নিজস্ব প্রতিবেদক:
জাতীয় কল সেন্টার ও আইইডিসিআর এর নির্ধারিত হটলাইনে করোনা-বিষয়ক সেবার জন্য গত ১৪ জুন পর্যন্ত প্রায় এক কোটি ১০ লাখ ফোন কল এসেছে। কিন্তু, করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে পাঁচ লাখ। অর্থাৎ ফোন কল আসার তুলনায় পরীক্ষার সংখ্যা খুবই কম।
সোমবার (১৫ জুন) ‘করোনাভাইরাস সংকট মোকাবিলায় সুশাসনের চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)-এর প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানায় সংস্থাটি।
টিআইবির পক্ষ থেকে বলা হয়, চিকিৎসা ব্যবস্থায় উন্নত দেশের সমতুল্য দাবি করা হলেও পরীক্ষার হারের দিক থেকে অনেক পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশে। দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয় সর্বনিম্ন এবং বিশ্বে ১৪৯তম।
গবেষণায় উঠে এসেছে , গত ২৫ মার্চ পর্যন্ত দেশে একটি ল্যাবে করোনাভাইরাসের পরীক্ষা হয়েছে। হটলাইনসহ নির্ধারিত নম্বরগুলোতে ৬৩৯টি ফোন কলের বিপরীতে পরীক্ষা করা হয়েছে একটি। সর্বশেষ গত ১ জুন থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত ৬০টি ল্যাবে পরীক্ষা হচ্ছে। সময় বিবেচনায় পরীক্ষার সংখ্যা পর্যাপ্ত নয় বলে দাবি করেছে টিআইবি।
টেকনোলজিস্ট সংকট, মেশিন নষ্ট থাকা, জনবল ও মেশিনে সংক্রমিত হওয়া এবং সমন্বয়ের ঘাটতির কারণে মেশিনের সক্ষমতার সর্বোচ্চ ব্যবহার করা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। গবেষণায় বলা হয়, ঢাকা ও ঢাকার বাইরে সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে ৬০টি ল্যাবে প্রায় ৮৫টির মতো পিসিআর মেশিন দিয়ে প্রায় ২৪ হাজার নমুনা পরীক্ষার সক্ষমতা থাকলেও সর্বশেষ ১৪ দিনে গড়ে ১৩.৬ হাজার নমুনা পরীক্ষা করা সম্ভব হয়েছে। ১৫ মে থকে প্রতিদিন গড়ে চার থেকে পাঁচটি পরীক্ষাগারে কোনও পরীক্ষা হচ্ছে না। ২৫ মে সর্বোচ্চ ১১টি এবং ১৫ ও ২৯ মে ৮টি করে পরীক্ষাগারে কোনও পরীক্ষা হয়নি। ইতোমধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষাগার স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণাকেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর’বি) এর করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরীক্ষার জন্য আটটি পিসিআর মেশিন এবং নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষার জন্য প্রশিক্ষিত কর্মী থাকায় অনুমোদন পাওয়ার তারিখ থেকে (৩০ মার্চ, ২০২০) ৩১ মে পর্যন্ত তারা প্রতিদিন ৭০০টি করে দুই মাসে ৪২ হাজার নমুনা পরীক্ষা করতে সক্ষম। কিন্তু তাদের দিয়ে মাত্র ১৫ হাজার ৬৭৮টি নমুনা পরীক্ষা করানো হয়।
মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট সংকটের কারণে নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষায় সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়া অনেক ক্ষেত্রে নমুনা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে এবং ভুল প্রতিবেদন আসছে বলে গবেষণায় দাবি করা হয়।
গবেষণায় বলা হয়, করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ ও প্রতিবেদন দিতে কখনও কখনও ৮-১০ দিন পর্যন্ত বিলম্ব হচ্ছে। আক্রান্ত ব্যক্তি পরীক্ষার ক্ষেত্রে যোগাযোগ করতে না পারা, নমুনা সংগ্রহ না করা, নমুনা দিতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা, দীর্ঘ লাইন, রাস্তায় সারারাত অপেক্ষা, একাধিকবার কেন্দ্রে যেতে বাধ্য হওয়া, গাদাগাদি করে বসিয়ে রাখা ইত্যাদি দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। এসব সমস্যার কারণে গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত ৫৭ শতাংশ হাসপাতাল প্রয়োজনের চেয়ে অর্ধেক সংখ্যক পরীক্ষা করাতে বাধ্য হচ্ছে।
গবেষণাটি করেছে টিআইবির রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি বিভাগের ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার মো. জুলকারনাইন, মোরশেদা আকতার, প্রোগ্রাম ম্যানেজার তাসলিমা আকতার ও মনজুর-ই খোদা। প্রতিবেদন উপস্থাপনের সময় টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, নির্বাহী ব্যবস্থাপনা বিভাগের উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের উপস্থিত ছিলেন।