নিজস্ব প্রতিবেদক: ঘুষ ছাড়া ভূমি রেজিস্ট্রি অফিসে কাজ হয় না অভিযোগ করে আলোচনায় এসেছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য। তবে এখন মোড় ঘুরে গেছে ভিন্নদিকে। অভিযোগ উঠেছে সরকারি প্রতিষ্ঠান মিল্ক ভিটার জন্য কেনা হলেও সেই জমি জালিয়াতি করে তার ছেলে সুপ্রিয় ভট্টাচার্যের নামে রেজিস্ট্রি করা হয়েছে। জমির দলিলপত্রে উঠে এসেছে এসব তথ্য।
তবে প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য বলছেন অন্য কথা। গণমাধ্যমকে জানান, জটিলতা ও সময়ক্ষেপণ এড়াতে তার ছেলের নামে জমি রেজিস্ট্রি করা হয়েছে।
তিনি বলেন, মিল্ক ভিটার নামে কেনার ক্ষেত্রে কিছু জটিলতা দেখা দিতে পারে, তা ছাড়া বিষয়টি সময়সাপেক্ষ। তাই জমিটা আটকাতে এ পথ বেছে নেয়া হয়।
মণিরামপুর ভূমি ও রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের সাব-রেজিস্ট্রার শাহজাহান আলী ও মোহরার শামসুজ্জামান মিলন জানান, রোহিতা ইউনিয়নের বাসুদেবপুর গ্রামের ৮৪৫ নম্বর খতিয়ানের ৭৬, ৭৭, ৭৯ ও ৮৯ দাগের ২০০ শতক জমি কিনেছেন প্রতিমন্ত্রীর ছেলে সুপ্রিয় ভট্টাচার্য। ১৪ সেপ্টেম্বর তার নামে এ জমি রেজিস্ট্রি করা হয়। যার দলিল নম্বর ৭৬৭১। আর এ জমির নামপত্তনের জন্য উপজেলা ভূমি কার্যালয়ে দাখিল করা কেস নম্বর ১২০১ (২০২১-২২)।
জমির মূল্য ক্রেতা-বিক্রেতার ভিন্ন কথা
প্রতিমন্ত্রীর ছেলের কেনা জমির দাম নিয়ে দুই রকম তথ্য পাওয়া গেছে।
মোহরার শাহজাহান আলী বলেন, সুপ্রিয় ভট্টাচার্য্য শুভ দুই একর জমি কিনেছেন মণিরামপুর উপজেলার রোহিতা ইউনিয়নের মিজানুর রহমানের কাছ থেকে। জমি ওই ইউনিয়নের বাসুদেবপুর মৌজার ৭৩/৭৭/৭৮/৭৯ দাগ থেকে বিক্রি করা হয়েছে। জমির মূল্য দলিলে উল্লেখ করা হয়েছে ১৯ লাখ টাকা।
জমি বিক্রেতা রোহিতা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান অবশ্য জানিয়েছেন ভিন্ন তথ্য। তিনি বলেন, দুই একর জমি বিক্রি বাবদ আমি ৮০ লাখ টাকা পেয়েছি।
জমির রেজিস্ট্রিতে ঘুষ চাওয়ার বিষয়ে সাব-রেজিস্ট্রার শাহজাহান আলীর দাবি, প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্যকে ভুল বুঝিয়ে তাদের বিরুদ্ধে তথ্য দেওয়া হয়েছে।
বদলি করা মোহরার শামসুজ্জামান মিলন নিউজবাংলাকে বলেন, ১৪ সেপ্টেম্বর দুপুর ১২টার দিকে প্রতিমন্ত্রীর ছেলে সুপ্রিয় ভট্টাচার্য্য শুভর নামে একটি জমি রেজিস্ট্রি করতে আসেন দলিল লেখক কামরুজ্জামানের সহকারী গৌতম ঘোষ বাপি।
এ সময় দেখতে পাই, দলিলের সঙ্গে প্রয়োজনীয় ব্যাংকের পে-অর্ডার নেই। সেটি চাইলে বাপি উত্তেজিত হয়ে চলে যান।
তিনি আরও জানান, ওই দিন বিকেল ৫টার দিকে পে-অর্ডারসহ দলিল নিয়ে আবার আসেন বাপি। তখন দলিলটি রেজিস্ট্রি করা হয়। সাথে সাথে দলিলের নকল চান বাপি। মন্ত্রী মহোদয়ের সম্মানে দুই ঘণ্টার মধ্যে তার হাতে তা দেয়া হয়।
বাপি বেশ কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে গিয়ে ওই সময় তাকে অসম্মান করেন বলে অভিযোগ করেন এ মোহরার।
প্রসঙ্গত, গত বুধবার মণিরামপুরে এক অনুষ্ঠানে মন্ত্রী রেজিস্ট্রি অফিসের কর্মীদের বিরুদ্ধে ঘুষ নেয়ার অভিযোগ আনেন।
আন্তর্জাতিক তথ্য অধিকার দিবস উপলক্ষে বুধবার মণিরামপুরে এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য বলেন, সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে টাকা ছাড়া কোনো কাজ হয় না। সরকারি প্রতিষ্ঠান মিল্ক ভিটার কারখানা করার জন্য আমি গত সপ্তাহে আমার ছেলের নামে একটি জমি রেজিস্ট্রি করতে পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু দুর্নীতির রেট অনুযায়ী টাকা দিতে না পারায় সেই জমি রেজিস্ট্রি হয়নি।
তার এ বক্তব্যের পর বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়।
সান নিউজ/এফএআর