জাহিদ রাকিব
এক বছর বয়সী তাহসানের ছোট বল, চা বিক্রেতা ফাতেমার চায়ের কাপ, ৩৭ বছরের যুবকের জুতা, রুবেলের রং তুলি, নরসুন্দর রনজিতের কাঁচি-চিরুনি, মিমের টেবিল চামচ, কারো ওড়না, কারো ট্রাউজার এরকম বহু ব্যবহৃত জিনিস নিয়ে রাজধানীতে জড়ো হয়েছিলেন কিছু লোক। এগুলো ছিলো ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃত ব্যক্তির ব্যবহৃত জিনিস। স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে এগুলো নগর জাদুঘরে রাখার দাবি উঠেছে।
অভিযোগ, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অবহেলায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ওই ব্যক্তিদের মৃত্যু হয়েছে। দক্ষিণ সিটির মেয়ের ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস কি ডেঙ্গুতে মৃত্যু ওই ব্যক্তিদের ব্যবহৃত এই জিনিসগুলোকে নগর জাদুঘরে স্থান দেবেন?
বৃহস্পতিবার (১৬ সেপ্টম্বর) হাইকোর্টের কদম ফোয়ারা সংলগ্ন সড়কের পাশে এক অনুষ্ঠানে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের ব্যবহৃত স্মৃতিচিহ্ন প্রদর্শনী এবং এগুলো নগর জাদুঘরে রাখার দাবি জানানো হয়।
সচেতন নাগরিক সমাজের ব্যানারে এই আয়োজনে জুরাইন এলাকায় ডেঙ্গুতে মৃত স্বজনের ব্যবহৃত স্মৃতিচিহ্ন নিয়ে এসেছিলেন স্বজনরা।
এই আয়োজনে বক্তব্যে মিজানুর রহমান নামে একজন বলেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনের সময় ২০১৯ সালে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ পর্যায়ে চলে যায়। বর্তমান অবস্থাও প্রায় একই। সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন ও বর্তমান মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের মধ্যে তেমন কোনও পার্থক্য নেই। আসল সমস্যা হচ্ছে, তারা জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য নন। তারা মানুষকে মানুষ মনে করেন না। তাই মশা নিয়ে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে।
তিনি বলেন, এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে শুধু জুরাইনে আটজন মারা গেছেন। বর্তমানে হাজারের ওপরে লোক ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছেন। তাদের চিকিৎসা ও মারা যাওয়া ব্যক্তির পরিবারের দায়িত্ব সিটি করপোরেশনকে নিতে হবে। তাদের অবহেলায় আজকে এই বেহাল অবস্থা।
তিনি আরও বলেন, কিছু দিন আগে মেয়র আমাকে বলেন- আমি নাকি জুরাইনের বাসিন্দা না, আমি মিথ্যা তথ্য দিয়ে ঢাকাবাসীকে বিভ্রান্ত করছি। আমি মেয়রকে চ্যালেঞ্জ করে বলি, আপনি জুরাইনে আসেন, দেখেন আমি জুরাইনের বাসিন্দা কি-না। আমাদের ওয়ার্ডে যারা ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন এবং যারা হাসপাতালে ভর্তি আছেন, তাদের সব তথ্য আমার কাছে আছে।
দক্ষিণ সিটির ৫৩ নম্বর ওয়ার্ডে ডেঙ্গু আক্রান্ত নয় বছরের নাতনিকে দেখতে এসে বৃদ্ধ নানা মারা যান বলেও জানান জুরাইনের আলোচিত বাসিন্দা মিজানুর রহমান।
ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া ফাতেমার স্বামী জহিরুল ইসলাম বলেন, আমি এবং আমার স্ত্রী দুইজনেই ডেঙ্গু আক্রান্ত হই। আমি সুস্থ হলেও আমার স্ত্রীকে বাঁচাতে পারিনি। আমার স্ত্রীর মৃত্যুর দায় সিটি করপোরেশনকে নিতে হবে।
ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছিলেন পলাশ কুমার। তিনি বলেন, আমি দীর্ঘদিন হাসপাতালে ছিলাম। আমি একটা সেলুনে কাজ করি। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলে আমার পরিবার ঋণ করে চিকিৎসার খরচ বহন করে। সিটি করপোরেশন একটু দায়িত্ব নিয়ে কাজ করলে আমাদের পরিবারগুলো এমন ভুক্তভোগী হতো না।
তিনি আরও বলেন, আমার বাড়ির আশপাশে সব সময় ময়লা পানি জমে থাকে। আমরা কয়েকবার নিজ উদ্যোগে পরিষ্কার করলেও সিটি করপোরেশন কোন কাজ করে না। তারা মাঝে মাঝে লোক দেখানো ওষুধ দেয়।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকতা সাননিউজকে বলেন, এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে আমরা সর্বোচ্চ আন্তরিকতার সঙ্গে চেষ্টা করে যাচ্ছি। ডেঙ্গু পুরো পৃথিবীতে একবারে নির্মূল করা সম্ভব নয়। সবাই সচেতন থাকলে এটা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। তবে আশার আলো হচ্ছে--আমাদের কার্যকর প্রচেষ্টায় এখন ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব অনেকটা কমে আসছে।
সাননিউজ/এমআর