নিজস্ব প্রতিবেদক: অটিজম কমাতে মা ও বাবাকে প্রশিক্ষণ দেয়ার বিষয়ে মন্তব্য প্রকাশ করা হয়েছে। শিশুদের সাথে কীভাবে যোগাযোগ স্থাপন করতে হবে সে বিষয়ে তাদের প্রশিক্ষণ দিলে এটি কমানো সম্ভব বলে গবেষণায় দাবি করা হয়েছে।
যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম টেলিগ্রাফের এক প্রতিবেদনে সেই গবেষণার ফল তুলে ধরে বলা হয়, যোগাযোগ স্থাপনে শিশুর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রাথমিক চেষ্টাগুলো কীভাবে ব্যাখ্যা করতে হবে সে বিষয়ে একটি ভিডিওতে পরামর্শের মাধ্যমেই দুই তৃতীয়াংশ সমস্যার সমাধান করা সম্ভব।
৯ থেকে ১৪ বছরের ৮৯টি শিশুর ওপর ৪ বছর ধরে এ পরীক্ষা চালানো হয়। এদের মধ্যে অর্ধেক শিশুর বাবা-মা ৫ মাস ধরে ভিডিওতে পরামর্শ পেয়েছেন। বাকি অর্ধেক শিশুর ক্ষেত্রে প্রচলিত সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
ফলে দেখা গেছে, ভিডিওর মাধ্যমে অভিভাবকদের দেওয়া সাধারণ পরামর্শের মাধ্যমেই প্রথম গ্রুপের দুই তৃতীয়াংশ শিশুকে অটিজম থেকে রক্ষা করা গেছে।
ইউনিভার্সিটি অব ম্যানচেস্টার এবং ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার বিজ্ঞানীরা এ গবেষণায় ৩ বছরের শিশুদের অটিজম শনাক্ত হওয়ার হার ২০ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ৬ দশমিক ৭ শতাংশে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছেন।
জনাথন গ্রিন বলেন, পরীক্ষার মাধ্যমে শিশুর অটিজম ধরা পড়লে তখন থেরাপি দেওয়া শুরু হয়। কিন্তু তার আগে, প্রাথমিক পর্যায়ে যখন মস্তিস্কের গুরুত্বপূর্ণ বিকাশের প্রক্রিয়াগুলো চলতে থাকে, সেই সময় থেরাপি শুরু করা গেলে ভালো ফল পাওয়া সম্ভব।
গবেষক দলটি জানিয়েছে, তাদের থেরাপি মূলত শিশুদের জন্য নয়, বরং শিশুরা কীভাবে যোগাযোগ করতে চায় সে বিষয়টি যাতে বাবা-মা যাতে বুঝে উঠতে পারেন, সেজন্য তাদের সহযোগিতা করাই তাদের উদ্দেশ্য।
শিশুরা প্রথমে তাদের বাবা-মায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করতে শেখে এবং পরে একই প্রক্রিয়ায় অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে।
তার আগেই যদি তার যোগাযোগ শেখার বিষয়টি বাধাগ্রস্ত হয়, তাহলে সে দক্ষ হয়ে উঠতে পারে না। ফলে তার সামাজিক বিকাশেও সমস্যা হয়।
পরীক্ষায় দেখা গেছে, যেসব বাবা-মা থেরাপি পাননি, তাদের চেয়ে যারা ভিডিওর মাধ্যমে পরামর্শ পেয়েছেন, তাদের শিশুদের সামাজিক আবেগের প্রকাশ অনেক বেশি সাবলিল। এমনকি ওইসব শিশুরা গবেষকদের সঙ্গেও যোগাযোগ করতে পেরেছে, যাদেরকে তারা চেনে না।
অধ্যাপক গ্রিন বলেন, গবেষণায় যে গ্রুপটি গতানুগতিক প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে গেছে, তাদের মধ্যে ২০ শতাংশের বেশি শিশুর বয়স তিন বছর পার হওয়ার পর অটিজম ধরা পড়েছে। আর যে গ্রুপের বাবা-মাকে ভিডিও থেরাপি দেওয়া হয়েছে, তাদের শিশুদের মধ্যে অটিজম ধরা পড়ার হার ৬ দশমিক ৭ শতাংশ।
ব্রিটেনে প্রায় ৭ লাখ মানুষের অটিজম রয়েছে এবং প্রতিবছর ১০ হাজার শিশু এই অবস্থা নিয়ে জন্মগ্রহণ করছে।
চিকিৎসা বিষয়ক সাময়িকী জ্যামা প্যাডিয়াট্রিকসে সোমবার এ গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হওয়ার পর অটিজম নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন দাতব্য সংস্থা স্বাগত জানিয়েছে।
যুক্তরাজ্যের দাতব্য সংস্থা অটিস্টিকার পরিচালক ড. জেমস কুসাক বলেন, এই কাজটি গুরুত্বপূর্ণ বলে আমরা মনে করছি। শিশুদের কীভাবে সহায়তা দিতে হবে সে বিষয়ে সরকার এবং চিকিৎসা সেবা প্রদানকারীদের এখন ভিন্নভাবে চিন্তা করতে হবে। এমনকি আমাদের আর পরীক্ষা করে অটিজম নির্ণয়ের অপেক্ষাও করতে হবে না।
প্রতিবেদনে বলা হয়, যে শিশুদের ওপর এ গবেষণা চালানো হয়েছে, ছয় বছর বয়সে আবারও তাদের পরীক্ষা করে গবেষকরা দেখবেন, থেরাপির প্রভাব তখনও তাদের ওপর কাযর্যকর আছে কি না।
সান নিউজ/এফএআর