নিজস্ব প্রতিবেদক: বিশ্ব ক্যানসার দিবসটি ইউনিয়ন ফর ইন্টারন্যাশনাল ক্যানসার কন্ট্রোল ( ইউআইসিসি) নামের একটি বেসরকারি সংস্থার নেতৃত্বে উদযাপন করা হয়, যা আগে ক্যানসারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ইউনিয়ন নামে পরিচিত ছিল। এই সংস্থার সদর দপ্তর জেনেভায় অবস্থিত যার ১৭০টিরও বেশি দেশে প্রায় ২ হাজার সদস্য রয়েছে।
দিবসটি উদযাপনের উদ্দেশ্য হচ্ছে মারাত্মক ও প্রাণঘাতী এই রোগ সম্পর্কে সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়া এবং এই রোগে আক্রান্ত রোগীদের সাহায্য করার জন্য মানুষকে উৎসাহিত করা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেবে বিশ্বে প্রতি বছর ৮২ লাখ মানুষ ক্যানসারে মৃত্যুবরণ করে। বিশেষ করে সাড়ে ১০ কোটি নারী ব্রেস্ট ক্যানসার আক্রান্ত হন।
চিকিৎসকরা মনে করেন, নিয়মিত পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে ক্যানসার দ্রুত ধরা পড়ে এবং সেক্ষেত্রে চিকিৎসা করা বা নেওয়া অনেক সহজ হয়। ক্যানসারের লক্ষণগুলো নির্ভর করে ক্যানসারটি কোথায়, এটি কতটা বড় এবং এটি কাছাকাছি কোনো অঙ্গ বা টিস্যুকে কতটা প্রভাবিত করে। ক্যানসার ছড়িয়ে পড়লে শরীরের বিভিন্ন স্থানে লক্ষণ বা উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
‘ক্লোজ দ্য কেয়ার গ্যাপ’ অর্থাৎ ‘বৈষম্য কমাই ক্যানসার সেবায়’ শীর্ষক প্রতিপাদ্যে সারাবিশ্বের মতো আজ দেশেও পালিত হচ্ছে বিশ্ব ক্যানসার দিবস-২০২২। ইউনিয়ন ফর ইন্টারন্যাশনাল ক্যানসার কন্ট্রোল ( ইউআইসিসি) ৩ বছরের জন্য এ প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছে।
দিবসটি উপলক্ষে আজ ৪ ফেব্রুয়ারি (বৃহস্পতিবার) জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইন্সটিটিউট ও হাসপাতাল, বাংলাদেশ ক্যানসার ফাউন্ডেশনসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে নানা কর্মসূচি পালন করবে।
এর মধ্যে রয়েছে শোভাযাত্রা, ক্যানসারবিষয়ক পোস্টার ও ফেস্টুন প্রদর্শনী, আলোচনা সভা, ক্যানসার রোগী ও সারভাইবারদের অংশগ্রহণে ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অন্যতম।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল অনকোলজি বিভাগের উদ্যোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ ডা. মিল্টন হলে আলোচনা সভা ও র্যালি অনুষ্ঠিত হয়।
এছাড়া জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের উদ্যোগে আজ সকাল ৯টায় হাতিরঝিলে সচেতনতামূলক নৌ-র্যালি ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অধিভুক্ত প্রতিষ্ঠান গ্লোবোক্যানের সর্বশেষ হিসাব বলছে, বাংলাদেশে বর্তমানে ১৫ লাখ ক্যানসার রোগী রয়েছে। এ ছাড়া দেশে প্রতিবছর ১ থেকে দেড় লাখ মানুষের দেহে নতুন করে ক্যানসার শনাক্ত হচ্ছে।
প্রতিবছর ১ লাখ ৯ হাজার রোগী মারা যায়। সেই হিসাবে গত দুই বছরে ক্যানসার আক্রান্ত হয়ে ২ লাখ ১৮ হাজার মানুষ মারা গেছে। স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে করোনার মধ্যে ২০-৩০ গুণ বেশি ক্যানসারের মৃত্যু হচ্ছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, বাংলাদেশে ক্যানসার চিকিৎসায় সরকারি-বেসরকারি মিলে ২৬টি প্রতিষ্ঠান থাকলেও সমন্বিত ক্যানসার চিকিৎসা সুযোগ রয়েছে মাত্র জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউটে। এই হাসপাতালে বছরে ৩০ হাজার রোগী চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
অবশিষ্ট ১ লাখ ২০ হাজার রোগী ২৫টা কেন্দ্রে সেবা নিচ্ছে। সেই রোগীদের চিকিৎসার জন্য তেমন সুযোগ-সুবিধা নেই। সম্প্রতি দেশে ক্যানসার চিকিৎসায় আট বিভাগের ৮টি ক্যানসার ইনস্টিটিউটের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে। আগামী ৩-৪ বছর পর হাসপাতালগুলো চিকিৎসাসেবার উপযোগী হবে।
জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউটের মেডিকেল অনকোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মুহাম্মাদ রফিকুল ইসলাম সংবাদ মাধ্যমকে জানান, ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসার সংকট নিরসনে বিষয়ভিত্তিক বিশেষজ্ঞ গড়ে তুলতে হবে।
আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে ক্যানসার রোগী দ্বিগুণ হবে। তাই সেভাবে পরিকল্পনা করে ঢেলে সাজাতে হবে। কিছু বেসরকারি হাসপাতালে ক্যানসার চিকিৎসার সুযোগ থাকলেও টাকার অভাবে দরিদ্র ও নিম্নমধ্যবিত্তরা সেবার বাইরে থেকে যাচ্ছে।
গাইনোকোলজিক্যাল অনকোলজি, সোসাইটি অব বাংলাদেশ (জিওএসবি) সভাপতি অধ্যাপক ডা. টিএ চৌধুরী বলেন, নারীদের জরায়ুমুখের ক্যানসার চিকিৎসায় আমরা টিকা প্রদান কার্যক্রম শুরু করেছিলাম। করোনাকালে কিছু কারণে সেটা ধারাবাহিকতা হারিয়েছে। তবে স্ক্রিনিং কর্মসূচি নিয়মিত চলছে।
জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. হাবিবুল্লা তালুকদার রাসকিন সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, বাংলাদেশে ক্যানসার রোগীর অনুমিত সংখ্যা ১৩-১৫ লাখ। এর সঙ্গে প্রতিবছর নতুন করে যোগ হচ্ছে আরও ২ লাখ রোগী।
আরও পড়ুন: ওমিক্রনের নতুন উপধরনে সতর্কতা জরুরি
পুরুষের ক্ষেত্রে ফুসফুস ও প্রোস্টেট ক্যানসার এবং নারীদের ফুসফুস, স্তন ও জরায়ুমুখ ক্যানসার বেশি হচ্ছে। দেশে স্তন ক্যানসার প্রতিবছর ৮ হাজার ৩৯৬ নারীর মৃত্যু হয়।
তবে ক্যানসার আক্রান্তদের এক-তৃতীয়াংশের ক্ষেত্রে রোগটি প্রতিরোধ সম্ভব। যদি প্রাথমিকভাবে রোগটি শনাক্ত করা যায় এবং সময়মতো চিকিৎসা নেওয়া যায়। এ জন্য ক্যানসার স্ক্রিনিংয়ে আলাদা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা দরকার।
সান নিউজ/ এইচএন