সান নিউজ ডেস্ক:
কথায় আছে, ‘চোরে না শুনে ধর্মের কাহিনী’। কিন্তু এবার যেন বিষয়টার ব্যতিক্রমই ঘটল। চোর তার আবার ধর্মের ভয়। আর তাই তো চুরির আগে মানত করা টাকা চুরি সফল হওয়ার পর মসজিদে দান করেছে ঢাকার একটি চোর চক্র।
ন্যাশনাল ব্যাংকের ৮০ লাখ টাকা চুরিতে সফল হওয়ায় মসজিদে মানত করা এক লাখ দান করেছে এই চোর চক্রটি। চক্রটি সংঘবদ্ধ হয়ে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় চুরি করে থাকে। মঙ্গলবার (২ জুন) বিকালে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) দক্ষিণ বিভাগের কোতোয়ালি জোনাল টিমের অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. সাইফুর রহমান এ তথ্য জানান।
ডিবি পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত ১০ মে রাজধানীর কোতোয়ালি থানা এলাকা থেকে ন্যাশনাল ব্যাংকের একটি গাড়ি থেকে ৮০ লাখ টাকা চুরি করে একটি চক্র। চক্রটির পাঁচ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ৬০ লাখ টাকা এবং দুটি আগ্নেয়াস্ত্র। গত ১ জুন কিশোরগঞ্জ ও শরীয়তপুর জেলাসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে চক্রটির মূলহোতা ব্রিফকেস হান্নান, তার চতুর্থ স্ত্রী পারভীন, শ্যালক আলমগীর, সহযোগী মোস্তফা এবং মো. বাবুল মিয়াকে গ্রেফতার করা হয়।
ডিবি পুলিশ আরও জানায়, ব্রিফকেস হান্নান মানত করেছিল মোটা অঙ্কের টাকা চুরি করতে পারলে কিশোরগঞ্জের পাগলার মসজিদে একলাখ টাকা দান করবে। গত ১৫ রমজানে চুরিতে সফল হয় তারা। ন্যাশনাল ব্যাংকের ইসলামপুর শাখার সামনে গাড়ির ভেতর থেকে সহযোগীদের সহায়তায় ৮০ লাখ টাকা চুরি করে হান্নান।
এখান থেকে ২০ লাখ টাকা পূর্বের মামলার উকিল ফি, ঋণ পরিশোধ, নেশা করা ও পাগলার মসজিদে মানত দিয়ে খরচ করে ফেলে সে। পরে হান্নানের স্ত্রী পারভীনের স্বীকারোক্তি মোতাবেক তার ধোলাইপাড়ের ভাড়া বাসা থেকে ৬০ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়। ব্যাংকের টাকা নিতে আসা সিকিউরিটি গার্ড ও গাড়ি চালকের অবহেলার কারণে ওই টাকা চুরি হয়।
অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. সাইফুর রহমান আজাদ জানান, গ্রেফতার হান্নান ও তার সহযোগীরা মূলত টানা পার্টির সদস্য। এর আগেও তারা এ ধরনের কাজ করেছে। ১০ মে দুপুরে ন্যাশনাল ব্যাংকের বিভিন্ন শাখা থেকে টাকা নিয়ে যখন ব্যাংকের একজন নির্বাহী কর্মকর্তা ও একজন সিকিউরিটি গার্ড ইসলামপুর শাখায় সাড়ে চার কোটি টাকা আনতে ওপরে ওঠে, তখন একজন সিকিউরিটি গার্ড ও মাইক্রোবাসের চালক গাড়িতে ছিল। এই সুযোগে হান্নানসহ তার সহযোগীরা সেখানে এসে সিকিউরিটি গার্ড ও মাইক্রোবাসের চালকের সঙ্গে ভাব জমিয়ে বিভিন্ন ধরনের কথা-বার্তা বলতে থাকে।
টাকা আনতে দেরি হচ্ছে দেখে তারা গাড়ির চালককে ওপরে পাঠায়। ওপরে উঠলেই সহযোগীরা সিকিউরিটি গার্ডকে বিভিন্ন কথা-বার্তায় অন্যমনস্ক রাখে। আর হান্নান গাড়ির দরজা খুলে টাকার বস্তা নিয়ে কোনোদিকে দৃষ্টিপাত না করে রিকশা নিয়ে আরমানি টোলায় একটি বাসায় চলে যায়। পরবর্তী সময়ে তার সহযোগীদের ২৫ হাজার করে টাকা দিয়ে বাকি টাকা সে নিজের কাছে রেখে দেয় এবং বিভিন্নভাবে তা খরচ করতে থাকে।
এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, 'ব্রিফকেস হান্নানের চার স্ত্রী। তবে এখন সে ছোট স্ত্রী পারভীনের সঙ্গে থাকে। ছোট স্ত্রীও টানা পার্টির একটি গ্রুপ চালাতো। ব্রিফকেস হান্নানের বিরুদ্ধে ৫০টির মতো মামলা রয়েছে বলে সে নিজেই স্বীকার করেছে। এর মধ্যে নথিভুক্ত ৩০টির মতো মামলার তথ্য পাওয়া গেছে।
গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে গেন্ডারিয়া ও যাত্রাবাড়ী থানায় আরও দুটি মামলা করা হয়েছে। তাদের কাছে আরও অস্ত্র রয়েছে কিনা এ বিষয়টিরও তদন্ত চলছে।'
তিনি আরও জানান, 'টাকা চুরি হওয়ার পর ন্যাশনাল ব্যাংক কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা করে। মামলার পর যে গাড়ি থেকে টাকা চুরি হয়েছে সেটির চালক, ব্যাংকটির একজন কর্মকর্তা ও দু'জন নিরাপত্তাকর্মীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তারা বর্তমানে কারাগারে আছে। তবে চুরির সঙ্গে তাদের কোনও সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি।
ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেডের প্রধান কার্যালয়ের একজন কর্মকর্তা, দু'জন সশস্ত্র নিরাপত্তাকর্মী নিয়ে সুরক্ষিত গাড়িতে ব্যাংকটি পুরান ঢাকার বিভিন্ন শাখা থেকে টাকা তোলেন। ব্যাংকের বিভিন্ন শাখা থেকে টাকা সংগ্রহ করে মতিঝিলের প্রধান কার্যালয়ের দিকে রওনা হয়। ওই দিন পুরান ঢাকার বাবুবাজারে পৌঁছানোর পরই গাড়ির নিরাপত্তাকর্মীরা চিৎকার করে বলেন, 'টাকার একটি বস্তা পাওয়া যাচ্ছে না। তাতে ৮০ লাখ টাকা ছিল।