নিজস্ব প্রতিবেদক: বিজয়ের মাসে ঢাকাবাসীর উপহার হিসেবে আগামী ২৬ ডিসেম্বর চালু হচ্ছে বাস রুট রেশনালাইজেশন কার্যক্রমের প্রথম পরীক্ষামূলক রুট। পরীক্ষামূলক এই রুটে বিআরটিসি’র ৩০টি ডাবল ডেকার বাসসহ ৫০টি বাস দিয়ে পরীক্ষামূলক এই রুট চালু করা হচ্ছে। আগামী ২ মাসের মধ্যে এই রুটে বাসের সংখ্যা ১০০ এ উন্নীত করা হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ঢাদসিক) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।
রোববার (১৯ ডিসেম্বর) বিকেলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ঢাদসিক) নগর ভবনের বুড়িগঙ্গা হলে বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটির ২০তম সভা শেষে সাংবাদিকদেরকে এ তথ্য জানান ঢাদসিক মেয়র ও বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটির সভাপতি ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।
ঢাদসিক মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস বলেন, ‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে, বিজয়ের এই মাসে আমরা একটি সুখবর দিতে চাই। আমরা ঢাকাবাসীকে যে শৃঙ্খলবদ্ধ গনণপরিবহন ব্যবস্থা চালুর প্রতিশ্রুতি দিয়েছি, সেই লক্ষ্যে, আগামী ২৬ ডিসেম্বর তারিখে শুভ সূচনা করতে যাচ্ছি দীর্ঘ প্রতীক্ষিত ঢাকা নগর পরিবহণের। এই বিজয়ের মাসে ঢাকাবাসীর উপহার হিসেবে ঘাটারচর থেকে মতিঝিল হয়ে কাচঁপুর পর্যন্ত আমাদের পরীক্ষামূলক এই যাত্রাপথ চালু হবে।’
এ সময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ঢাদসিক মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস বলেন, ‘ঢাকা শহরে ১৫৪৬টি অনুমোদনহীন বাস রয়েছে এবং সেগুলোর বিরুদ্ধে যৌথ অভিযান চলমান রয়েছে। অনুমোদনহীন কোন বাস এই ঢাকা শহরে আর চলতে দেওয়া হবে না। এরই মাঝে যৌথ অভিযানের মাধ্যমে আমরা ২৯টি বাস জব্দ করেছি, সেগুলোকে ডাম্প করা হয়েছে। এছাড়াও বাকী যেগুলো আছে, সেগুলোকে বিনষ্ট করা হবে, ধ্বংস করা হবে।’
পরীক্ষামূলকভাবে চালু হতে যাওয়া রুটে যে ক'টি বাসের রুট পারমিট আছে সেগুলোকে এই গ্রীন ক্লাস্টারের অন্য রুটে সমন্বয় করে দেওয়া হবে জানিয়ে মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস বলেন, ‘এ সমন্বয়ে একটু সময় লাগবে। আমরা নির্ধারণ করেছি, আগামী ৩১ জানুয়ারির মধ্যে এই সমন্বয়টা করে দেবো। একটা জিনিস যখন সূচনা করছি, তখন কিছু ট্রায়াল এণ্ড এরর কিছু থাকবে। কিছু ভুল হবে, কিছু ব্যাঘাত হচ্ছে। ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ এগুলোকে সার্বক্ষণিক তদারকি করছে। আগামী ৬০ দিনের মধ্যে এই রুটের সকল নতুন গাড়ি চলে আসবে।’
গ্রীন ক্লাস্টেরর অধীনে সকল যাত্রাপথেই পর্যায়ক্রমে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে আবেদন নেওয়া হবে এবং যাচাই-বাছাই করে সেগুলোকে অনুমোদন দেওয়া হবে জানিয়ে ঢাদসিক মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস বলেন, ‘নতুন যে বাসগুলো আসছে, বিআরটিএ যথারীতি সেগুলোর নিবন্ধন সম্পন্ন করবে। এভাবেই গ্রীন ক্লাস্টারের জন্য যে যৌথমূলধনী অংশীদারিত্ব চুক্তির আলোকে কোম্পানি প্রতিষ্ঠিত হবে সেটাই।’
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘প্রথম দিন থেকেই এ রুটের বাসগুলোতে ই-টিকিটিং সিস্টেম চালু করা হবে। আমাদের বাস-বে, যাত্রী ছাউনিগুলোর কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এছাড়া প্রতিটি বাসের ড্রাইভার-স্টাফদের নির্দিষ্ট পোশাক থাকবে, সেইসঙ্গে তাদের আইডি কার্ড গলায় ঝোলানো অবস্থায় থাকবে। যেসব বাসের রেজিস্ট্রেশন ও রুট পারমিট আছে, সেসব বাসই কেবল এ রুটে বাস পরিচালনা করতে পারবে।’
এ সময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘এই শহরে আমরা সবাই বাস করি। কেউ হরতাল ডাকবে, ধর্মঘট ডাকবে সেটা কাম্য নয়। বাস রুট রেশনালাইজেশন কার্যক্রম শুরু করতে যেটুকু দেরি হয়েছে, সেটা কিন্তু বাস মালিকদের জন্যই। তারা বাস দেবো দেবো বলে দেরি করেছেন। কিন্তু আমরা যখন পত্রিকায় বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে বাস চাইলাম, তখন সেই সমস্যার সমাধান হয়ে গিয়েছে। এই বার্তাটুকু ওনারা পেয়েছেন। আমরা দুই মেয়র একসাথে কাজ করছি এবং আমরা বিশ্বাস করি, তারা সে ধরনের কোনো অসহযোগিতা করবেন না।’
সভায় বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথোরিটি (বিআরটিএ) চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার, বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট করপোরেশনের চেয়ারম্যান মো. তাজুল ইসলাম, রাজউক চেয়ারম্যান এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী, ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালক খন্দকার রাকিবুর রহমান (বর্তমানে পিআরএল এ আছেন), ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নিবার্হী কর্মকর্তা ফরিদ আহম্মদ, ঢাকা মেট্টোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. শফিকুল ইসলাম, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ, গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. এস এম সালেহ উদ্দিনসহ কমিটির সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সান নিউজ/এনএএম