নিজস্ব প্রতিবেদক:
তিনটি শিল্পবিপ্লব পৃথিবীর ইতিহাসের গতিপথ পাল্টে দিয়েছে খুব দ্রুত। প্রথম বৈপ্লবিক পরিবর্তনটি আসে ১৭৮৪ সালে বাষ্পীয় ইঞ্জিন আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে। ১৮৭০ সালে বিদ্যুৎ আবিস্কারের মাধ্যমে বিস্ময়কর এক জগতে প্রবেশ করতে শুরু করে পৃথিবী। এরপর ১৯৬৯ সালে ইন্টারনেটের আবিষ্কার মানুষের চিন্তা এবং কর্মশক্তিতে নিয়ে আসে যুগান্তকারী পরিবর্তন। সাড়া দুনিয়াতে পরবর্তীতে যে প্রযুক্তি মানব ইতিহাসে তোলপাড় সৃষ্টি করে দিয়েছে তা হল ডিজিটাল বিপ্লব, যেটিকে বলা হচ্ছে চতূর্থ শিল্প বিপ্লব।
ডব্লিউইএফের প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী প্রধান ক্লাউসের মতে, “দ্বিতীয় ও তৃতীয় শিল্পবিপ্লবের ভিত্তির ওপর শুরু হওয়া ডিজিটাল এ বিপ্লবের ফলে সবকিছুর পরিবর্তন হচ্ছে গাণিতিক হারে, যা আগে কখনো হয়নি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, বিশ্বের প্রতিটি দেশের প্রতিটি খাতে এ পরিবর্তন প্রভাব ফেলছে, যার ফলে পাল্টে যাচ্ছে উৎপাদন প্রক্রিয়া, ব্যবস্থাপনা, এমনকি রাষ্ট্র চালানোর প্রক্রিয়া”।
এই বিপ্লবের জগতে বাংলাদেশ নাম লিখিয়েছে অনেক দেরিতে। এরই মধ্যে অনেক দূর এগোলেও ডিজিটাল প্রযুক্তির অনেক ক্ষেত্রে রয়েছে জটিলতা, রয়েছে চ্যালেঞ্জ।
ইতিহাসের যে মহানায়ক বাংলাদেশ নামের একটি ভূ-খন্ড উপহার দিয়ে গেছেন বাঙালি জাতিকে, সেই বঙ্গবন্ধু আজ আমাদের চোখের সামনে না থাকলেও তাঁর দু’চোখ ভরা স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথেই এগিয়ে চলেছে এই দেশ। তাই বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীকে কেন্দ্র করে ‘৪র্থ শিল্প বিপ্লব ও সাইবার নিরাপত্তার ঝুঁকি মোকাবিলায় তথ্যপ্রযুক্তিবিদদের প্রস্তুতি” এই স্লোগানকে সামনে রেখে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে তথ্য-প্রযুক্তিবিদদের সব থেকে জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজন ‘সিটিও টেক সামিট ২০২০’। বাংলাদেশের তথ্য-প্রযুক্তিবিদদের একমাত্র সংগঠন সিটিও ফোরামের আয়োজনে আগামী ১৮ জানুয়ারি রাজধানীর স্যামসন চৌধুরী কনভেনশন সেন্টারে দিনব্যাপী এ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে।
সংগঠনের সভাপতি তপন কান্তি সরকার সান নিউজকে বলেন, ভারত যখন তথ্য-প্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগ করা শুরু করল, আমাদের তখন কোন রকম প্রস্তুতিই ছিল না। বর্তমান সরকার দেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশের পথে এগিয়ে নেয়ার ঘোষনা দিলেও অনেকের মনেই সন্দেহ ছিল- তা আদৌ সম্ভব কিনা। কিন্তু বাস্তবতা হল এরই মধ্যে আমরা অনেকটা এগিয়েছি। তবে যেতে হবে আরও দীর্ঘ পথ।
বেশ কিছু সংকট উত্তরণে জরুরীভিত্তিতে কর্মপন্থা সুনির্দিষ্ট করার তাগিদ দিয়ে সিটিও ফোরামের সভাপতি বলেন, “আমাদের দেশের অনেক ছেলে-মেয়ে বিদেশে এই খাতে দক্ষতার সঙ্গে কাজ করছে। আমরা তাদেরকে নিজ দেশের স্বার্থে ব্যববহার করতে পারছি না। দেশের মধ্যে যেসব প্রতিষ্ঠান আইটি খাতে কাজ করার চেষ্টা করছে, তারা অনেক পুরোনো প্রযুক্তির সাথে তাল মেলানোর চেষ্টা করছে এবং প্রয়োজনের তুলনায় তা নগণ্য। এখান থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। দক্ষ জনবল তৈরি করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রথাগত শিক্ষা দিয়ে চতূর্থ শিল্প বিপ্লবের সুফল পাওয়া যাবে না। ইন্ডাস্ট্রি ডিম্যান্ডের বিষয়টি অনুধাবনে নিয়ে একাডেমিক কারিকুল্যাম সাজাতে হবে। নিত্য নতুন প্রযুক্তি মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে আমাদেও সীমাবদ্ধতা রয়েছে। আমাদেও আরেকটি সংকট হচ্ছে ইংরেজীতে দক্ষতাসম্পন্ন লোকের অভাব”।
ডিজিটাল বিপ্লবে আশাবাদের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “চতূর্থ শিল্প বিপ্লব আমাদের দরজায় দাঁড়িয়ে। দেশ এখন ডিজিটাল রূপান্তরের পথে। প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়ে চলেছে। ব্লক চেইন বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের মতো বিষয়গুলো নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে। বিষয়গুলো আরও বেশি সামনে তুলে আনতে হবে। সর্বস্তরে সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে”।
তাই চতূর্থ শিল্প বিপ্লবের পথে এগিয়ে যেতেই আধুনিক প্রযুক্তি খাতের নানা বিষয় নিয়ে দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে আয়োজন করা হয়েছে সিটিও টেক সামিটের।
যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, মালয়েশিয়া, নেপাল, ভূটানসহ বিভিন্ন দেশ থেকে প্রায় অর্ধশত বিশেষজ্ঞ যোগ দেবেন প্রযুক্তি নির্বাহীদের এই সন্মেলনে। যোগ দেওয়ার বিষয় ইতিমধ্যে নিশ্চিত করেছেন। এছাড়া সম্মেলনে দেশের প্রযুক্তি খাতের সরকারি পর্যায়ের নীতি নির্ধারণী ব্যক্তিরাও সরাসরি অংশ নেন। এবারের আয়োজনে ৬০০ প্রযুক্তিপ্রেমী অংশ নেবেন।
এই আয়োজনের নলেজ পার্টনার হিসেবে রয়েছে ভারতের ইনফোসেক ফাউন্ডেশন, ইয়ুথ পার্টনার হিসেবে আছে বাংলাদেশের ইয়ুথ এম্পাওয়ারমেন্ট ফোরাম। আর মিডিয়া পার্টনার হিসেবে রযেছে অনলাইন নিউজ পোর্টাল ‘সান নিউজ’।