নিজস্ব প্রতিবেদক: পৌরসভাগুলোতে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ করার মাধ্যমে মেয়রদের সম্মানহানি নয় বরং তাদের মর্যাদা আরও বৃদ্ধি পাবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম।
মঙ্গলবার (১২ অক্টোবর) পটুয়াখালী সফরকালে জেলা পরিষদ বাস্তবায়িত 'শেখ রাসেল শিশু পার্ক' উদ্বোধনের পর সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি একথা বলেন।
মন্ত্রী জানান, অনেকে অভিযোগ করেন যে পৌরসভায় সিইও নিয়োগ দেয়ায় মেয়রদের সম্মানহানি করা হয়েছে। কিন্তু সিইও নিয়োগের মাধ্যমে সম্মানহানি নয় মেয়রদের মর্যাদা বৃদ্ধির পাশাপাশি পৌরসভার উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে। মেয়রদের সকল ক্ষেত্রে সহযোগিতা প্রদান এবং মন্ত্রণালয়ের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রেখে উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করতেই সিইও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কাউকে ছোট করার জন্য এটা করা হয়নি।
এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, যে সকল পৌরসভায় ইতোমধ্যে প্রধান নিবার্হী কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়েছে সেগুলোর তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে আগের তুলনায় পৌরসভার আয় অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে।
সম্প্রতি পৌর আইন সংশোধন সম্পর্কে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মো. তাজুল ইসলাম জানান, এই আইন সংশোধনের উদ্দেশ্য হলো অনেক জায়গায় নানা জটিলতার কারণে ১৫-২৫ বছর পর্যন্ত নির্বাচন হচ্ছে না। এই সমস্যা সমাধানে আইনে পরিবর্তন আনা হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদেও এরকম কিছু জটিলতা রয়েছে এজন্য আইনে পরিবর্তন আনা দরকার। এ নিয়েও মন্ত্রণালয় কাজ করছে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনসহ সকল নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটে। তাই এসব নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত করার জন্য সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ।
মো. তাজুল ইসলাম বলেন, পটুয়াখালী জেলায় প্রায় দুই হাজার কোটিরও বেশি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প চলমান রয়েছে। এগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করার জন্য সংশ্লিষ্টদের ইতোমধ্যে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।
এর আগে, জেলা প্রশাসনের আয়োজনে শিল্পকলা একাডেমিতে এক সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, একটি প্রতিষ্ঠান তখনই মর্যাদাপূর্ণ হয় যখন প্রতিষ্ঠাটি স্বচ্ছ এবং জবাবদিহিমূলক হয়। জবাবদিহিতা মুক্ত কোন প্রতিষ্ঠান কখনো কোনোভাবেই মর্যাদাশীল এবং লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে না। স্থানীয় সরকার বিভাগের অধীনে থাকা ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা এবং জেলা পরিষদসহ সকল প্রতিষ্ঠানকে জবাবদিহিতা ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মধ্যে আনা হবে।
মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রতিষ্ঠানসমূহে আয়-ব্যয়ে স্বচ্ছতা আনার লক্ষ্যে এক্সটার্নাল অডিট ফার্ম নিয়োগের মাধ্যমে অডিট করা হবে উল্লেখ মন্ত্রী বলেন, এসব প্রতিষ্ঠানকে শুধু জবাবদিহি ও স্বচ্ছ করলে হবে না দুর্বলতা ও সম্ভাবনাগুলো খুঁজে বের করতে হবে।
স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদের সভাপতিত্বে সুধী সমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য, মো. শাহজাহান মিয়া, আ স ম ফিরোজ, কাজী কানিজ সুলতানা, এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী মো. আবদুর রশিদ খান।
এ সময় জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ এবং বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
সফরকালে এলজিইডি কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন লোহালিয়া সেতুর নির্মাণ কাজ পরিদর্শন এবং পটুয়াখালী পৌরসভায় বীর মুক্তিযোদ্ধা খান মোশারেফ হোসেন সেতুরও উদ্বোধন করেন মন্ত্রী।
এসময় তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষমতায় থাকায় এদেশের গ্রাম-গঞ্জ, শহর নগর সব জায়গায় অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধিত হয়েছে।
অর্থনৈতিক উন্নতির অন্যতম পূর্বশর্ত যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন লোহালিয়া সেতুসহ যেসব অবকাঠামো নির্মিত হচ্ছে এগুলো বাস্তবায়িত হলে এই অঞ্চলে ব্যাপক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে পরিবর্তন আসবে।
পরে, পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় এলজিইডির উদ্যোগে বাস্তবায়নাধীন আন্দারমানিক সেতুর নির্মাণ কাজ পরিদর্শন করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কলাপাড়া উপজেলা, পৌর শাখা ও সকল সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সাথে মতবিনিময় সভা করেন।
সান নিউজ/এনএএম