নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকাকে পুঁজি করে বিভিন্ন সংস্থার সমন্বয়হীন ও অপরিকল্পিত উন্নয়ন কার্যক্রম ঢাকাবাসীর দুর্ভোগ দিনে দিনে বৃদ্ধি করছে বলে মন্তব্য করেছেন মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।
বুধবার (১৩ অক্টোবর) সকালে সাপ্তাহিক নিয়মিত পরিদর্শন কার্যক্রমের অংশ হিসেবে নগরীর কমলাপুর রেলস্টেশন হতে টিটি পাড়া পর্যন্ত জলাবদ্ধতা নিরসনে চলমান উন্নয়ন কার্যক্রম পরিদর্শন শেষে গণমাধ্যমের সাথে মতবিনিময়কালে ঢাদসিক মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস এ কথা বলেন।
মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনের লক্ষ্যে আমাদের ব্যাপক কর্মযজ্ঞ চলমান রয়েছে। জলাবদ্ধতা নিরসনে নিজস্ব অর্থায়নে এরই মধ্যে প্রায় ১০৩ কোটি টাকার কার্যক্রম আরম্ভ করেছি। এই অর্থবছরেও এই খাতের জন্য প্রায় ৭৪ কোটি টাকা বাজেট সংস্থান রেখেছি। কমলাপুর রেল স্টেশনের আশপাশের জায়গা ব্যাপকভাবে জলাবদ্ধতায় নিমগ্ন থাকে।
মতবিনিময়কালে শ্যামপুর-কদমতলী এলাকায় পদ্মা সেতুর রেল সংযোগের কারণে বিগত বেশকিছু ধরেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে, এলাকার লোকজনের ভোগান্তি হচ্ছে। শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর গ্যাসের লাইন বন্ধ রয়েছে, ফলে শিল্প কারখানাও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। এ বিষয়ে মেয়র হিসেবে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হবে কিনা – সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ঢাদসিক মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস বলেন, এটা খুবই অনাকাঙ্খিত এবং দুঃখজনক।
তিনি আরও বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে যে কার্যক্রম পরিদর্শনে এসেছি এখানেও নতুন করে এমআরটি লাইন স্থাপনের জন্য তারা আবেদন করেছে। এখানে দেখা যাচ্ছে যে, আমাদের পরিকল্পনার সাথে তাদের পরিকল্পনা সাংঘর্ষিক হচ্ছে। তেমনি শ্যামপুর শিল্পাঞ্চলের জন্য আমরা বৃহৎ কার্যক্রম হাতে নিয়েছি। কিন্তু অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক -- পদ্ম রেলসেতুর যে কার্যক্রম, সেই কার্যক্রমের আওতায় যেখান থেকে পানি নিষ্কাশন হতো সেই পানি নিষ্কাশনের মুখগুলো বন্ধ করে দিয়েছে। যার কারণে এখন পুরো শ্যামপুর শিল্পাঞ্চল এই সময়েও জলাবদ্ধতায় নিমগ্ন। তাহলে বর্ষা মৌসুমে কি হতে পারে -- সেটা চিন্তা করলেই আতঙ্ক পেয়ে বসে।
ব্যারিস্টার শেখ তাপস বলেন, আমরা তাদেরকে বারবার বলেছি, তাদের অনুরোধ করেছি - আমাদের কার্যক্রম শেষ না হওয়া পর্যন্ত তারা যেন অন্ততপক্ষে সেখানে কালভার্ট করে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করে। কিন্তু তারা কোনো নজর দিচ্ছে না। এভাবে বিভিন্ন সংস্থা ঢাকাকে পুঁজি করে অপরিকল্পিতভাবে আমাদের সাথে কোন সমন্বয় ছাড়া কাজ করছে। এতে ঢাকাবাসীর দুর্ভোগ দিনে দিনে শুধু বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমি আবারও সকলকে অনুরোধ করব --তাদের পরিকল্পনা প্রণয়নের আগেই যেন আমাদের সাথে সমন্বয় করেন। আমাদের মহাপরিকল্পনায় আওতায় আমাদের কার্যক্রমের সাথে সমন্বয় করেই যেন তারা প্রকল্প নেয়। না হলে এই সংঘর্ষ হবে এবং ঢাকাবাসী এতে ভূক্তভোগী হচ্ছে।
আরেক প্রশ্নের জবাবে শেখ তাপস বলেন, মেট্টোরেল মতিঝিল শাপলা চত্বর পর্যন্ত যেটা এসেছে, সেটা এখন বর্ধিত করে কমলাপুর স্টেশন পর্যন্ত আসবে। এটা নতুন পরিকল্পনা নিয়েছে। কিন্তু সেটা যে আনবে, তারা যে পিয়ার দিবে বা কলাম দিবে -সেগুলো আমাদের যে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা, সেটার সাথে কোনোভাবেই যাতে সাংঘর্ষিক না হয়, সেটা আমরা বলেছি। কারণ ঢাকাবাসীকে জলাবদ্ধতায় রেখে আমরা উপর দিয়ে শুধু কাজ করলে তো আর হবে না। এটা নিয়ে সকলের সাথে সমন্বয় করে সামষ্টিক।
এ সময় জলবদ্ধতা নিরসনে চলমান কার্যক্রমের সুফল ইতোমধ্যে ঢাকাবাসী পাওয়া আরম্ভ করেছে জানিয়ে ঢাদসিক মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস বলেন, আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পর ব্যাপক কর্মযজ্ঞ চালিয়েছি। প্রথম পর্যায়ে আমরা যেসকল জায়গা বদ্ধ ছিল, সেগুলো পরিষ্কার করেছি। এর সুফল ঢাকাবাসী গত বর্ষা মৌসুমে কিছু পেয়েছে। যদিও এবার বর্ষা মৌসুম প্রলম্বিত হয়েছে; প্রায় তিন মাস অবধি। কিন্তু তারপরও আমরা লক্ষ্য করেছি - প্রথম পর্যায় ছাড়া বাকি সময়টা কোনোরকমই কোনো জলাবদ্ধতা ছিল না। দ্রুত পানি নিষ্কাশন হয়েছে। যার কারণে ঢাকাবাসীকে সুফল দিতে পেরেছি। এই কার্যক্রম ছিল স্বল্প মেয়াদী। আমরা এখন মধ্যমেয়াদী কার্যক্রম আরম্ভ করেছি।
সাননিউজ/ জেআই