নিজস্ব প্রতিবেদক: অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর বিরুদ্ধে মামলা গ্রহণের আবেদনের প্রতিবাদ জানিয়েছেন বামপন্থী কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতারা।
বৃহস্পতিবার (২১ অক্টোবর) গণমাধ্যমে পাঠানো পৃথক পৃথক বিবৃতিতে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এমপি ও সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, সিপিবি সভাপতি মুজহাদিুল ইসলাম সেলিম, সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম, বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামানসহ প্রমুখ নেতা মামলার আবেদনের নিন্দা জানান।
বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি সভাপতি রাশেদ খান মেনন ও সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, বরেণ্য ব্যক্তিবর্গ ও লেখকদের নামে মামলা মুক্তবুদ্ধি, চিন্তা ও বাক স্বাধীনতার ওপর ন্যক্কারজনক ঘটনার শামিল। দেশে যে মুহূর্তে উগ্র সাম্প্রদায়িক শক্তির তাণ্ডব চলছে, প্রশাসন দাঙা ও হামলাকারীদের চিহ্নিত করতে ব্যর্থ, সেই মুহূর্তে এ ধরনের ঘটনা সুদূর প্রসারি চক্রন্তের শামিল। এ ধরনের ঘটনা প্রতিক্রিয়াশীল ধর্মান্ধ অপশক্তিকেই উৎসাহিত করবে। ৬ বছরের পুরনো কোনও লেখাকে কেন্দ্র করে এই মামলা দুরভিসন্ধির শামিল।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, কোনও লেখকের বুদ্ধিবৃত্তিক নিবন্ধ নিয়ে কারও ভিন্নমত থাকতে পারে, সে সম্পর্কে তিনি তার মতামত প্রকাশ করে লিখতেও পারেন। সে পথে না গিয়ে লেখকের বিরুদ্ধে নিবর্তন আইনে হয়রানিমূলক মামলা করা কোনোভাবেই বরদাশত করা যায় না।
রাজেকুজ্জামান রতনেরসই বিবৃতিতে বামজোটের নেতারা বলেছেন, বরেণ্য ব্যক্তিবর্গ ও লেখকদের নামে মামলা দিয়ে সরকার মুক্তিবুদ্ধি, চিন্তা ও বাকস্বাধীনতার ওপর নগ্ন হস্তক্ষেপের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার (১৯ অক্টোবর) একটি প্রবন্ধে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীসহ তিন জনের বিরুদ্ধে নালিশি অভিযোগ করা হয়।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট হোসেন মোহাম্মদ রেজার আদালতে নগরীর আগ্রাবাদ মোল্লাপাড়ার বাসিন্দা নাজিম উদ্দীন সুজন এই অভিযোগ করেন।
অপর দুই অভিযুক্ত হলেন— বাংলা একাডেমির পুরস্কারপ্রাপ্ত সাহিত্যিক রাশেদ রউফ ও প্রকাশনাটির সম্পাদক লেখক নেছার আহমেদ। অভিযোগপত্রে নেছার আহমেদকে এক নম্বর, রাশেদ রউফকে দুই নম্বর এবং সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীকে তিন নম্বর তালিকায় রাখা হয়েছে।
বাদীর আইনজীবী শাহিদা নুর জানান, আমরা আদালতে অভিযোগ করেছি। কিন্তু আদালতে এ বিষয়ে কোনও শুনানি হয়নি। আগামী ২৪ অক্টোবর এ বিষয়ে শুনানি হবে। মামলা গ্রহণ করা হবে কি হবে না, তা ওই দিন জানা যাবে।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম একাডেমি থেকে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে জাতির পিতা নামে একটি পুস্তক প্রকাশিত হয়। ওই প্রকাশনায় শেখ মুজিবের গোপন শত্রু শিরোনামে একটি প্রবন্ধে বঙ্গবন্ধুর প্রতি অবমাননা করা হয়। অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর ওই প্রবন্ধে বলা হয়েছে, একাত্তরের আগের শেখ মুজিব আর পরের শেখ মুজিব এক নন, বড়ই সত্য কথা। আরেক লাইনে লেখা হয়, নৈতিক পতনই তার দৈহিক পতন ডেকে আনে।
এ ছাড়া প্রবন্ধের একাধিক লাইনে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তির করে তাকে ছোট করে দেখানোর মাধ্যমে পুরো জাতিকে হেয় করার অপচেষ্টা চালানো হয়েছে। তাই বাদী রাজনৈতিক সচেতন ব্যক্তি হিসেবে আদালতের আশ্রয় নিয়েছেন বলে অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে।
সাননিউজ/ জেআই