নিজস্ব প্রতিবেদক: মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করছেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান। জামালপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য তিনি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অসৌজন্যমূলক বক্তব্য ফাঁস হওয়ার পর তাকে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার নির্দেশনার পর মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।
সম্প্রতি তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান ও তার মেয়ে জাইমা রহমানকে নিয়ে একটি সাক্ষাৎকারে অসৌজন্যমূলক কথা বলেন। এছাড়া এর কিছু পরেই প্রতিমন্ত্রী মুরাদের একটি কথোপকথন ফাঁস হয়, যেখানে তিনি অশ্লীল ভাষায় চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহিকে তার সঙ্গে দেখা করার জন্য বলেন। ফোনে চিত্রনায়ক ইমনকে তিনি বলেন, ঘাড় ধরে যেন মাহিকে তার কাছে নিয়ে যান। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিভিন্ন মহলে ডা. মুরাদের শাস্তির দাবি ওঠে।
ইমন ডা. মুরাদকে জানান, তিনি বনানীর একটি রেস্তোরাঁয় রয়েছেন। কথা বলার একপর্যায়ে মাহিয়া মাহিও তার সঙ্গে রয়েছেন জানিয়ে ইমন ডা. মুরাদের সঙ্গে কথা বলিয়ে দেন।
ডা. মুরাদ মাহিয়া মাহিকে ফোনে পেয়ে বিভিন্ন অশ্লীল কথাবার্তা বলতে থাকেন। একপর্যায়ে ‘অশ্লীল ভাষায়’ দেখা করার জন্য ‘নির্দেশ’ দেন। প্রয়োজনে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পাঠানোরও হুমকি দেন তিনি।
ওই কথোপকথনের দ্বিতীয় ধাপে আবার কথা হয় এই দুজনের। ভাইরাল হওয়া অডিও ক্লিপটি ‘সঠিক’ বলে গণমাধ্যমের কাছে স্বীকার করেছেন চিত্রনায়ক ইমন।
ঘটনাটি দুই বছর আগের দাবি করে ইমন জানান, একটি ছবির মহরত অনুষ্ঠানের আগের রাতে ফোন দেন প্রতিমন্ত্রী।
ইমন বলেন, এত বড় একজন মন্ত্রী যখন আমাকে কল দেন আমি তো তাকে ইগনোর করতে পারি না। সবাই তো অডিও ক্লিপটি শুনেছেন। সেখানে মানুষের গলার স্বর শুনলেও তো বোঝা যায় কে কোন অনুভূতি নিয়ে কথা বলছেন।
আমাকেই ওই রাতের আগের দিনও তিনি কল দিয়েছিলেন। আমি ধরতে পারিনি। ওইদিন রাতে ওয়াজেদ আলী সুমন ভাইয়ের ‘ব্লাড’ সিনেমার মিটিং করছিলাম। তখন উনি (প্রতিমন্ত্রী) হঠাৎ ফোন দেন। অডিওতে কিন্তু আছে উনি প্রথমেই বলেছেন, ‘তুই ফোন ধরস নাই কেন?’ আগের দিন ফোন ধরিনি বলে রেগেছিলেন।
একজন মন্ত্রী বারবার ফোন দিচ্ছেন আমি না ধরে তো থাকতে পারি না। তাই অনুষ্ঠানের মধ্যেই ধরেছি। বাকি আলাপ তো সবাই শুনেছেন। উনার আলাপ শুনেই কিন্তু আমি বাধ্য হয়ে বলেছি, ‘হ্যাঁ, ভাই আসতেছি। দেখছি ভাই’। খারাপ কিছু কিন্তু বলিনি।
জানা গেছে, আজ দুপুরের মধ্যেই মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে তার পক্ষে পদত্যাগপত্র জমা দেওয়া হবে। তিনি চট্টগ্রামে অবস্থান করায় মন্ত্রণালয়ের একজন প্রতিনিধি পদত্যাগপত্র জমা দেবেন। তিনি ব্যক্তিগত কারণে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করার কথা উল্লেখ করেছেন। এরই মধ্যে তার পদত্যাগপত্র তৈরি করা হয়েছে।
এর আগে, সোমবার (৬ ডিসেম্বর) রাতে আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের তার বাসভবনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জানান, আজ সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ডা. মুরাদের বিষয়ে কথা হয়েছে এবং আমি রাত ৮টায় প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসানকে বার্তাটি পৌঁছে দিই।
এরপরেই গতকাল রাতে ডা. মুরাদের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের কথা জানান ওবায়দুল কাদের।
সান নিউজ/এনকে