার সংগ্রামের কথা শুনেছি। তুমি খুব সাহসী। তুমি এগিয়ে যাও। আমরা দুই বোন বেঁচে থাকা পর্যন্ত তোমার সহযোগিতা করে যাব। যারা সাহস রেখে চলে তাঁরা কখনো হেরে যায় না।’
এর আগে গত ২৪ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করাসহ দুটি স্বপ্নের কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি লিখেছিলেন তামান্না। তার লেখা চিঠি প্রথমে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তারপর যশোরের জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। একইসঙ্গে তামান্নার আঁকা বিভিন্ন ছবিও দেওয়া হয় ওই চিঠির সঙ্গে।
সান নিউজ/এমকেএইচ