বান্দরবান প্রতিনিধি: পার্বত্যজেলা বান্দরবানে গত বুধবার (২ ফেব্রুয়ারি) গোলাগুলিতে সেনাবাহিনীর সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার হাবিবুর রহমানসহ ৪ জন নিহত হওয়ার পর পাহাড়ের পরিস্থিতি উদ্বেগজনক অবস্থায় রয়েছে।
নিরাপত্তাহীনতা ও আতঙ্ক বেড়েছে পাহাড়ি গ্রামগুলোতে। সন্ত্রাসীদের ধরতে সম্ভাব্য এলাকাগুলোতে যৌথ বাহিনীর চিরুনি অভিযান অব্যাহত আছে। পাড়াগুলোতে সেনা টহলও বৃদ্ধি করা হয়েছে।
গত ৪ ফেব্রুয়ারি (শুক্রবার) দুপুরে চট্টগ্রাম অঞ্চলের এরিয়া কমান্ডার (জিওসি) মেজর জেনারেল সাইফুল আবেদীন, বান্দরবান রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জিয়াউল হকসহ উর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তারা রুমা সেনানিবাসে পরিস্থিতি নিয়ে মতবিনিময় করেন।
এদিকে গোলাগুলিতে যে ৩ জন অস্ত্রধারী পাহাড়ি সন্ত্রাসী যুবক নিহত হন তাদের কোনো পরিচয় না পাওয়ায় এবং মরদেহ কেউ নিতে না আসায় শুক্রবার বান্দরবান সদর হাসপাতালে ময়নাতদন্তের পর বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে তাদের শহরের মারমা শ্মশানে সত্কার করা হয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয় যে নিহত ৩ জন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির মূল অংশের সশস্ত্র ক্যাডার।
তবে জনসংহতি সমিতির দাবি তাদের কোনো সশস্ত্র ক্যাডার শাখা নেই। নিহতদের তারা চেনে না।
পার্বত্য অঞ্চলে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের আহ্বান:
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি গণমাধ্যমে জানিয়েছেন, সেনাবাহিনীর ওপর হামলাকারীরা যাদের সমর্থকই হোক না কেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি-জেএসএস এর দায় এড়াতে পারে না।
বান্দরবানের দুর্গম পাহাড়ের বথি ত্রিপুরা পাড়ায় নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় নিন্দা ও উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, অবিলম্বে এ ধরনের অপতত্পরতার পেছনে যে বা যারা জড়িত তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে।
পার্বত্য চট্টগ্রামকে সন্ত্রাসমুক্ত করার জন্য অল্প সময়ের মধ্যে বান্দরবান, রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলায় অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে একটি বিশেষ অভিযান পরিচালনা দরকার বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
সেনা অফিসার হত্যায় বিক্ষোভ, সন্তু লারমার বিচার দাবি:
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা হত্যার প্রতিবাদে গতকাল শনিবার (৫ ফেব্রুয়ারি) বিকালে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের উদ্যোগে বান্দরবান প্রেসক্লাব চত্বরে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন তারু মিয়ার সভাপতিত্বে এতে বক্তব্য রাখেন পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি কাজী মুজিবুর রহমান, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক গবেষক রুহুল আমিন প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, পার্বত্য শান্তিচুক্তি বাতিল করতে হবে। পাহাড়ে অধিক হারে সেনা ক্যাম্প ও সেনাবাহিনী বৃদ্ধি করা এখন সময়ের দাবি। বক্তারা জেএসএস সভাপতি সন্তু লারমার জাতীয় পতাকা ও নিরাপত্তা প্রত্যাহার করে তাকে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান।
খাগড়াছড়িতে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান:
দীঘিনালা (খাগড়াছড়ি) সংবাদদাতা জানান, উপজেলার দুর্গম জারুলছড়িতে সন্ত্রাসীদের আস্তানায় হানা দিয়েছে সেনাবাহিনী।
গত শুক্রবার ভোরে এই অভিযানে সন্ত্রাসীদের ৪ টি ব্যারাক, ২ টি ডিউটি পোস্ট এবং ১ টি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন খাগড়াছড়ি সেনা রিজিয়নের স্টাফ অফিসার (জিটুআই) মেজর মো. জাহিদ হাসান।
প্রসঙ্গত: গত বুধবার (২ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ১০টায় বান্দরবানের রুমা উপজেলার রুমা-রাঙামাটি সীমান্তবর্তী দুর্গম বথিপাড়া এলাকায় এক সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় নিহত হয়েছেন সেনা কর্মকর্তা সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসারের হাবিবুর রহমানএবং আহত হন আরেক সেনা সদস্য ফিরোজ। এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতরের (আইএসপিআর) সহকারী পরিচালক রাশেদুল আলম খান।
এ ছাড়াও ৩ সন্ত্রাসী নিহত হওয়ার সংবাদ জানিয়েছে আইএসপিআর।
অপরদিকে বৃহস্পতিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) সকালে সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারে করে হতাহতদের উদ্ধার করে সেনাবাহিনীর সিএমএস হাসপাতালে পাঠানো হয়।
আরও পড়ুন: সাজেক ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি
ঘটনাস্থল থেকে ১টি এসএমজি, ৩টি দেশীয় বন্দুক, ৩টি সেনাবাহিনীর আদলে পোশাক, ২৮০ রাউন্ড গুলিসহ বিপুল পরিমাণে গোলাবারুদ উদ্ধার করেছে।
সান নিউজ/ এইচএন