নিজস্ব প্রতিবেদক: আলোচিত সেনাবাহিনীর (অব.) মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলার অন্যতম আসামি টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশের যাবতীয় জাতীয় পুরস্কার ও পদক বাতিলের দাবি ব্যবস্থা নিতে আবেদন জানিয়েছেন কক্সবাজার জেলা জজ আদালতের রাষ্ট্র পক্ষের আইনজীবী ফরিদুল আলম।
রবিবার (৯ জানুয়ারি) সোয়া ১০ টার দিকে যুক্তিতর্ক শুরু হয় জেলা জজ মোহাম্মদ ইসমাইলের আদালতে। সেখানে রাষ্ট্র পক্ষের যুক্তি উপস্থাপন করছেন আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলমসহ বাদী পক্ষে আইনজীবীরা।
সিনহা হত্যা মামলায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপনকালে ওসি প্রদীপের বিরুদ্ধে ২০৪ জনের অধিক নিরীহ লোককে বিচারবহির্ভুত হত্যার অভিযোগ তুলে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আদালতে বিচারকের কাছে মৌখিক এ দাবি জানান বলে উল্লেখ করেছে আদালত উপস্থিত একাধিক আইনজীবী।
পিপি আদালতকে জানান, ওসি থাকাকালীন নরপিশাচের মতো আচরণ করেছেন প্রদীপ কুমার দাশ। তার অপরাধ কর্ম নিয়ে কেউ কথা বলতে পারেনি। ফরিদুল মোস্তফা খান নামে এক সাংবাদিক সংবাদ পরিবেশনের করায় তাকে চরম ভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। এটাই তার অপেশাদারী আচরণের জলন্ত প্রমাণ। নির্যাতিত সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফা খান আদালতে সাক্ষীও দিয়েছেন। ক্ষমতার অপব্যবহার করে ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধের অভিযোগও উঠেছে সাবেক ওসি প্রদীপের বিরুদ্ধে। এসব কারণে ওসি থাকাকালীন পাওয়া রাষ্ট্রীয় পুরস্কার ও পদক বাতিল করার দাবি জানাচ্ছি।
এর আগে, পৌনে ১০টার দিকে কঠোর নিরাপত্তায় সাবেক ওসি প্রদীপসহ ১৫ আসামিকে আদালতে হাজির করা হয় আদালতে। সোয়া ১০টায় শুরু হয় রাষ্ট্র পক্ষের যুক্তি।
পিপি জানান, ৮৩ জন সাক্ষীর মধ্যে ৬৫ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। তাদের জেরা শেষ হবার পর ৬ ডিসেম্বর (সোমবার) কার্যবিধি ৩৪২ ধারায় ১৪ জন আসামি আদালতে তাদের লিখিত বক্তব্য দেন। পরদিন (মঙ্গলবার) অপর আসামি নন্দ দুলাল তার লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন।
পরে আসামিদের বক্তব্য নিয়ে আদালত পর্যালোচনাও করে বিচারক আদালতে উপস্থিত সব আসামিকে পৃথকভাবে তাদের বক্তব্য নিয়ে সরাসরি সওয়াল-জবাব করেন। বিচারক আসামিদের প্রত্যেককে নিজেদের অপরাধের বিষয়ে সরাসরি জানতে চান। লিখিত বক্তব্যের পাশাপাশি ওসি প্রদীপসহ আসামিরা মৌখিকভাবে বিচারকের প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন। এরপর ৯ থেকে ১২ জানুয়ারি ধার্য তারিখে মামলার যুক্তিতর্ক শুরু হয়েছে সোয়া ১০টায়।
গত ২৩ আগস্ট থেকে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাঈলের আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণ এবং জেরা শুরু হয়ে ১ ডিসেম্বর শেষ হয়। যেখানে ৬৫ জন সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছেন।
গত ২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর তল্লাশি চৌকিতে পুলিশের গুলিতে মেজর সিনহা নিহত হন। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে তিনটি (টেকনাফে দুটি, রামুতে একটি) মামলা করে। ঘটনার পর গত ৫ আগস্ট কক্সবাজার আদালতে প্রদীপ কুমার দাশ, লিয়াকত আলীসহ ৯ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন মেজর সিনহার বড়বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস।
আলোচিত এ মামলায় গত বছর ১৩ ডিসেম্বর তদন্ত কর্মকর্তা ও র্যাব-১৫ কক্সবাজার ব্যাটালিয়নের তৎকালীন দায়িত্বরত সহকারী পুলিশ সুপার খাইরুল ইসলাম ওসি প্রদীপসহ ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। গত ২৭ জুন আদালত ১৫ জন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। মামলায় ৮৩জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। তাদের মধ্যে এ পর্যন্ত ৬৫ জনের সাক্ষ্যপ্রদান করেছেন।
সান নিউজ/এনএএম