নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের হাজার হাজার পরিবার প্রতিনিয়ত নদী ভাঙনের শিকার হয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ছে। নদী ভাঙন কবলিত এলাকায় ৩০ বছর পর চর জাগলে তা সরকারি খাস জমিতে পরিণত হয়। এতে জমির মালিকেরা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এই অবস্থার পরিবর্তন চাইছে নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত ভূমি মালিকেরা।
শুক্রবার (১ অক্টোবর) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করে বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেন ‘নদী ভাঙলে জমি খাস আইন বাতিল সংগ্রাম কমিটি'। সংগঠনটি নদীর সিকস্তি অঞ্চলে ডিএস, সিএস, এসএ ও আরএস রেকর্ড, চিটার ভলিউম দেখে প্রজাস্বত্ব বহাল ও খাজনা-খারিজ চালুসহ ৭ দফা দাবি বাস্তবায়নের কথা বলেন।
মানববন্ধনের আয়োজকেরা জানান, দেশের নদী সিকস্তি অঞ্চলে বসবাসকারী তিন কোটি মানুষ জান-মালের ঝুঁকি নিয়ে সকল প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে অনাবাদযাগ্য উঁচু-নিচু জমি আবাদযাগ্য করে দেশের কৃষি উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন, মহান মুক্তিযুদ্ধ ও সকল গণতান্ত্রিক প্রগতিশীল আন্দোলনে বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে, কৃষকের ভূমির অধিকার প্রতিষ্ঠায় যুগযুগ ধরে লড়াই করেছে। তাই স্বাধীনতার পর এ অঞ্চলের মানুষের প্রত্যাশা ছিল তাদের ভাগ্যের বদল হবে কিন্তু স্বাধীন দেশে সমস্যার সমাধান হয়নি বরং ঔপনিবেশিক শাসন আমলের আদলে নতুন আইন ও আইনের সংশোধন করে বাপ-দাদার পৈতৃক জমির অধিকার হরণ করা হয়েছে। আইনের মারপ্যাঁচে আজ চরের মানুষ তার পৈতৃক জমির প্রজাস্বত্ব হারিয়েছে। ভূমি অফিস জেগে ওঠা চরে আগের মালিক বা তার উত্তরাধীকারকে জমি খারিজ দেয় না। বিগত সময়ে বিভিন্ন জরিপে নিজ নামে জমি-জমা রেকর্ড করা সত্ত্বেও ভূমি অফিস খাজনাদি না নেওয়ায় এসব অঞ্চলের মানুষ জমিজমা ক্রয়-বিক্রয় করতে পারছে না।
সংগ্রাম কমিটির সমন্বয়ক জাহিদ হাসেন খান বলেন, 'আমরা বেদনার সঙ্গে আরও লক্ষ্য করি নদী ভাঙনে সর্বস্ব হারানো মানুষের ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের কোন ব্যবস্থা নেই। বর্তমানে বিশেষজ্ঞ সমীক্ষা ছাড়াই সারা দেশে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে নদী খনন করার নামে চলছে বালু ব্যবসার মহাৎসব। বালু মাফিয়াচক্র ড্রেজিং-এর নামে কৃষকদের ফসলি জমি কেটে নিচ্ছে। নদীর পাড় সংরক্ষণও ঢালু সঠিক মাপমতো না করায় নদী খননের পরে জমিজমা ভেঙে আবার নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে। নদী ভাঙন রোধে ও জলাবদ্ধতা নিরসনে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। এসব ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নেই। তাই নদী সিকস্তি অঞ্চলের মানুষের অস্তিত্ব রক্ষার সার্থেই লড়াই সংগ্রামে নামতে হয়েছে।'
মানববন্ধনে প্রবীণ কৃষক নেতা আব্দুল কাদের চাকলাদারের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন খেতমজুর সমিতির সভাপতি ডা. ফজলুর রহমান, তেল-গ্যাস বিদ্যুৎ-বন্দর ও সুন্দরবন রক্ষায় জাতীয় কমিটির নেতা রুহিন হাসেন প্রিন্স, হকার্স ইউনিয়নের সভাপতি মুর্শিকুল ইসলাম শিমুল, সংগ্রাম কমিটির কেন্দ্রীয় নেতা আলতাফ হাসেন মাস্টার, গোলাম ফারুক বিএসসি, মুক্তিযাদ্ধা আশরাফ তালুকদার, হাবিবুর রহমান, আব্দুল মান্নান ভূইয়া, আলী আক্কাস প্রমুখ।
সাননিউজ/ জেআই