সান নিউজ ডেস্ক: পুলিশ বাহিনীর ব্যবহারের জন্য দুইটি হেলিকপ্টার কিনতে রাশিয়ার সঙ্গে একটি চুক্তি করেছে বাংলাদেশের পুলিশ। গত শুক্রবার (১৯ নভেম্বর) পুলিশ সদর দপ্তরে এই চুক্তি স্বাক্ষর হয়।
বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে এর আগে পুলিশের বিশেষ শাখা র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়নের এয়ার উইংয়ের হেলিকপ্টার থাকলেও, পুলিশ সদর দপ্তরের এয়ার উইং এই প্রথম কোন আকাশযান পেতে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ পুলিশের নৌ-শাখাও রয়েছে। ফলে হেলিকপ্টার সংযুক্ত হলে স্থল, নৌ ও আকাশ পথে পুলিশের কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি পাবে বলে কর্মকর্তারা আশা করছেন। সেনাবাহিনীর বাইরে আধা-সামরিক বাহিনী বিজিবির এয়ার উইং রয়েছে, যাদের একাধিক হেলিকপ্টার রয়েছে।
জেএসসি রাশিয়ান হেলিকপ্টার্স থেকে এমআই-১৭১এ২ ধরনের হেলিকপ্টার দুইটি কেনা হবে বলে পুলিশ সদর দপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
রাশিয়ান হেলিকপ্টার্সের ওয়েব সাইটের তথ্য অনুযায়ী, এমআই-১৭১এ২ হেলিকপ্টারগুলো আধুনিক প্রযুক্তিতে নির্মিত। রাশিয়ার কর্তৃপক্ষের মানদণ্ড অনুযায়ী, এগুলো ক্যাটেগরি-এ মাত্রার হেলিকপ্টার, যা বেসামরিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ মানদণ্ড অনুসরণ করে তৈরি বলে ওয়েবসাইটে দাবি করা হয়েছে।
এই হেলিকপ্টারগুলো ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২৮০ কিলোমিটার বেগে চলতে সক্ষম। একবার তেলের ট্যাংক পূর্ণ করে নেয়ার পর ৮০০ কিলোমিটার উড়তে পারে। হেলিকপ্টারটি চালাতে দুইজন ক্রু প্রয়োজন হয়। এছাড়া সর্বোচ্চ ৫ হাজার কেজি অথবা ২০ জন যাত্রী উঠতে পারবে।
রাশিয়ান হেলিকপ্টারের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, একশোটির বেশি দেশ তাদের কাছ থেকে এই হেলিকপ্টার কিনেছে। সারা বিশ্বে এখন এরকম আট হাজার হেলিকপ্টার উড়ছে।
বিভিন্ন দেশ দরকষাকষির ভিত্তিতে হেলিকপ্টার কিনে থাকে। ফলে এই হেলিকপ্টারের দাম নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি। তবে আকাশযান বিষয়ক বিভিন্ন ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, একেকটি হেলিকপ্টারের মূল্য ২ কোটি ডলার বা ১৭০ কোটি টাকার বেশি।
বাংলাদেশ পুলিশের মুখপাত্র এআইজি মোহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, হেলিকপ্টারের সংযোজন বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীকে একটি ত্রিমাত্রিক বাহিনীতে পরিণত করবে। তিনি বলেন, এর ফলে:
হেলিকপ্টার সংযোজনে পুলিশের সক্ষমতা অনেক বাড়বে, যা আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সহায়তা করবে। প্রত্যন্ত এলাকায় বা দাঙ্গা প্রবণ কোন এলাকায় প্রয়োজনে দ্রুত পুলিশ ফোর্স পাঠানো যাবে।
এছাড়া প্রত্যন্ত এলাকায় পুলিশের কোন সদস্য বা সাধারণ নাগরিকদের জরুরি চিকিৎসা সেবা দেয়া যাবে। তাদের দ্রুত উন্নত চিকিৎসার জন্য স্থানান্তর করা যাবে। ইন্টেলিজেন্স নজরদারি করার জন্য এসব হেলিকপ্টার সহায়তা করবে। যেকোনো বড় সমাবেশ বা ঘটনায় নিরাপত্তা জোরদারে এসব হেলিকপ্টার দিয়ে টহল দেয়া যাবে।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ আব্দুর রশিদ বলেন, আমরা দেখেছি, পুলিশ বাহিনীকে যদি আধুনিকায়ন করতে হয়, তাহলে বিভিন্ন দেশের পুলিশ হেলিকপ্টার ব্যবহার করে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ পুলিশ এতদিন পিছিয়ে ছিল। এখন তারা সেই সক্ষমতা অর্জন করতে যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, স্বাভাবিকভাবে হেলিকপ্টার নিরাপত্তা বিধানের ক্ষেত্রে কিছু ভূমিকা রাখে। জরুরি ভিত্তিতে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাওয়া, অপারেশন পরিচালনা করা, আকাশ থেকে পর্যবেক্ষণ করার ক্ষেত্রে সহায়তা করে। বিভিন্ন উন্নত দেশের পুলিশকে আমরা সেভাবে ব্যবহার করতে দেখেছি। আমি মনে করি, এটা পুলিশে একটা নতুন মাত্রা যোগ করবে। তবে এর সুফল পুরোপুরি পেতে হলে দক্ষতার সঙ্গে এই প্রযুক্তির ব্যবহার করতে হবে বলেও মনে করেন তিনি
সান নিউজ/এমকেএইচ