নিজস্ব প্রতিবেদক: বছরের পর বছর ঝুলছে মামলা। এসব মামলা ঝুলার মূল কারণ হচ্ছে বিচারকের অভাব। আর এই অভাব পূরণে নেয়া হচ্ছে নতুন ১৮ বিচারক।
একটি বেসরকারি সংস্থার তথ্য অনুযায়ী দেখা গেছে, ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত আপিল বিভাগে বিচারাধীন মামলা ছিলো ১৫ হাজার ২২৫টি। অর্থাৎ গড়ে বিচারপতিদের মাথাপিছু মামলা ৩ হাজার ৪৫টি। আর হাইকোর্ট বিভাগে মামলা রয়েছে ৪ লাখ ৫২ হাজার ৯৬৩টি। হাইকোর্ট বিভাগের ৯২ জন বিচারপতির জন্য গড়ে মাথাপিছু মামলা রয়েছে ৪ হাজার ৯২৩টি।
মামলার জট কমাতে উচ্চ আদালতের দুই বিভাগে প্রায় ১৮ জন বিচারক নিয়োগ দিতে যাচ্ছে সরকার। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালেও একজন সদস্য বিচারক নিয়োগ দেয়া হচ্ছে।
নিয়োগের জন্য ইতোমধ্যে বিচারকদের একটি খসড়া তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। বিচারকের তালিকায় আইনজীবী ছাড়াও কয়েকজন জেলা জজের নাম রয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, উচ্চ আদালতের হাইকোর্ট বিভাগে ১৩ থেকে ১৮ জন এবং আপিল বিভাগের জন্য হাইকোর্ট থেকে ৩ জন বিচারপতি নিয়োগের তালিকা করা হয়েছে।
পাশাপাশি গত ২৪ আগস্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সদস্য বিচারপতি আমির হোসেনের মৃত্যুজনিত কারণে ট্রাইব্যুনালের বিচারিক কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এ কারণে ট্রাইব্যুনালের শূন্য পদ পূরণের জন্য একজন সদস্য বিচারক নিয়োগ দেবে সরকার।
আপিল বিভাগে বর্তমানে পাঁচজন বিচারপতি বিচারিক কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। যেখানে আগে একই সঙ্গে আপিলে দুটি বেঞ্চে বিচারকাজ পরিচালিত হতো, বিচারক সংখ্যা কমে যাওয়ায় সেখানে এখন একটি বেঞ্চে বিচারকাজ চলছে।
এর মধ্যে আগামী ৩০ ডিসেম্বর অবসরে যাবেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। ফলে আপিলে বিচারপতি সংখ্যা কমে হবে চারজন। বিষয়টি মাথায় রেখেই সরকার আপিল বিভাগে বেশ কয়েকজন হাইকোর্টের বিচারককে আপিল বিভাগে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এ ছাড়া চলতি বছরের মধ্যে হাইকোর্ট বিভাগ থেকে বেশ কয়েকজন বিচারক অবসরে যাবেন। যার ফলে বিচারক সংখ্যা কমে আসবে। এতে মামলার জট আরও বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা থেকেই সরকার নতুন বিচারক নিয়োগ দেয়ার কথা ভাবছে।
বিচারক নিয়োগের বিষয়ে জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, বিচারক নিয়োগের বিষয়টি একটি চলমান প্রক্রিয়া। বিচারক নিয়োগ ধারাবাহিকভাবে অব্যাহত থাকবে। আশা করছি, শিগগিরই বিচারক নিয়োগ হবে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সদস্যের শূন্য পদও পূরণ করা হবে।
বিচারক নিয়োগের বিষয়ে সাধারণ আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা চাচ্ছেন দক্ষ, সৎ ও আইন সম্পর্কে অভিজ্ঞ এমন ব্যক্তিদের যেন বিচারক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়।
ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে একজন দক্ষ বিচারকের বিকল্প নাই। সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হয় এমন ব্যক্তিদের বিচারক নিয়োগ দিতে সরকার সচেষ্ট থাকবে বলে বিশ্বাস আইনজীবীদের।
বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনসহ পাঁচজন বিচারপতি বিচারকাজ করছেন। গত এক দশকে এই সময়েই সবচেয়ে কম বিচারপতি নিয়ে কাজ করছে আপিল বিভাগ। আপিল বিভাগে একসময় সর্বোচ্চ ১১ জন বিচারপতিও দায়িত্ব পালন করেছেন।
অন্যদিকে হাইকোর্ট বিভাগেও বিচারক সংকট রয়েছে। বর্তমানে বিভাগের মোট বিচারপতি ৯২ জন। এর মধ্যে ৫৩ বেঞ্চে দায়িত্ব পালন করছেন ৮৮ জন বিচারপতি। বাকি পাঁচজনের মধ্যে দুজন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে কাজ করছেন। অসদাচরণের দায়ে বিচারিক দায়িত্ব থেকে বিরত রাখা হয়েছে বাকি তিন বিচারপতিকে।
সংবিধানের ৯৪ (২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগে বিচারপতি সংখ্যা নির্ধারণ ও নিয়োগ দিয়ে থাকেন।
সংবিধানের ৯৪ (২) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, প্রধান বিচারপতি (যিনি ‘বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি’ নামে অভিহিত হইবেন) এবং প্রত্যেক বিভাগে আসন গ্রহণের জন্য রাষ্ট্রপতি যে সংখ্যক বিচারক নিয়োগের প্রয়োজনবোধ করবেন, সেই সংখ্যক অন্যান্য বিচারক লইয়া সুপ্রিম কোর্ট গঠিত হইবে।’
সংবিধান অনুযায়ী ৬৭ বছর বয়স পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতির পদে থাকা যায়।
সারাদেশে মামলার সংখ্যা বেড়ে এখন অন্তত ৪০ লাখ ছাড়িয়েছে। এই বিপুলসংখ্যক মামলার চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে বিচার বিভাগ। ২০০৭ সালে মামলার এই সংখ্যা ছিল ১৫ লাখ ৭০ হাজার।
প্রতিবছর পুরাতন পরিসংখ্যানের সঙ্গে গড়ে প্রায় ২ লাখ অনিষ্পন্ন মামলা নতুন করে যুক্ত হচ্ছে।
সান নিউজ/এফএআর