নিজস্ব প্রতিনিধি: বিশ্বব্যপি করোনা মহামারির ভয়াবহ আগ্রাসন চলছে। এর থাবা থেকে কেউ বাদ পড়ছে না। ব্যবসা-বাণিজ্য পেন্ডুলামের মতো দুলছে। বাদ যায়নি বাংলাদেশও।
করোনার শক্তিশালী ধাক্কা কাটিয়ে দেশের রপ্তানি খাত ঊর্ধ্বমুখী হলেও পাট পণ্যের রপ্তানি বৃদ্ধি পায়নি। চলতি অর্থবছরের (২০২১-২০২২) শুরু থেকেই আমাদের পাট রপ্তানি খাত গতি হারাতে থাকে। তবে, পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে বিগত কয়েক মাসে।
চলতি অর্থবছরের প্রথম ৭ মাস অর্থাত্, জুলাই-জানুয়ারি পর্যন্ত সময়ে পাট পণ্যের রপ্তানি কমেছে ৯ শতাংশ। অথচ আগের অর্থবছরে (২০২০-২০২১) পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি ছিল প্রায় ৩২ শতাংশ।
এ খাতের সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, সম্প্রতি কাঁচা পাটের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ায় এর প্রভাব রপ্তানিতে পড়েছে। তাছাড়া পরিবহন খরচও বেড়েছে কয়েকগুণ।
ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের ১ম মাস জুলাইয়ে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি ছিল ৪১ শতাংশ। পরের মাসগুলোতে পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় তা ৯ শতাংশে নেমেছে।
অর্থবছরের এই ৭ মাসে পাট পণ্য থেকে রপ্তানি আয় হয়েছে ৬৯ কোটি ৬০ লাখ ডলার (প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা), যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৭৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার (সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা)।
বাংলাদেশের রপ্তানিকৃত পাট পণ্যের তালিকায় রয়েছে কাঁচাপাট, পাটের সুতা, পাটের বস্তা ও ব্যাগ এবং অন্যান্য পাটজাত পণ্য।
ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, গত ৭ মাসে পাট থেকে তৈরি সুতা, বস্তা ও ব্যাগ রপ্তানি কমলেও কাঁচাপাট এবং অন্যান্য পাটজাত পণ্যের রপ্তানি বেড়েছে। তবে টাকার অঙ্কে সার্বিকভাবে এ খাতের রপ্তানি কমেছে।
ইপিবির তথ্যানুযায়ী সার্বিকভাবে চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) হিসাবে প্রায় ২৯ বিলিয়ন (২ হাজার ৯৫৪ কোটি) ডলার রপ্তানি আয় দেশে এসেছে। দেশীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ২ লাখ ৫৪ হাজার কোটি টাকা। এই অঙ্ক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩০ দশমিক ৩৪ শতাংশ বেশি।
বাংলাদেশ চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ৪৮৫ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে। টাকার অঙ্কে এই অর্থের পরিমাণ দাঁড়ায় ৪১ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা, যা গত বছরের জানুয়ারির চেয়ে ৪১ দশমিক ১৩ শতাংশ বেশি।
বিশ্লেষণ অনুযায়ী পাট ও পাটজাত, বিল্ডিং ম্যাটেরিয়ালস ছাড়া অন্য সব পণ্যের রপ্তানি বেড়েছে। অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে ২ হাজার ৩৯৮ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এ আয় গত বছরের জুলাই-জানুয়ারি সময়ের তুলনায় ৩০.৩ শতাংশ বেশি।
বিগত কয়েক মাস বিরতির পর নিট পোশাকের পাশাপাশি ওভেন পোশাকের রপ্তানিও বেড়েছে। রপ্তানি আয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে তৈরি পোশাক। অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে ১ হাজার ৩২৭ কোটি ডলারের নিট পোশাক রপ্তানি হয়েছে। যাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩২ দশমিক ৮৯ শতাংশ।
অপরদিকে ওভেন পোশাক রপ্তানি হয়েছে ১ হাজার ৭১ কোটি ডলারের। এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ২৭ দশমিক ২৩ শতাংশ। একই সময়ে মাসে ৮৩ কোটি ডলারের হোম টেক্সটাইল রপ্তানি হয়েছে। যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩০ শতাংশ বেশি।
আরও পড়ুন: ভ্যাটযন্ত্র নিয়ে অসন্তোষ আছে
প্রসঙ্গত, রপ্তানি আয় বাড়লেও সম্প্রতি করোনা ভাইরাস নিয়ে শঙ্কা কাজ করছে রপ্তানিকারকদের মনে। তারা বলছেন, যদি করোনা ফের সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে, তাহলে রপ্তানি বাণিজ্যেও পূর্বের নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
সান নিউজ/ এইচএন