সাননিউজ ডেস্ক: জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ছোট ভাই শেখ রাসেলের স্মৃতিচারণ করে বলেছেন, ও (শেখ রাসেল) ছিল আমাদের চোখের মণি। ১৭ তারিখ দিনগত রাত দেড়টা কি দুইটা, এরকম সময় তার জন্ম হলো। আমাদের বাসায় তখন বড় ফুফু ও মেজো ফুফু। খবরটা যখন পেলাম, আমাদের তখন খুশি আর ধরে না।
তিনি আরও বলেন, যেই প্রথম আমি কোলে নিলাম ওর মাথা ভর্তি ঘন কালো চুল, আমার গায়ে ওড়না ছিল সেই ওড়না দিয়ে মাথা মুছে চিরুনি নিয়ে মাথা আচড়াতে গেলে ফুফু আমাকে ধমক দিলো যে, এটুকু বাচ্চার মাথায় চিরুনি দেয় না। এত ঘন কালো চুল। এর চিরুনি দিতে হয় না, চামড়া উঠে যাবে। তখন থেকেই ও (শেখ রাসেল) ছিলো একেবারে আমাদের চোখের মণি। সবার, প্রত্যেক ভাই-বোনের জন্য, আনন্দটা ভাষায় বর্ণনা করা যায় না।
বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠপুত্র শেখ রাসেলের ৫৮তম জন্মদিনে সোমবার (১৮ অক্টোবর) রাতে বিটিভিতে প্রচারিত স্মৃতিচারণমূলক বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা এত খুশি ছিলাম... সর্বক্ষণ ওকে নিয়ে খেলতে… ও আস্তে আস্তে বড় হচ্ছে, প্রতি সপ্তাহে ওর একটা করে ছবি তুলতাম। দুটো অ্যালবামও করে রেখেছিলাম। ওর যে পরিবর্তনটা, বিশেষ করে তিন মাস পর পর একটা ছবি। আর সর্বক্ষণ ও আমাদের সবচেয়ে বেশি আদরের ছিল।
বঙ্গবন্ধুর বড় মেয়ে বলেন, আমরা ভাই-বোন সবসময় ওকে নিয়েই ব্যস্ত ছিলাম। ওর হাঁটা-বসা। ও একেকটা ধাপে একেকটা জিনিস শিখেছে, সবকিছু আমাদের সঙ্গেই। ওর সঙ্গে একটু খুনসুটি করা, ওকে একটু আদর করা... সবকিছুর সঙ্গেই আমরা সারাক্ষণ। স্কুল থেকে এসেই হাতটা ধুয়েই আগে আমাদের কাজ ছিল রাসেলকে কোলে নেওয়া। যাওয়ার আগে রাসেলকে কোলে নেওয়া। মনে হতো, আমাদের হাতে একটা খেলার পুতুলের মতো। আমরা প্রত্যেকটা ভাই-বোনই সবসময় ওর জন্য খুবই ব্যস্ত থাকতাম।
শেখ রাসেলের প্রতি বঙ্গবন্ধুর ভালোবাসার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৬৪ সালের অক্টোবরে ওর জন্ম। ৬৬ সালের মে মাসে আমার আব্বা যখন ৬ দফা দিলেন। তখন তিনি খুব ব্যস্ত। যখন ফাতেমা জিন্নাহ ইলেকশনের ক্যাম্পেনিং শুরু করেন, ওই সময় তিনি কিন্তু আরেকবার গ্রেপ্তার হয়ে যান। কিছুদিন তাকে বন্দি করা হয়, তারপর মুক্তি পান। ৬ দফা দেওয়ায় আসলে এত ব্যস্ত ছিলেন তিনি। কিন্তু রাসেলকে প্রতি রাতে শোবার সময় নিজের হাতে রাসেলের দুধের বোতল ধরে রাখা, তাকে খাওয়ানো। আব্বা খুব চেষ্টা করতেন, আগ্রহী ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ও (রাসেল) আসলে আব্বাকে খুব বেশি পায়নি। ’৬৬ সালে ৬ দফার পর আব্বা যখন অ্যারেস্ট হয়ে গেলেন, ও তো কেবল ছোট, হাঁটা শিখেছে, কথা বলতে শিখেছে, দেখাতে হতো কারাগারে। ও এটা কিছুতেই মানতে চাইতো না। কান্নাকাটি করতো আর তখন তো ভালোভাবে কথাও বলতে পারতো না। যেদিন আমরা জেলখানা থেকে দেখা করে আসতাম সেদিন আমরা দেখতাম ও ঘুমাচ্ছে না, বিছানায় বসে বসে কাঁদতো। কেন যে কাঁদছে সেটাও বোঝা যেত না।
সাননিউজ/এমআর