নিজস্ব প্রতিবেদক: চার বছরে ৪৭ বার ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। এতে করে দেশে বড় ধরনের ভূমিকম্পের আশঙ্কা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভৌগোলিক অবস্থান, ভূতাত্ত্বিক বা ভূস্তরের পরিস্থিতি ও আলামত জানান দিচ্ছে অশনি সংকেত।
বাংলাদেশ ও আশপাশ অঞ্চলে প্রবল মাত্রায় ভূমিকম্পের সম্ভাব্য আঘাতে ভয়াল দুর্যোগ এমনকি মানবিক বিপর্যয়ও সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা।
শুধু তাই নয়, ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট ৪৭ কেঁপে উঠেছে বাংলাদেশ। যা বড় ধরনের ভূমিকম্প হওয়ারই পূর্বাভাস।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট ৪৭ বার দেশে ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। এর মধ্যে ২০১৮ সালে ৪ বার, ২০১৯ সালে ৭ বার, ২০২০ সালে ১৫ বার এবং চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে ২১ বার ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। সর্বশেষ ৭ অক্টোবর রাত ১২টা ২৮ মিনিটে ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে দেশ। রিখটার স্কেলে ৫ দশমিক ৬ মাত্রার এই ভূমিকম্পের উৎসস্থল ছিলো মিয়ানমারের মানওয়া। ভূমিকম্পটির কেন্দ্র ছিল ভূপৃষ্ঠ থেকে ১১৪ কিলোমিটার গভীরে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মেহেদী আহমেদ আনসারি সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, সম্প্রতি কয়েক বছরে দেশে ভূমিকম্পের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। তবে ১০০ বছরের মধ্যে আমাদের এখানে বড় ভূমিকম্প হয়নি তেমন। এটা একটা জিনিস নির্দেশ করে যে এগুলো শক্তি সঞ্চয় করছে। ফলে সামনে বড় ভূমিকম্পের শঙ্কা রয়েছে।
এছাড়াও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ছোট ছোট এসব ভূমিকম্প হওয়ার অর্থ হলো এই ফল্ট লাইনগুলো সক্রিয়। সক্রিয়তাই প্রমাণ করে যেকোনো সময় বড় ধরনের ভূমিকম্প হওয়ার আশঙ্কা আছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, দেশে অনুভূত এই ৪৭টি ভূমিকম্পের মধ্যে ২০টির উৎসস্থল ছিল দেশের অভ্যন্তরে। এর মধ্যে ১১টিই সিলেটে এবং বাকিগুলোর উৎসস্থল ছিল নাটোর, গাজীপুর, টাঙ্গাইল, পঞ্চগড়, নেত্রকোনা, খাগড়াছড়ি ও টেকনাফে।
এছাড়া আরেকটির উৎসস্থল ছিলো বঙ্গোপসাগর। সীমান্তবর্তী এলাকায় হয়েছে সাতটি ভূমিকম্প। এর মধ্যে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে একটি এবং ভারত-মিয়ানমার সীমান্তে ছয়টি।
এছাড়া ভারতের আসাম, পশ্চিমবঙ্গ ও মেঘালয়ে ১৮টি, মিয়ানমারে ১টি এবং ভুটানে ১টি ভূমিকম্প হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা আরও জানিয়েছেন, বাংলাদেশের অবস্থান ইন্দো–অস্ট্রেলিয়ান প্লেটে। আর উত্তর-পশ্চিমে রয়েছে ইউরোশিয়ান প্লেট। সর্বশেষ যে ভূমিকম্প হয়েছে, সেটা বার্মা মাইক্রো প্লেটে। সেখানে ‘সেগিং ফল্ট’ নামে একটা বড় ফল্ট লাইন আছে। ঠিক ওই ফল্টেই ভূমিকম্প হয়েছে। এই তিন প্লেটের বাউন্ডারি লাইনের কাছে বাংলাদেশ। সে জন্য বাংলাদেশে ভূমিকম্পমণ্ডলের আশপাশে পড়েছে। দুটি প্লেটের মাঝে থাকা ফাটলকে ফল্ট লাইন বলা হয়।
সান নিউজ/এফএআর