নিজস্ব প্রতিবেদক: ব্লগার ও লেখক অভিজিৎ রায় হত্যায় দণ্ডিত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর চাকরি হারানো মেজর সৈয়দ জিয়া ও আকরাম হোসেন অন্যদেশে পালিয়েছেন বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। এ দিকে জিয়া ও আকরামসহ ওই হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের তথ্য চেয়ে ৫০ লাখ ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর। যুক্তরাষ্ট্র বলছে, বাংলাদেশেই হামলাকারীরা অবস্থান করছেন।
২০১৬ সালের পর থেকে আনসার আল ইসলামের পক্ষ থেকে হামলার কোনও তথ্য পাওয়া না গেলেও এই সংগঠন ভেতরে ভেতরে সংগঠিত হচ্ছে বলে ধারণা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের। তাদের মতে, গত কয়েক বছরে কোনও হামলা হয়নি বলে আনসার আল ইসলাম বা জিয়া নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছে তা বলা যাবে না। পলাতক থেকেই জিয়া সংগঠনে এখনও সক্রিয় নেতা হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টানা অভিযানে খুব ধীরগতিতে কাজ করছে আনসার আল ইসলাম।
সিটিটিসি’র একজন কর্মকর্তা জানান, তারা এখনও সংগঠনের বিভিন্ন সিক্রেট অ্যাপসে জিয়ার সরব উপস্থিতি পাচ্ছেন। তবে ছদ্মনাম ব্যবহার করায় সেই ব্যক্তি জিয়াই কিনা তা নিয়ে শতভাগ নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না। তবে কমান্ডিং বার্তাসহ জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে তাকে সক্রিয় বলেই ধরে নিতে চান ওই কর্মকর্তা।
আনসার আল ইসলাম প্রতিনিয়ত নিত্য-নতুন কৌশলে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে বলে মনে করেন পুলিশের এই কর্মকর্তা। তার মন্তব্য, কাট-আউট বা স্লিপার সেল পদ্ধতি ছাড়াও তারা এখন অনলাইন ভিত্তিক প্রচারণা এবং হিজরতের উদ্দেশে বাসা থেকে বের না হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছে সদস্যদের। প্রয়োজনে যেকোনও সময় তাদের ভাষায় দাওয়ার কাজে বের হওয়ার জন্য সবসময় প্রস্তুত থাকতে বলা হচ্ছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা জানান, জিয়াকে ধরাটাই তাদের জন্য এখন বড় চ্যালেঞ্জ। তাকে ধরতে না পারলে আনসার আল ইসলামকে নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে না। যদিও আনসার আল ইসলাম আপাতত হামলা বা টার্গেট কিলিং থেকে সরে এসেছে। কিন্তু অদূর ভবিষ্যতে তারা আবারও আতঙ্ক ছড়িয়ে মাঠে নামতে পারে।
জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে পুলিশের আরেক বিশেষায়িত ইউনিট এন্টি টেরোরিজম ইউনিটের পুলিশ সুপার (ইন্টেল) হাসানুল জাহিদ বলেন, ‘জিয়াকে ধরতে আমরা চেষ্টা করছি। সাম্প্রতিক সময়ে আনসার আল ইসলামের অনেক সদস্যকেই গ্রেফতার করা হয়েছে। কিন্তু তাদের কাছ থেকে জিয়ার কোনও তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। মনে হচ্ছে, জিয়া সংগঠনের শীর্ষপর্যায়ের নেতা ছাড়া সাধারণ সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে না।
সেনাবাহিনী থেকে বহিষ্কৃত মেজর সৈয়দ জিয়াউল হক ওরফে মেজর জিয়ার পলাতক জীবন শুরু ২০১১ সালে। এরপর পেরিয়ে গেছে একদশকেরও বেশি সময়। পলাতক থেকেই বাংলাদেশের নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিম ও আনসার আল ইসলামের সামরিক কমান্ডার হিসেবে নেতৃত্ব দিয়ে আসছে। ২০১৩ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত একাধিক টার্গেট কিলিংয়ের সঙ্গে জড়িত সে। তার বিরুদ্ধে মোট ১১টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ব্লগার রাজীব হায়দার, অভিজিৎ রায়, নিলাদ্রী নিলয় ও জুলহাজ-তনয় হত্যাকাণ্ডসহ ছয়টিতে আদালত তাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে। কিন্তু এত বছরেও তার হদিস পাওয়া যাচ্ছে না কেন?
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা মনে করেন, জিয়া অত্যন্ত চতুর, তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষ এবং শারীরিক গঠনেও অনেক শক্তিশালী। সেনাবাহিনীর চৌকস অফিসার ছিল সে। এ কারণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দেওয়া তার কাছে সহজ। দুর্গম এলাকায় অবস্থান করাটা তার জন্য কঠিন নয়। সে হিসাব-নিকাশ করে প্রতিটি পদক্ষেপ ফেলে। তবুও কয়েকবার তার অবস্থান শনাক্ত করা হয়েছিল। একাধিক স্থানে অভিযানও চালায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। কিন্তু তাকে ধরা যায়নি।
সাননিউজ/এমআর