নিজস্ব প্রতিবেদক: তাবলিগ জামাতকে ‘সন্ত্রাসবাদের অন্যতম দ্বার’ আখ্যায়িত করে সৌদি আরবের ইসলামবিষয়ক মন্ত্রণালয় তাবলিগ জামাতকে নিষিদ্ধ করার নিন্দা ও প্রতিবাদ করেছে বাংলাদেশের বিভিন্ন সংগঠন। সৌদি আরবের এ সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন কওমি মাদ্রাসাগুলোর সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ আল-হাইআতুল উলয়া, কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড ও হেফাজতে ইসলাম। মঙ্গলবার (১৪ ডিসেম্বর) বিবৃতি দিয়েছেন তারা।
সংগঠনগুলোর দাবি, সম্প্রতি সৌদি আরবের ইসলামিক অ্যাফেয়ার্স মন্ত্রী জুমার নামাজের খুতবায় তাবলিগি ও দাওয়াহ গ্রুপ সম্পর্কে মুসল্লিদের সতর্ক করতে সে দেশের মসজিদ ও মসজিদের প্রচারকদের নির্দেশ দিয়েছেন। নির্দেশনায় তাবলিগ জামাতকে সমাজের জন্য ক্ষতিকারক বলে উল্লেখ করতে বলা হয়। এই গোষ্ঠীর পথভ্রষ্টতা, বিচ্যুতি এবং ভয়াবহতা সম্পর্কে ব্যাখ্যা করতে বলা হয় মসজিদের খতিবদের।
তাবলিগ জামাতের বিষয়ে সৌদি পদক্ষেপের প্রতিবাদ জানিয়েছেন তাদের মধ্যে অন্যতম আল-হাইআতুল উলয়া লিল-জামি’আতিল কওমিয়া বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ও কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের (বেফাক) সভাপতি মাহমুদুল হাসান, কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের আমির ও জামিয়া ইসলামিয়া বাবুনগরের মহাপরিচালক মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী ও মহাসচিব সাজিদুর রহমান, এ ছাড়া আন্তর্জাতিক মজলিসে তাহাফফুজে খতমে নবুওয়ত বাংলাদেশের মহাসচিব মুহিউদ্দীন রাব্বানী, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির ইসমাঈল নূরপুরী প্রমুখ।
বিবৃতিতে মাহমুদুল হাসান বলেন, সৌদি সরকারের প্রজ্ঞাপনের বক্তব্যে বাংলাদেশ, পাকিস্তান-ভারত উপমহাদেশের উলামায়ে কেরাম ও সর্বস্তরের তৌহিদি জনতা খুবই মর্মাহত হয়েছেন। এর ফলে সারা বিশ্বে এই কাজে নিষেধাজ্ঞা জারির প্রবণতা দেখা দিতে পারে এবং তাতে মুসলমানদের শত্রুরাই খুশি ও লাভবান হবে।
মাহমুদুল হাসান আরও বলেন, বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ ইমান, ইসলাম ও ইহসানের দিকে ধাবিত হচ্ছে তাবলিগের মেহনতের ফলে। তাই সৌদি আরবের আলেমদের উচিত তাবলিগের কাজ সম্পর্কে উপমহাদেশীয় আলেমদের সঙ্গে কথা বলে মন্তব্য করা। ইনসাফের স্বার্থেই এ নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে সৌদি সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।
বিবৃতিতে বেফাক সভাপতি উল্লেখ করেন, তাবলিগ জামাতের বিরুদ্ধে সৌদি সরকারের নিষেধাজ্ঞার খবরে ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দ মাদ্রাসার মুহতামিম মুফতি আবুল কাসেম নূমানী উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং দারুল উলুম দেওবন্দ এ সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়েছে।
কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের আমির ও জামিয়া ইসলামিয়া বাবুনগরের মহাপরিচালক মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী ও মহাসচিব সাজিদুর রহমান বলেছেন, তাবলিগ জামাত বিশ্বব্যাপী একটি অরাজনৈতিক, নির্ভেজাল, দাওয়াতি সংগঠন। ঊনবিংশ শতাব্দীতে দারুল উলুম দেওবন্দের এক সুযোগ্য সন্তান শায়খ মাওলানা ইলিয়াস (রহ.)–এর হাতে এই জামাত প্রতিষ্ঠিত হয় এবং বিশ্বব্যাপী এর ব্যাপক বিস্তার লাভ করে। এই জামাতের একমাত্র উদ্দেশ্য মানুষদের ইসলামের দাওয়াত দেওয়া, সুন্নতের অনুসরণে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করা, পথহারা মানুষকে পথের দিশা দেওয়া। সৌদি সরকার এই জামাতের বিরুদ্ধে কবর পূজা, শিরক বা জঙ্গিবাদের যে অপবাদ দিচ্ছে, তা জঘন্য অপবাদ ছাড়া আর কিছু নয়।
নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে হেফাজতের দুই নেতা বলেন, এমন কোনো সিদ্ধান্ত তারা যেন না নেয়, যা তাদের ন্যায়বোধকে বিশ্বদরবারে প্রশ্নবিদ্ধ করবে।
প্রসঙ্গত, গত সোমবার (৬ ডিসেম্বর) এক টুইট বার্তায়, তাবলিগ জামাতের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে সতর্কতা জারি করেছে সৌদি আরব। এরই ধারাবাহিকতায় জুমার নামাজের খুতবায় এ সংগঠন সম্পর্কে মানুষকে সতর্ক করার নির্দেশ দিয়েছেন দেশটির ইসলাম বিষয়ক মন্ত্রী ডা. আব্দুললতিফ আল শেখ।
টুইট বার্তায় এ সংগঠনকে সন্ত্রাসে জড়িত হওয়ার অন্যতম ‘মাধ্যম’ উল্লেখকরে এর বিপথগামীতা, বিচ্যুতি ও ভয়াবহতার নানা দিক মুসল্লিদের কাছে তুলে ধরতে বলা হয়। এছাড়াও সংগঠনটির প্রধান ভুলগুলো মানুষের সামনে তুলে ধরার নির্দেশ দেওয়া হয়।
টুইট বার্তায় আরো জানানো হয় যে সৌদি আরবে ‘তাবলিগি’ ও ‘দাওয়াহ’ গ্রুপ অর্থাৎ ধর্মপ্রচারের পক্ষপাতমূলক দলগুলোর সঙ্গে সম্পৃক্ততা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
সান নিউজ/এমকেএইচ